মাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিনটি কবিতা

আজ ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০তম জন্মবার্ষিকী। আর আগামীকাল মা দিবস। রবীন্দ্রনাথ মা নিয়ে দারুণ সব কবিতা লিখে গেছেন। তাঁকে স্মরণ করার পাশাপাশি পৃথিবীর সব মায়ের জন্য জানাই অসীম ভালোবাসা

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

অন্য মা

আমার মা না হয়ে তুমি

আর কারো মা হলে

ভাবছ তোমায় চিনতেম না,

যেতেম না ঐ কোলে?

মজা আরো হত ভারি,

দুই জায়গায় থাকত বাড়ি,

আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে,

তুমি পারের গাঁয়ে।

এইখানেতে দিনের বেলা

যা-কিছু সব হত খেলা

দিন ফুরোলেই তোমার কাছে

পেরিয়ে যেতেম নায়ে।

হঠাৎ এসে পিছন দিকে

আমি বলতেম, ‘বল্ দেখি কে?’

তুমি ভাবতে, চেনার মতো,

চিনি নে তো তবু।

তখন কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে

আমি বলতেম গলা ধরে—

‘আমায় তোমার চিনতে হবেই,

আমি তোমার অবু।’

মাতৃবৎসল

মেঘের মধ্যে মা গো, যারা থাকে

তারা আমায় ডাকে, আমায় ডাকে।

বলে, ‘আমরা কেবল করি খেলা,

সকাল থেকে দুপুর সন্ধেবেলা।

সোনার খেলা খেলি আমরা ভোরে,

রুপোর খেলা খেলি চাঁদকে ধরে।’

আমি বলি, ‘যাব কেমন করে।’

তারা বলে, ‘এসো মাঠের শেষে।

সেইখানেতে দাঁড়াবে হাত তুলে,

আমরা তোমায় নেব মেঘের দেশে।’

আমি বলি, ‘মা যে আমার ঘরে

বসে আছে চেয়ে আমার তরে,

তারে ছেড়ে থাকব কেমন করে।’

শুনে তারা হেসে যায় মা, ভেসে।

তার চেয়ে মা আমি হব মেঘ;

তুমি যেন হবে আমার চাঁদ—

দু হাত দিয়ে ফেলব তোমায় ঢেকে,

আকাশ হবে এই আমাদের ছাদ।

লুকোচুরি

আমি যদি দুষ্টুমি ক’রে

চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি,

ভোরের বেলা মা গো, ডালের ’পরে

কচি পাতায় করি লুটোপুটি,

তবে তুমি আমার কাছে হারো,

তখন কি মা চিনতে আমায় পারো।

তুমি ডাকো, ‘খোকা কোথায় ওরে।’

আমি শুধু হাসি চুপটি করে।

যখন তুমি থাকবে যে কাজ নিয়ে

সবই আমি দেখব নয়ন মেলে।

স্নানটি করে চাঁপার তলা দিয়ে

আসবে তুমি পিঠেতে চুল ফেলে;

এখান দিয়ে পুজোর ঘরে যাবে,

দূরের থেকে ফুলের গন্ধ পাবে—

তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে

তোমার খোকার গায়ের গন্ধ আসে।

সন্ধেবেলায় প্রদীপখানি জ্বেলে

যখন তুমি যাবে গোয়ালঘরে

তখন আমি ফুলের খেলা খেলে

টুপ করে মা, পড়ব ভুঁয়ে ঝরে।

আবার আমি তোমার খোকা হব,

‘গল্প বলো’ তোমায় গিয়ে কব।

তুমি বলবে, ‘দুষ্টু, ছিলি কোথা।’

আমি বলব, ‘বলব না সে কথা।’

(‘অন্য মা’ শিশু ভোলানাথ বই থেকে, ‘মাতৃবৎসল’ ও ‘লুকোচুরি’ শিশু বই থেকে নেওয়া। তিনটি কবিতাই সংক্ষেপিত।)