পার্সেল

শত শত গল্পের মধ্য থেকে সেরা গল্প বাছাই করা যে কত কঠিন একটা কাজ, সেটা যে না করেছে, তাকে বলে বোঝানো কঠিন। কঠিন সেই কাজই করে ফেলেছি আমরা। ‘এসো গল্প লিখি ২০২২’ প্রতিযোগিতার সেরা ১০টি গল্প আমরা পেয়ে গেছি। বিচিত্র স্বাদ আর ভাবনার গল্প পড়ে আমরা মুগ্ধ। সবাইকে ধন্যবাদ! এ সংখ্যায় ছাপানো হলো ক ও খ বিভাগে বিশেষ স্থানজয়ী চারটি গল্প। আগামী সংখ্যায় ছাপানো হবে দুই বিভাগের তৃতীয় স্থানজয়ী গল্প দুটি। একইভাবে পরবর্তী সংখ্যায় ছাপা হবে দ্বিতীয় ও প্রথম গল্পগুলো। মনে আছে নিশ্চয়ই, প্রথম পুরস্কার বিজয়ীরা পাবে ৫ হাজার টাকার বই, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ হাজার টাকার বই ও তৃতীয় পুরস্কার ২ হাজার টাকার বই। অতএব চোখ রাখো গোল্লাছুটে!

ঝড় আসছে। বারান্দায় বসে থাকতে থাকতে পশ্চিম আকাশের দিকে তাকাল ইকবাল। ঘন কালো মেঘ জড়ো হচ্ছে। এই বাজে আবহাওয়ার কারণে সারা দিন ইকবাল আজ ঘরে বন্দী। ছুটির দিনে কোথায় বেড়াতে যাবে, তা না ঘরে বসে চেয়ারে দোল খাচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই মেজাজটা খিঁচড়ে গেল।

ঘরে খাবার নেই দেখে একটু আগে একবার খিঁচড়েছে। এই ফ্ল্যাটে সে একা থাকে। নিজের খাবার নিজেরই তৈরি করতে হয়। আজ বাজার করার কথা ছিল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখে, বেলা প্রায় ডুবে গেছে। এখন আবার ঝড়। এসব দেখে তার আর বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করেনি। এখন তাই খালি পেটে বারান্দায় বসে হাওয়া খাচ্ছে আর আবহাওয়ার ওপর বিরক্ত হচ্ছে।

এমন সময় হঠাৎ কলবেলের শব্দ। সে অবাকই হলো । মনে মনে ভাবল, ‘এই কালবৈশাখীর সন্ধ্যায় কে এল তার কাছে? কোনো দুঃসংবাদ নাকি?’

ভাবতে ভাবতে চেয়ার ছেড়ে দরজা খুলতে গেল ইকবাল। কড়াৎ! প্রচণ্ড শব্দে বাইরে বজ্রপাত হলো। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎও চলে গেল। আবছা অন্ধকারে ছেয়ে গেল পুরো ঘর। ইকবাল তাড়াহুড়া করে দরজা খুলতে গিয়ে টেবিলের কোণায় প্রচণ্ড একটা গুঁতা খেল। ইকবালের ধাক্কায় উল্টে গিয়ে মেঝেতে পড়ল টেবিলের ওপরের কাচের জগটা। ঝন ঝন শব্দে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল কাচের টুকরাগুলো। মুহূর্তের মধ্যে এত সব কাণ্ডে

ইকবাল কিংকর্তব্যবিমূঢ়! বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে গেল ইকবাল। তার মনে প্রশ্ন, কার আগমনে এত দুর্ঘটনা।

ঘরের ভেতর-বাইরে সবই অন্ধকার। লবিতে মাঝেমধ্যে উঁকি দিচ্ছে বজ্রপাতের আলো। ওই আবছায়ায় প্রায় ছয় ফুটের একটা দীর্ঘ দেহ দেখতে পেল ইকবাল। অন্ধকারে লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

‘স্যার, আপনার ডেলিভারি।’

‘ডেলিভারি? কিসের ডেলিভারি?’ প্রশ্ন করল ইকবাল।

‘স্যার, “অপহন্তা” নামের অনলাইন শপ থেকে আপনি কিছু অর্ডার করেছিলেন। সেই পার্সেলটা,’ বলল আগন্তক।

ইকবালের মনে পড়ল প্রায় দুই সপ্তাহ আগে অর্ডারটা সে করেছিল। আজ এই ঝড়ের মধ্যে ডেলিভারি পেয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে স্বস্তিও বোধ করল।

পার্সেলটা বুঝে নিল ইকবাল। দরজা বন্ধ করতে গিয়ে খেয়াল করল, তখনো দরজার ওপাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মানুষটা।

‘কিছু বলবেন?’ ইকবাল জিজ্ঞেস করল।

আঁধারের মধ্য থেকেই লোকটা আস্তে আস্তে বলল, ‘আপনি কি জানেন “অপহন্তা” মানে কী?’

ইকবালের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে গেল। লোকটার কণ্ঠ কেমন অশরীরী ঠেকছে! সে তাড়াতাড়ি বলল, ‘এ রকম আজব প্রশ্নের মানে কী? আপনি আসুন।’

ইকবাল দরজা বন্ধ করল। ঘুরে দুই পা এগিয়ে গিয়ে পার্সেলটা রাখল টেবিলের ওপরে। ভাঙা জগের টুকরাগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে হঠাৎ একটা কাচের টুকরায় চোখ যেতেই সে জমে গেল। কাচের ওই টুকরায় দেখা যাচ্ছে, ঠিক তার পেছনে এক দীর্ঘ কালো দেহ!

অনাহূত সেই আগন্তক হিমশীতল কণ্ঠে বলল, ‘আপনি দরজাটা লক করতে ভুলে গেছেন।’

ইকবাল ঘুরে চিৎকার দিয়ে উঠল, ‘কে আপনি?’ প্রচণ্ড আতঙ্কে নড়ার ক্ষমতা নেই তার।

ইকবালের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে আসতে হিস হিস করে লোকটা বলল, ‘অপহন্তা মানে খুনি!’

ইকবালের তীক্ষ্ণ চিৎকার বজ্রপাতের আওয়াজে চাপা পড়ে গেল।