ধাপ্পা ভূত

আজ ছাপা হলো ‘এসো গল্প লিখি ২০২২’ প্রতিযোগিতার দুই বিভাগের তৃতীয় স্থানজয়ী দুটি গল্প। অভিনন্দন, নাজিফা ও মুমতাহিনা! তোমরা পাচ্ছ ৩ হাজার টাকার করে বই। আগামী সংখ্যায় ছাপা হবে দ্বিতীয় স্থানজয়ী গল্প দুটি।

আমার নাম ধাপ্পা।

আমি মানুষ ছিলাম। দুদিন আগে মনুষ্যজাতি ত্যাগ করে এসেছি। মানে, আমি মারা গেছি। আজ এসেছি ভূত হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। ভূত হওয়া অত সহজ কম্ম নয়। সবার ইচ্ছা থাকে না, আবার ইচ্ছা থাকলে সবাই হতেও পারে না। কাজেই মরলাম আর ভূত হয়ে গেলাম—ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। এর জন্য দরকার ইচ্ছা, প্রতিভা আর সাধনা।

তবে মানুষ দিন দিন কেমন যেন নীরস হয়ে যাচ্ছে! আজকাল আর ভূতটুত ভয় পায় না। তাই এটা আমার জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। ভূত হয়ে মানুষকে ভয় দেখানোর সময় যদি ফেল মারি, তাহলে পুরো ভূতজাতির সম্মান ধুলায় গড়াগড়ি যাবে। তাই এখন আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে। পাস করতে পারলেই শুধু ভূতসমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারব!

আমি এখন ছোট একটা রুমে বসে আছি। আমরা মোট নয়জন ভূত হওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দেব। সিরিয়ালের একদম শুরুতে ছিলাম আমি। সিরিয়াল অনুযায়ী আমারই সবার প্রথম ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু ইতিমধ্যে আমার আগে তিনজন চলে গেছে। কারণ, তাদের নাম ডাকা হয়েছে। অথচ আমার ডাক এখনো পড়েনি! সিরিয়াল যখন আছেই, নাম ডাকার কী প্রয়োজন, বুঝলাম না!

অপেক্ষা করতে করতে একসময় মনে হচ্ছিল, আমার ডাক বুঝি আসবেই না। কিন্তু একসময় পিয়ন ভূতটা আমাকে ডাকল। পাশের ঘরে চলে গেলাম।

‘ধাঁপ্পা, তুঁমি এঁখন আঁমাদের ভঁয়ানক আঁওয়াজ বেঁর কঁরে শোঁনাও তোঁমার গঁলা থেঁকে,’ বললেন পরীক্ষকদের একজন মিসেস জেলি।

গলাটা যতটা ভারী করা যায় করলাম। তারপর গলা থেকে বের করলাম বিকট আওয়াজ। শুনে নিজেরই পিলে চমকে গেল।

কিন্তু সবচেয়ে প্রবীণ ভূত মিস্টার পারকার মুখটা ভোঁতা করে বললেন, ‘নোঁ, নোঁ! খুঁবই বাঁজে! ভীঁষণ বাঁজে! গ্রেঁড সিঁ।’

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

মিসেস জেলি বললেন, ‘ওঁকে, ওঁকে। এঁখন আঁমাদের তুঁমি ভঁয় দেঁখাও।’

চোখের ইশারায় জানালার ওপাশের কদমগাছটার ডাল ঝাঁকালাম, পাতা নাড়ালাম। হঠাৎ করে বৃষ্টি নামালাম। ঘরের ভেতরে টেবিলের ওপরের জগটা উল্টে ফেলে দিলাম। টেলিফোনটাকে নাচালাম। আমার ইশারায় দেয়াল ফেটে রক্ত বেরোল। কিন্তু কারও মুখে ভয়ের ছাপ পড়ল না। হতাশ হয়ে চুপ করে গেলাম।

তবে মিসেস জেলিকে একটু সদয় মনে হলো, ‘গুঁড প্রঁগ্রেস! ভাঁলো ছিঁল।’

মিস্টার পারকারও মাথা দোলালেন, ‘হুঁমম। নাঁইস। ভাঁলো লেঁগেছে। গ্রেঁড এঁ।’

কেউই ভয় পেল না, তারপরও এ গ্রেড পেলাম কেন? পরে জানতে পেরেছিলাম, ভূতেরা ভূতদের ভয় দেখাতে পারে না। তাই মিসেস জেলি ও মিস্টার পারকারও আমার কাণ্ডকীর্তিতে ভয় পাননি। তারা কেবল যাচাই করছিলেন, আমার প্রতিভায় মানুষ ভয় পাবে কি না।

‘এঁখন তুঁমি আঁমাদের আঁরও কিঁছু প্রঁশ্নের জবাব দাও’ মিসেস জেলি বললেন। ‘জঁবাব পঁছন্দ হঁলেই পঁরের ধাঁপে যাঁবে। ক্লিঁয়ার?’

‘জি, ক্লিয়ার...’

‘তুঁমি ভঁয় দেঁখাতে আঁগ্রহী?’

‘জি।’

‘বেঁচে থাঁকতে কঁখনো ভঁয় দেঁখিয়েছ?’

‘জি।’

‘তুঁমি ভঁয় দেঁখাতে পঁছন্দ কঁরো?’

‘জি।’

‘তুঁমি দেঁখি জিঁ জিঁ কঁরেই চঁলেছ! ওঁকে, শেঁষ প্রঁশ্ন। তোঁমার কিঁ মঁনে হঁয় যেঁ তুঁমি ভূঁত হঁতে পাঁরবে?’

‘জি, অবশ্যই!’

‘মঁনে হঁওয়ার কাঁরণ?’

‘আপনি বলেছিলেন, এটাই শেষ প্রশ্ন!’

‘হুঁমম! ভেঁরি ইঁন্টেলিজেন্ট। গ্রেঁড এঁ প্লাঁস,’ মিস্টার পারকার বললেন। ‘ভাঁলো কঁরেছ, ধাঁপ্পা!’

মিসেস জেলি পাশের ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওঁই ঘঁরে চলে যাঁও।’

পাশের ঘরে গেলে একটা লম্বু ভূত আমার উচ্চতা, রক্তচাপ, ওজন, চোখের রং, জিবের রং, কানের মাপ, হাতের নখ, দাঁতের অবস্থা পরখ করে বলল, ‘অঁভিনন্দন! আঁজ থেঁকে আঁপনি ভূঁত হঁয়ে গেঁলেন। এঁই নিঁন আঁপনার আঁইডি কাঁর্ড।’

আইডি কার্ডটা হাতে নিলাম। আইডি কার্ডে আমার নামের জায়গায় লেখা—ধাপ্পা ভূত! আনন্দে লম্বুটাকে ল্যাং মারতে ইচ্ছা করছিল, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে হ্যান্ডশেক করে বললাম, ‘আঁপনাকে ধঁন্যবাদ!’