পল্টুর ভুল

আঁকা: সুমেহরা রুশদা, প্রি–কেজি, অ্যাভেরুয়িস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা

রতন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ বলা-কওয়া নেই, একদল ছেলে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে তাড়া করল। উপায় না দেখে রতন দিল দৌড়। দৌড়ে সে যখন অনেকটা হাঁপিয়ে গেছে, তখন বাধ্য হয়ে থামল। নাহ্, পেছনে দুষ্টু ছেলেদের দলটা আর নেই। রতনের দৌড় দেখে ওদের কী হাসি! যেন খুব মজা হয়েছে। মানুষের মতো অদ্ভুত প্রাণী আর হয় না। অন্যকে কষ্ট দিয়ে মজা পায় কীভাবে এরা? ভাবতে থাকে রতন।

এমন সময় একটা আজব চিড়িয়া দেখতে পেল ও। চিড়িয়াটা কি মোরগ? না বড় পাখি? ডানায় নানা রঙের মিশেল। ইয়া বড় লেজের মধ্যেও কত রং ঝিকমিক করছে! মাথায় ঝুঁটি, আর চোখে কী বিষণ্নতা! রতন গলা খাঁকারি দেয়, ‘তোমাকে তো আগে কখনো দেখিনি। তুমি কে?’

কথা শুনে রঙিন চিড়িয়াটা মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। কোনো উত্তর না পেয়ে রতন নিজের পরিচয় দেয়, ‘নাদুসনুদুস দেখতে বলে আমাকে ফার্মের মুরগি ভেবো না। খাঁটি দেশি মুরগি আমি। যূঁথিদের বাসায় থাকি, নাম রতন।’

দেশি মুরগি বলে রতন একটু ভাব নেয়। রঙিন চিড়িয়াটা দুঃখজড়ানো কণ্ঠে বলে, ‘আমার কথা আর কী বলব। আমি পল্টু, এ পাড়াতেই থাকি।’

‘কই, আগে তো কখনো দেখিনি!’ রতনের কথায় পল্টু জবাব দেয় না। ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। রতন বিব্রত হয়ে ওকে থামিয়ে দেয়, ‘ঠিক আছে। তোমাকে কিছু বলতে হবে না। তা খাওয়াদাওয়া কিছু করেছ?’ পল্টু ছলছল চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। রতন বলে, ‘সমস্যা নেই। আমি ব্যবস্থা করে দেব। তবে একটা কথা, সাবধান! এ পাড়ায় একদল দুষ্টু ছেলে আছে। সারাক্ষণ পশু–পাখিদের জ্বালিয়ে মারে। পাখির বাসা নষ্ট করে ডিম ভেঙে দেয়, মুরগি দেখলে তাড়া করে। কুকুর ভাইদের গায়ে গরম চা ঢেলে দেয়। এ মা! তুমি কাঁদছ দেখি! আচ্ছা, তুমি ভেবো না এসব নিয়ে। চলো, তোমার খাবারের ব্যবস্থা করি।’

এবার পল্টু কথা বলে, ‘তুমি আমাকে চেনো না জানো না, তবু আমার জন্য এত কিছু করবে?’ রতন হাসে। এ আর এমন কী?

পল্টু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘তুমি যে দুষ্টু ছেলেদের কথা বললে, আমি তাদেরই একজন। আমি নিছক মজা ভেবে যা করতাম, তাতে যে এত কষ্ট পায় পশু–পাখিরা, জানতাম না। আর সে জন্যই আমি মানুষ থেকে এমন হয়ে গেছি।’ গলা ধরে আসে পল্টুর। রতন আর কথা বাড়ায় না। বলে, ‘আমার সঙ্গে এসো। তোমাকে খাবারের সন্ধান দিই।’

রতন হাঁটতে হাঁটতে বেশ সামনে চলে গিয়েছিল। হঠাৎ সেই দুষ্টু ছেলেদের একজন কোথা থেকে এসে ওকে তুলে ধরে। উল্টো করে ঝুলিয়ে বলে, ‘এবার পেয়েছি!’ রতন ছটফট করতে থাকে।

পল্টু আর সহ্য করতে পারে না। ঠোঁকর দিতে থাকে ছেলেগুলোকে। পল্টুর অদ্ভুত রং আর ডানা দেখে ওরা ঘাবড়ে যায়। রতনকে ফেলে পালায় ওরা। রতন একটু ধাতস্থ হলে পল্টু বলে, ‘এখন থেকে আমি আর এসব হতে দেব না। পশু–পাখিকে কষ্ট দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। আমি যদি আগে বুঝতাম, তবে আজ আর এই হাল হতো না আমার।’ রতনের মায়া হয়। বলে, ‘ঠিক হয়ে যাবে, দেখো।’ কথাটা বলতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। ওমনি পল্টু হয়ে যায় মানুষ। রতন একটু ছিঁটকে দূরে সরে যেতে চায়। কিন্তু পল্টু তাকে জড়িয়ে ধরে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

সেই থেকে পল্টু প্রাণীদের খুব ভালোবাসে। সে বড় হয়ে অ্যানিমেল রাইটস অ্যাকটিভিস্ট হতে চায়।