তীব্র গতির চিতা

হরিণের দিকে ছুটে আসছে একটা চিতা। ব্যাপারটা বুঝে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে না করতেই চিতা ঝাঁপিয়ে পড়ল হরিণটার ওপর। সুন্দর হরিণটার গলায় বসিয়ে দিল এক কামড়। দেখতে দেখতে চোখ বুজে এল হরিণটার।
হরিণের নিস্তেজ দেহটাকে টানতে টানতে একটা নিরাপদ জায়গার দিকে নিয়ে যাচ্ছে চিতা। ভেবে অবাক হতে পারো, এই তীব্র গতির শিকারি কার ভয়ে লুকিয়ে যাচ্ছে হরিণটাকে নিয়ে? ব্যাপারটা হলো, সিংহ বা কোনো বড় বাঘ এসে কেড়ে নিতে পারে ওর খাবার। সে জন্যই এই লুকোছাপা। অন্যান্য বাঘের চেয়ে আকারে একটু ছোট হয় চিতা। আর চিতা বাঘ থাবা দিয়ে খাবারটাকে শক্তভাবে আটকে রাখতেও পারে না।
কী হবে যদি হঠাৎ করে এসেই পড়ে সিংহ বা বড় কোনো বাঘ? লড়াই চলবে দুই যোদ্ধার? নিজের শিকারটাকে আঁকড়ে ধরার শেষ চেষ্টা করবে কি চিতা? না। চিতা নিজেই জানে, শক্তির লড়াইয়ে সে হেরে যাবে। আরেকটা লড়াই যেহেতু জমবেই না, অন্যের কাছে নিজের শিকারটাকে ছেড়ে দেবে ও।
স্থলে বাস করে, এমন প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ছুটতে পারে চিতা। গতিবেগটা কত? ঘণ্টায় ১১৩ কিলোমিটার। এমনকি একটা চিতাকে ছুটতে দেখলে তুমি ভাবতে পারো ও বুঝি উড়ছে! তোমরা হয়তো ভাবছ, শিকার ধরার জন্য বহুদূর থেকে ছুটে আসে চিতা। আসল ব্যাপারটা একদমই সে রকম নয়। তীব্র গতিতে অনেকটা দূর থেকে ছুটে আসতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠে ও। তবে এটা ঠিক, ওরা শিকারের খোঁজ পায় অনেক দূর থেকেই। দিনের আলোয় ওরা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত দেখতে পায়।
দূর থেকে শিকারকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসে চিতা। শিকারের বেশ কাছে চলে আসার পর ছুটতে শুরু করে। গতির কাছে হেরে যায় ওর শিকার। অবশ্য রাতের বেলা শিকার করে না ওরা, রাতে যে তেমন ভালো দেখতেই পায় না।
দিনে শিকার করার সময় কিছু বাড়তি সুবিধা পায় ক্ষিপ্রগতির প্রাণীটা। চোখ থেকে শুরু করে মুখ পর্যন্ত একটা কালো লম্বা দাগ থাকে ওদের। দুটি চোখ থেকেই এমন লম্বা দাগ চলে গেছে চিতার মুখ পর্যন্ত। এই দাগ দেখেই ওদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করতে পারবে তোমরা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই কালো দাগ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে দেয় বলে শিকারের দিকে ভালোমতো তাকাতে পারে ওরা।
চিতার শরীরটা অন্য বাঘেদের চেয়ে একটু ছোটখাটো। ওজনটাও কম, মাত্র ৪৫-৬০ কেজি। দ্রুত ছোটার জন্য ওদের মাংসপেশিগুলো বেশ উপযোগী। পায়ের থাবাও একটু বেশিই শক্ত ওদের। নাকের ফুটো দুটো বেশ বড়, ফুসফুসও আকারে বড়, এসবের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ড আর রক্তনালিও বেশ শক্তিশালী হওয়ার কারণে জোরে ছোটার সময় ওদের মাংসপেশি বেশ ভালোভাবেই অক্সিজেন পায়। বড় পা, তাই ছুটতে পারে দ্রুত। আর তোমরা জেনে অবাক হবে, জোরে ছোটার সময় নিজের লেজটার সাহায্যে ভারসাম্য রক্ষা করে ওরা। রাডার বা দিকনির্ধারণী যন্ত্রের মতো কাজ করে লেজটা। তাই এর সাহায্য নিয়েই ওরা ভারসাম্য রাখতে পারে।
একটা চিতার গায়ে নাকি প্রায় দুই থেকে তিন হাজার ছোপ থাকে। গায়ের ছোপগুলোর কারণে সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে ও। চিতার ছানাদের ঘাড় থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত বড় বড় লোম থাকে। একে বলা হয় ম্যান্টেল। এটির কারণে ছানাগুলো আরও সহজে লুকিয়ে থাকতে পারে ঘাসের আড়ালে। সিংহ আর হায়েনারাই এই ছানাগুলোর শত্রু।
চিতারা খুব জোরে ছুটতে পারলেও গর্জন করতে পারে না। বরং বিড়ালের মতো গরগর করে! গাছে উঠতেও পারে না ওরা। তিন-চার দিনে মাত্র একবার পানি পান করলেই চলে ওদের।
এখন ওদের পাওয়া যায় শুধু আফ্রিকা আর ইরানের কিছু এলাকায়। একসময় এশিয়ায় অনেক চিতা পাওয়া যেত। তবে দিন দিন আবাসস্থল হারাচ্ছে এই প্রাণীরা। আবাসস্থল হারিয়ে এশিয়ায় তো বটেই, পুরো পৃথিবীতেই এই দৌড়বিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
রাফিয়া আলম
সূত্র: সায়েন্সকিডস