
এত্ত বড় বড় চোখওয়ালা পাখিটাকে দেখে হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যেতে পারে কেউ। তবে দেখতে কিন্তু পাখিটা ভারি সুন্দর। বলছিলাম নিঝুম রাতের শিকারি পাখি প্যাঁচার কথা। বিশাল পাখা দুটো মেলে উড়ে আসে বলে বারবার ডানা ঝাপটাতে হয় না ওদের। তাই নিঃশব্দেই শিকার ধরে নিতে পারে প্যাঁচা।
চোখগুলো চমৎকার, তবে কাছের জিনিস ভালোভাবে দেখতে পায় না প্যাঁচা। ভাবছো তো, তাহলে কেমন করে শিকার করে ওরা? আসলে ওরা বেশ ভালো শুনতে পায়। ওদের শোনার ক্ষমতা এতটাই ভালো যে, একটি শব্দকে ওরা দুই কানে আলাদা শুনতে পায়। আর এই আলাদা শোনার মাধ্যমেই ওরা বুঝতে পারে, শব্দের উৎসটা ঠিক কত দূরে। এভাবে হিসাব-নিকাশ করেই ওরা নিখুঁতভাবে খুঁজে পায় শিকারকে। ছোট পাখি, পোকামাকড় বা অন্য প্রাণীদের শিকার করে প্যাঁচা। আর শিকারকে বেশ পোক্তভাবে ধরতে সক্ষম ওদের আঙুলগুলো।
মানুষ যে মাথা না ঘুরিয়ে শুধু চোখ ঘুরিয়েই আশপাশে খানিকটা দেখতে পায়, তা কি তোমরা কখনো খেয়াল করেছ? প্যাঁচা কিন্তু এভাবে চোখ ঘোরাতে পারে না। আশপাশে দেখতে হলে ওদের মাথাটাকেই ঘোরাতে হয়। জেনে অবাক হতে পারো, একটা প্যাঁচা নাকি ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরাতে পারে ওর মাথাটাকে। একটু বুঝিয়ে বলি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তোমার মাথার পেছনটা যেখানে থাকে, শরীরটা স্থির রেখে পুরো মাথাটাকে ঘুরিয়ে সেই জায়গাটা পর্যন্ত আনতে হলে ১৮০ ডিগ্রি কোণে মাথাটাকে ঘোরাতে হবে তোমাকে। সেটা করাই তো আমাদের কারও পক্ষে সম্ভব নয়। দাঁড়াও, দাঁড়াও! জোর করে মাথাটাকে এতটা ঘোরাতে গিয়ে ব্যথা পেয়ে বসো না যেন! প্যাঁচারা এতটা মাথা ঘোরাতে গিয়ে কিন্তু ব্যথা পায় না মোটেই। এ সময় মাথার রক্তসঞ্চালনে একটুও সমস্যা হয় না ওদের।
দিনের বেলা একটা প্যাঁচাকে কোনো গাছের কোটরে বসে থাকতে দেখতে পারো তুমি। এই সময়টাতে ওর চোখটা আধখোলা রাখতে দেখে ও ঝিমুচ্ছে ভেবে ভুল করো না যেন। আসলে দিনের আলোয় স্বাভাবিকভাবেই চোখের মধ্যখানটা যতটা সংকুচিত হওয়ার কথা, প্যাঁচাদের ততটা হয় না। তাই চোখ দুটোকে অমন আধখোলা রাখে ওরা।
পুরো পৃথিবীতে প্রায় ২০০ প্রজাতির প্যাঁচা রয়েছে। অনেক সময় গাছপাতার সঙ্গে পালকের রং মিশে যাওয়ার ফলে ওদের খুঁজেও পাবে না তুমি। ওদের চোখে নাকি তিনটি পাতা থাকে। একটা চোখ পিটপিট করার জন্য, আরেকটা ঘুমানোর জন্য, অন্যটা চোখকে পরিষ্কার রাখার জন্য! সুরেলা পাখিদের মতো কিচিরমিচির না করলেও প্যাঁচাদের নানান রকম আওয়াজ করতে শোনা যায়।
শিকার করে খেলে কী হবে, শিকারের পালক বা হাড় সইবে না প্যাঁচাদের পেটে। তবে খাবারের সময় এগুলো বেছে তো আর খেতে পারে না, তাই খাবার পর একসময় এ ধরনের অংশগুলো উগরে ফেলে ওরা। দাঁত নেই ওদের। একটু বড় আকারের শিকারগুলোকে তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে নেয় ওরা।
সূত্র: বার্ডিং ডট কম