আসছে আমার পাগলা ঘোড়া।
পাগলা ঘোড়া খে-পে-ছে।
ছড়া কাটতে কাটতেই ঘোড়া বানানো শেষ করল রানা।
অরিগ্যামি ঘোড়া। কাগজের ঘোড়া। ধবধবে সাদা ঘোড়া।
এবার দরকার লাগাম। লাগাম ছাড়া ঘোড়া সামলাবে কী করে?
লাগাম বানানো শুরু করল রানা।
অরিগ্যামি লাগাম।
পাগলা ঘোড়া খেপেছে। চাবুক ছুড়ে মেরেছে।
ছড়া কাটতে কাটতে লাগাম বানানো শেষ।
আর তখনই ছুটতে শুরু করল ঘোড়া।
একেবারে পাগলা ঘোড়ার মতো।
ছুটছে তো ছুটছেই।
ঘোড়ার পেছন-পেছন ছুটল রানা।
খাটের তলায় ঢুকল ঘোড়া। হামাগুড়ি দিয়ে রানাও ঢুকল। যে-ই ঘোড়াটা ধরতে যাবে, অমনি আবার ছুটল। ছুটতে ছুটতে এবার গিয়ে ঢুকল টেবিলের তলায়। রানাও ঢুকল টেবিলের তলায়। অমনি ঘোড়া দিল লাফ। লাফাতে লাফাতে চলে গেল পাশের ঘরে।
ঘোড়াটাকে ধরতেই হবে। ঘোড়ার মুখে লাগাম তো দিতে হবে।
পাশের ঘরটা বসার ঘর। ঘোড়া ঢুকল সোফার তলায়। সোফার তলায় ঢুকে রানা অবাক! ঘোড়া নেই।
আশপাশে তাকাল রানা। আরে! ওই তো। টি-টেবিলের ওপর। যে-ই না টি-টেবিলের কাছে গেল রানা, আবার লাফ দিল ঘোড়া। এক লাফে বসার ঘরে। তারপর গিয়ে ঢুকল পড়ার ঘরে।
হাঁপিয়ে গেল রানা। অরিগ্যামি করে কত কিছু বানিয়েছে ও। ব্যাঙ, হাতি, কুমির। কই, আর কেউ তো একটা লাফও দেয়নি। নিজে নিজে একটু নড়াচড়াও করেনি। অথচ ঘোড়াটা টগবগ টগবগ ছুটছে তো ছুটছেই।
কত শখ করে ঘোড়াটা বানিয়েছিল। ভেবেছিল খুব মজা করে খেলবে। এখন ওই ঘোড়া দিয়ে খেলবে কী, ওটাকে তো ধরাই যাচ্ছে না। ওটাকে ধরতেই হবে।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল রানা। কিছু ছোলা নিল। ও জানে, ছোলা ঘোড়ার খুব প্রিয় খাবার। পড়ার ঘরের মেঝেতে কিছু ছোলা রাখল ও। তারপর আলমারির পেছনে গিয়ে লুকাল।
ওই তো ঘোড়া। গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এল পড়ার ঘর থেকে, এগিয়ে গেল ছোলার কাছে। তবে খেল না। কী করে খাবে? ও তো কাগজের ঘোড়া।
আলমারির পেছন থেকে বেরিয়ে এল রানা। ওকে দেখেই আবার লাফ দিল ঘোড়া। লাফাতে লাফাতে চলে গেল দাদুর ঘরে।
ঘোড়াটাকে ধরতেই হবে। কিন্তু কী করে?
আবার ভাবতে লাগল রানা। ভাবতে ভাবতে মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এল। আচ্ছা একটা ঘোড়সওয়ার বানালে কেমন হয়? কাজে নেমে পড়ল রানা। তবে এবার আর ছড়া কাটল না। খুব মনোযোগ দিয়ে বানাল এক ঘোড়সওয়ার। পালোয়ানের মতো।
ঘোড়সওয়ারের হাতে একটা লাগাম ধরিয়ে দিল রানা। তারপর বলল, ধরো! ধরো! পাগলা ঘোড়াটাকে ধরো। ধরে লাগাম পরাও।
হাতে লাগাম পেয়েই ছুট দিল ঘোড়সওয়ার। চোখের পলকে হাওয়া হয়ে গেল।
কোথায় গেল ঘোড়সওয়ার? এদিক-ওদিক তাকাল রানা।
একটু পরই শোনা গেল খট খট খট খট। খাটের তলা থেকে আসছে শব্দটা। খাটের তলা থেকে বেরিয়ে এল ঘোড়া, মুখে লাগাম। পিঠে ঘোড়সওয়ার। লাগাম টেনে ধরেছে ঘোড়সওয়ার। ঘোড়াটা এখন আর আগের মতো ছটফট করছে না।
রানা বলল, এই তো চাই!
তারপর ঘোড়সওয়ারের মাথায় আলতো করে হাত রাখল। বলল, ঘোড়া সামলানো তোমারই কাজ। আজ থেকে ঘোড়াটা তোমারই।