ভূতের গল্প শুনতে গিয়ে

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

শীতের ছুটিতে ভাইবোনেরা বেড়াতে গেলাম নানাবাড়ি। সেখানে থাকেন মামা-মামি আর আমাদের মামাতো ভাই সাবিত। ভালোমন্দ খেয়েদেয়ে বেশ আনন্দে কাটতে লাগল দিন। পড়াশোনা নেই, বকাঝকা নেই, যাকে বলে একেবারে স্বাধীন জীবন!

এক রাতে বাড়ির উঠানে আমরা সবাই গল্প করছিলাম। আকাশে চাঁদ ছিল না, চারপাশে ঘুটঘুটে আঁধার। আড্ডার মধ্যমণি হয়ে জ্বলছিল একটা মোমবাতি। তাতে পরিবেশটা হয়ে উঠেছিল আরও ছমছমে।

হঠাৎ মেজ মামা বলে উঠল, ‘হাউ মাউ খাউ ভূতের গন্ধ পাউ!’

সঙ্গে সঙ্গে ছোটরা সবাই হেসে কুটিকুটি।

মামা মানুষের গন্ধ পাউ না বলে ভূতের গন্ধ পাউ বলেছে, ব্যাপারটা মজার। এমন সময় আমার ছোট ভাই তাজোয়ার বলে উঠল, ‘গল্প শুনব, গল্প শুনব!’

তাজোয়ারের সঙ্গে আমরা সব ভাইবোন গলা মেলালাম, ‘হ্যাঁ, মামা, গল্প শোনাও! গল্প শোনাও!’

‘কী গল্প শুনবি?’ আরাম করে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলেন মেজ মামা।

বড় মামা বললেন, ‘আচ্ছা, ভূতের গল্পই নাহয় শোনা যাক।’

অমাবস্যা রাত। এমন ঘুটঘুটে আঁধারে ভূতের গল্প? রাজি হলাম সবাই। নানাবাড়ির কাছেই একটা ছোট বন। বনের পেছনে একটা বাড়ি। কেউ থাকে না সে বাড়িতে। ভয়ানক সব গল্প চালু আছে ওই বাড়ি ঘিরে।

যাহোক, মামা একটা গল্প বলতে শুরু করলেন। গল্প শুরু হতেই সবাই ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসলাম। হাতে-পায়ে কাঁটা দিতে লাগল রীতিমতো! পারলে একে-অন্যে জড়াজড়ি করে বসে থাকি!

গল্পের মাঝে হঠাৎ খুব জোরে বাতাস বইতে লাগল। মোমবাতিও গেল নিভে! সবাই তো ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছি! হঠাৎ ঝোপের ভেতর থেকে এল অদ্ভুত এক শব্দ। ছোট বোন তো কেঁদেই ফেলল, ‘ভূত! ভূত!’

ততক্ষণে মামা মুঠোফোনের টর্চ জ্বালিয়েছেন। টর্চের আলো ঝোপের ওদিকটায় পড়তেই সবাই চিৎকার করে উঠলাম, ‘ভূত! ভূত!’

ঝোপের ভেতরে কী যেন জ্বলছে! আমার নিজের অবস্থা চূড়ান্ত রকমের খারাপ। দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার দশা। সবাই একটা জায়গায় জড়ো হয়েছি আমরা। ঝোপের ভেতর থেকে ওই আলোটা আস্তেধীরে কাছে আসছে! খুব কাছে আসছে! একসময় আলোটা বেরিয়ে এল এক লাফে! শব্দ পেলাম ‘মিউ!’