
যত প্রাণী আছে পৃথিবীতে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা প্রাণীর নাম যে জিরাফ, তা নিশ্চয়ই তোমরা সবাই জানো। জিরাফ আসলে কতটা লম্বা শুনে অবাক হয়ে যাবে। একটা পূর্ণবয়স্ক জিরাফ ১৭ ফুটের চেয়েও বেশি লম্বা হতে পারে, যেখানে ছয় ফুট লম্বা একজন মানুষকে দেখলেই তোমরা হয়তো ভাবতে থাকো, ‘বাহ, লোকটা তো অনেক লম্বা!’
দুটি জিরাফকে ওদের লম্বা গলা দুটি একসঙ্গে করতে দেখলে তোমরা ভাবতে পারো একটা জিরাফ বুঝি পরম মমতায় আদর করছে বন্ধু জিরাফটাকে। আসল ব্যাপারটা হলো, দুটি জিরাফের মধ্যে শক্তির পরীক্ষায় কে জিততে পারে, সেটা দেখতেই এমন কাণ্ড করে ওরা!
প্রতিটি জিরাফের শরীরের ছোপগুলো আলাদা ধরনের। কখনোই একটা জিরাফের শরীরের ছোপ অন্য কোনো জিরাফের সঙ্গে মিলবে না। বিপদে পড়লে ছোপ ছোপ শরীরটাকে ওরা সহজেই গাছপাতার সঙ্গে লুকিয়ে ফেলতে পারে। ছোট ছোট শিংও আছে ওদের মাথায়।
একটা জিরাফের জিব লম্বায় প্রায় ২০ সেন্টিমিটার হতে পারে। তার মানে তোমার বারো ইঞ্চি মাপের স্কেলটার চেয়েও জিরাফের জিব বেশি লম্বা। এত লম্বা একটা জিব দিয়ে জিরাফ তার নাক আর কানও পরিষ্কার করতে পারে! আর জিব দিয়ে খাবার পেঁচিয়ে মুখে ঢোকাতেও ওস্তাদ ওরা।
মানুষ যখন খাবার খায়, তখন সেটা চলে যায় পাকস্থলীতে। জিরাফের ব্যাপারটাও তাই, তবে একটু অন্যরকম। মানুষের একটা পাকস্থলী থাকলেও জিরাফের আছে চারটি পাকস্থলী। ইয়া লম্বা শরীরটাকে ফিট রাখতে একটু বেশি বেশি খেতেও তো হয়। জিরাফ কী খায় তা কি জানো? ওরা সবচেয়ে বেশি খায় গাছের পাতা। জিরাফ থাকে আফ্রিকাতে। আফ্রিকার বনে-জঙ্গলে গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে ওরা। লম্বা গলা থাকায় খুব সহজেই গাছের পাতা খেয়ে নিতে পারে ওরা। তবে লম্বা গলার কারণে পানি পান করার সময় একটু অসুবিধাতেও পড়তে হয়। সামনের পা দুটিকে ফাঁকা করে বড় অদ্ভুত এক ভঙ্গিতে পানির উৎসের দিকে ঝুঁকে পানি পান করে ওরা। এই সময়টাতেই শত্রুরা আক্রমণ করার সুযোগ পায় ওদের। এ সময় কুমির আক্রমণ করতে পারে। পূর্ণবয়স্ক একটা জিরাফের সারা দিনে মাত্র একবার পানি পান করলেই চলে।
সাধারণত এই বিশালদেহীদের আক্রমণ করার সাহস খুব বেশি প্রাণীর নেই। বনের রাজা সিংহমশাই তা-ও যা একটু সাহস করে আক্রমণ করতে পারে। তবে লম্বুরাই বা কম যায় কিসে? খুরের আঘাতে কোন দিকে যে সিংহটাকে ছিটকে ফেলে দেবে, তা সিংহ বাবাজিও জানে না। আর ওদের খুরের আঘাত এতটাই শক্তিশালী যে আঘাতে সিংহের মাথাটাই আলাদা হয়ে যেতে পারে শরীর থেকে।
লম্বা পাগুলো একবার ফেললেই প্রায় ১৫ ফুট দূরত্ব চলে যেতে পারে ওরা। খুব ধীরে হাঁটলেও একটা জিরাফের গতি হয় ঘণ্টায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার। আর দ্রুত ছুটতে চাইলে ওরা ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। একটা জিরাফ ১৪০০ কেজি পর্যন্ত ভারও বহন করতে পারে।
মজার ব্যাপার হলো, জিরাফের গলা মানুষের গলার চেয়ে লম্বা হলেও একটা জিরাফের গলায় ঠিক ততগুলো হাড়ই আছে, যতগুলো হাড় একজন মানুষের গলায় আছে। জিরাফের লম্বা গলাটাতে ছোট আকারের কিছু পাখি বসে থাকতে দেখা যায়। জিরাফের গায়ের লোমের ফাঁকে থাকা ছোট্ট পোকাগুলোকে খেয়ে নেয় ওরা। পোকা খেয়ে পাখিগুলোও বেঁচে থাকে, আবার জিরাফও পোকাদের হাত থেকে বেঁচে যায়। কী সুন্দর বন্ধুত্ব লম্বা জিরাফ আর ছোট পাখিদের মধ্যে, তাই না?
রাফিয়া আলম, সূত্র: লিস্টভারস ডট কম