তোমার কত বুদ্ধি জানো?

.
.

এত বড় মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল আর বিস্ময়কর বস্তুটির মালিক যে তুমি, সেটা কি জানো? বলছি এমন একটা জিনিসের কথা, যেটা চোখের পলকেই করে ফেলতে পারে জটিল সব হিসাব। তুমি যে টিচারের কাছে অঙ্ক শেখ, বাবার বকা খেয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করো—এর সবই ওর ‘নির্দেশ’মতোই হয়। ও-ই নিয়ন্ত্রণ করে তোমার সবকিছু। এতক্ষণে নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছ, কী নিয়ে কথা হচ্ছে? যারা এখনো বোঝোনি, আরও একটু মাথা খাটাও। এই যে! মাথা খাটানোর কথা শুনেই কিন্তু সেই ‘বস্তু’টা মহানন্দে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
হুম, বলছি তোমার মস্তিষ্কের কথা। দেখলে তো, তোমার কত বুদ্ধি আর ক্ষমতা!
তুমিই একটা সুপার কম্পিউটার!
তোমার মস্তিষ্কের ক্ষমতা কিন্তু একটা সুপার কম্পিউটারের চেয়েও অনেক অনেক বেশি। বিশ্বাস হচ্ছে না? ধরো, তোমার প্রিয় বিড়ালছানাটি হঠাৎ গরম কিছু একটার দিকে পা বাড়াল। তুমি নিশ্চয়ই চট করে ওকে ধরে ফেলবে। ওকে যে বাঁচাতে হবে, সেটা ভাবতে তোমার কিন্তু একটুও সময় লাগবে না। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে তুমি! পৃথিবীর কোনো কম্পিউটারই এত দ্রুত হিসাব করতে পারে না।
নিউরনে জ্বলে টিউব লাইট!
আমরা সবাই অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দিয়ে তৈরি। কোষ হলো জীবের গঠন ও কাঠামোর একক। খুব শক্তিশালী অতি আণুবীক্ষণিক যন্ত্র দিয়ে কোষ দেখা যায়। তোমার মস্তিষ্কে এ রকম কোষের সংখ্যা প্রায় ১০০ বিলিয়ন, মানে ১০ হাজার কোটিরও বেশি। যদি কেউ গুনতে শুরু করে তাহলে প্রায় তিন হাজার বছর পেরিয়ে যাবে!

একজন বড় মানুষের মস্তিষ্কের ওজন মোটামুটি ১ দশমিক ৩ কেজি। আর মস্তিষ্ক যে কোষগুলো দিয়ে তৈরি, তাকে বলে নিউরন। অগণিত নিউরনের ছোট্ট পথ ধরে একধরনের সংকেত চলতে থাকে বলেই তুমি হাসো, ভাবো এমনকি স্বপ্নও দেখ। মস্তিষ্কের এই কাজ কখনো থামে না। চলতেই থাকে কোনো চার্জার ছাড়াই। পৃথিবীর সবগুলো ফোন যে পরিমাণ মেসেজ পাঠাতে পারবে, তোমার নিউরনগুলো কিন্তু তার চেয়েও বেশি মেসেজ পাঠায়। সংকেত পাঠানোর সময় মস্তিষ্কে অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎও উৎপন্ন হয়। আর সবগুলো নিউরন মিলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, তা দিয়ে ছোটখাটো একটা টিউব লাইট জ্বালানো সম্ভব। কী অদ্ভুত, তা-ই না?

নতুন স্মৃতি গঠন
সাইকেলে চড়া প্রথমে সবার কাছেই অসম্ভব মনে হয়। কিন্তু যখন তুমি বারবার অনুশীলন করতে থাকো, তখন অনবরত তোমার মস্তিষ্ক সাইকেলে চড়ার কৌশলগুলো নিউরনগুলোর কাছে পাঠাতে থাকে। এমনকি প্রতিবার শেখার সময় তোমার মস্তিষ্কের গঠনই বদলে যায়। আর এভাবেই তোমার নতুন নতুন ভাবনা ও স্মৃতি তৈরি হয়।

.
.

নিয়মিত ব্যায়াম বুদ্ধি বাড়ায়
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ব্যায়াম করলে তোমার শরীরে বিশেষ একধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন হয়, যা তোমার শেখার ইচ্ছাকে বাড়িয়ে দেয়। কঠিন কঠিন অঙ্ক করতে মন বসছে না? একটু ব্যায়াম করে আবার বসো। দেখবে নিমেষেই কাজে মন বসবে।
দেখলে তো, তোমার কত্ত বুদ্ধি! আর এই জন্যই বলি, দেখো, একদিন তুমি বিশ্বজয় করবে!
ট্রেনের চেয়ে বেশি গতি!
একটা ট্রেন যদি ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি গতিতে যায়, কেমন হয়? তোমার নিউরনগুলো মস্তিষ্ককে তার চেয়েও বেশি গতিতে তথ্য পৌঁছে দেয়। ধরো, তোমার পায়ে একটা মৌমাছি এসে বসল। তুমি তো সঙ্গে সঙ্গেই ওটাকে তাড়িয়ে দেবে, তা-ই না? অথচ এইটুকু সময়ের মধ্যেই তোমার সেন্সরি নিউরন স্পাইনাল কর্ড আর মস্তিষ্ককে মৌমাছি বসার খবরটি পাঠিয়ে দিয়েছে। আর ওদিকে খবর পাওয়া মাত্র মস্তিষ্ক মোটর নিউরনের সাহায্যে ৩২০ কিলোমিটার বেগে ওটাকে তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিয়েছে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি কিডস
গ্রন্থনা: এ এস এম রিয়াদ আরিফ