আজ নতুন বাসায় উঠবে। তাই সকাল সকালই বেড়িয়ে পড়ল তামিম। বড়সড় দুটি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে এল নতুন ঠিকানায়। ছোট্ট বাসাটি নির্জন এলাকায়।

দরজায় ঠকঠক করে কড়া নাড়ল তামিম। কোনো সাড়াশব্দ নেই। আবার কড়া নাড়ল—ঠক ঠক ঠক! হঠাৎ বিকট শব্দে খুলে গেল সদর দরজা। ওপাশে বুড়োমতো এক লোক। মুখে মুচকি হাসি, ‘আপনার অপেক্ষায়ই ছিলাম।’

তামিম বাসায় ঢুকে গেল। দেখেশুনে বুঝতে পারল, এমন ভাঙাচোরা বলেই বোধ হয় ভাড়া এত কম। জরুরি প্রয়োজন ছিল বলেই একেবারে না দেখেই সে বাসাটা নিয়ে নিয়েছে।

বুড়ো বাড়িওয়ালা আবার একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন, ‘আজ তাহলে আসি। কোনো সমস্যা হলে জানাবেন।’

বাড়িওয়ালাকে বিদায় দিয়ে ঘরের মাঝখানে এসে দাঁড়াল তামিম। এক কোণে একটা চৌকি পাতা। ওতেই বসে পড়ল ধপ করে। মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লাগল চারপাশ। দেয়ালের ইটগুলো যেন খুলে পড়ছে। পুরোনো তেলচিটচিটে একপ্রস্থ কাপড়ে ঢাকা একটা চেয়ার বসে আছে অসুস্থ মানুষের মতো। চেয়ারটার পেছনে আয়তাকার কী যেন চকচক করছে।

চেয়ারটা ভীষণ ভারী। সেটাকে সরিয়েই আঁতকে উঠল তামিম। ঠিক নাক বরাবর কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। খানিকটা ধাতস্থ হতেই বুঝল, চকচকে জিনিসটা আদতে একটা কাচের দরজা। আর ওতে নিজের প্রতিফলন দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিল। দরজার কাঠা মোটা কাঠের আর হাতলটা লোহার। দরজাটা খোলার জন্য ঢোক গিলে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল তামিম।

হাতলে হাত দিয়েই ঝটকা মেরে সরিয়ে নিল। হাতলটা ভীষণ গরম! বিচিত্র দরজাটার ওপাশে কী আছে? কৌতূহলটা কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তাই আরও একবার ঢোক গিলে একঝটকায় হাতল ঘোরাল তামিম। ভেতর দিকে ঠেলে দিল পাল্লা।

আর সঙ্গে সঙ্গে আবিষ্কার করল, দরজার ওপাশে প্রকাণ্ড এক ঘর। আর ওই ঘরের ভেতর অসংখ্য কাচের দরজা। দরজার কাচে প্রতিফলিত হচ্ছে তামিমের বিস্মিত মুখ।