জাদুর গাড়ি

আঁকা: নুমান মুহাম্মদ, চতুর্থ শ্রেণি, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

শহরে ছিল এক গাড়ির শোরুম। সেটির ওপর দিয়ে জাদুর পাটিতে চেপে এক জাদুকর উড়ে যাচ্ছিল দূর বহুদূরে। তার হাতে ছিল জাদুর কাঠি। কিন্তু চলতে চলতে ভুল করে ওই জাদুর কাঠির বোতামে লেগে গেল চাপ। ব্যস, জাদুর কাঠি থেকে বের হলো তীক্ষ্ণ আলোর রশ্মি।

জাদুর কাঠির রশ্মি গিয়ে লাগল আবার সেই গাড়ির শোরুমের একটি গাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি নড়েচড়ে উঠল! গাড়িটি কি যন্ত্রমানব হয়ে গেছে। এসব কিন্তু শোরুমের কেউই টের পেল না।

গাড়িটি দেখল, ওর আশপাশে অনেক মানুষ। এত এত মানুষ দেখে গাড়িটার একটু অস্বস্তি লাগল। তাই সে একদম স্থির হয়ে রইল। এভাবে কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলে গাড়ির শোরুমে এল এক মাঝবয়সী লোক। আর কী কপাল, লোকটা ওই বদলে যাওয়া গাড়িটাই কিনে ফেলল! গাড়িটা আরও অস্বস্তি বোধ করতে লাগল।

তবে লোকটার বাসায় গিয়ে দিনগুলো একেবারে খারাপ কাটল না। লোকটা গাড়িটার বেশ যত্ন নিচ্ছিল। ফলে গাড়িটা বদ্ধ গ্যারেজে হাঁপিয়ে উঠলেও অপেক্ষায় থাকত, কখন সকাল হবে আর কখন বাইরে বেরোবে। বাইরে বেরোলেই ওর আনন্দের সীমা নেই। আর গভীর রাতে কেউ যখন আশপাশে থাকে না, তখন সে গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে আশপাশ থেকে হেঁটে আসে। এক রাতে ঝামেলা বাধাল এক কুকুর। গাড়িটাকে হাঁটতে দেখে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে পাড়ার লোকজনের ঘুম ভাঙিয়ে দিল। গাড়িটা তখন কী করে, তড়িঘড়ি করে গ্যারেজে ফিরে এল। কিন্তু কুকুরটা

ওই গ্যারেজের সামনে এসে সমানে গর্জন করতে লাগল।

গাড়ির মালিক বুঝতে পারল, এখানে একটা সমস্যা আছে। কিন্তু সমস্যাটা কী? গ্যারেজ খুলে সব দেখেটেখে গাড়ির মালিক কিছুই বুঝল না। তার শুধু মনে হলো, গাড়িটা একটু গরম। যেন এইমাত্র গাড়িটা চালু ছিল। এভাবে চলতে চলতে দুই সপ্তাহ পর আবারও কুকুরের ঘেউ ঘেউ। আবারও পাড়ার লোকজনের ঘুম ভেঙে গেল। গাড়ির মালিক এবার গ্যারেজে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে দিল। গাড়িটা সব দেখল। সব দেখে ওর মনটাই গেল খারাপ হয়ে। এখন তো চাইলেই বাইরে থেকে হেঁটে আসা যাবে না। কী করা যায়? তখন সে একটা বুদ্ধি বের করল। সিসিটিভি ক্যামেরাটার তার দিল কেটে। তারপর গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এল বাইরে। বদ্ধ গ্যারেজে সারাটা রাত কাটানো ভীষণ কষ্টের। বাইরে এসে খোলা বাতাস পেতেই ওর মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে জাদুর পাটিতে করে উড়ে যাচ্ছিল সেই জাদুকর। আর তখনই জাদুকরের কাঠি থেকে বেরিয়ে এল আলোর রশ্মি। গাড়ির শরীরে আলোর রশ্মি পড়তেই গাড়িটা আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেল।

সকালে উঠে গাড়ির মালিক তো ভীষণ অবাক। সামনে তাকিয়ে দেখে, গাড়িটা তার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে!