মনার আবিষ্কার
শফিক ইমতিয়াজ
ইঁদুর কেন লোকের ঘরে ঘোরে রাতের বেলা
কাটুসকুটুস, কিংবা করে তিড়িংবিড়িং খেলা?
আসল কারণ বের করেছে মনোজ কুমার মনা
ইঁদুর নিয়ে এ ব্যক্তিটির ব্যাপক গবেষণা!
লোকের যত ভুল ধারণা ভেঙে দিয়ে উনি
কী বলেছেন, চলো সেটাই ধৈর্য ধরে শুনি—
ইঁদুরের এক সেরা মিতে, নামটি বলি পরে
ওরা আবার বসত করে লোকের ঘরে ঘরে
ভীষণ সরু, একই রকম দেখতে আগা–তলা
ঠিক ইঁদুরের মতোই তাদের গর্তে গর্তে চলা!
ইঁদুর তাদের আসল মিতে ঠিক নিয়েছে চিনে
দেখা করার পায় না সাহস লোকের ভয়ে দিনে
তাই সে আসে অন্ধকারে, চুপটি করে রাতে
মিতের সাথে আড্ডা মারা যায় সহজে যাতে।
ঘরে ইঁদুর! টের পেলে তো মানুষ যাবেই জেগে
আর তখনই ইঁদুর ভীষণ বিগড়ে ওঠে রেগে
ঝাল মেটাতে একা কিংবা অনেক ইঁদুর জুটে
নষ্ট করে খাবার, কাপড়, কাগজ কেটেকুটে!
দারুণ সাড়া ফেলল মনার আবিষ্কারের আলো
শুনেছি সে খবর নাকি হয়েছে ভাইরালও!
কিন্তু মনা সব বলেছে, ফাঁস করেনি খালি
ইঁদুরগুলোর সঙ্গে ঘরে কার এমন মিতালি?
আমি তাকে চেপে ধরি, বলল হেসে—আরে
কার সাথে মিতালি, সেটা বলব সেমিনারে
কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা, মনাও সেটা জানে
কাছে ডেকে ফিসফিসিয়ে বলল কানেকানে—
এই জগতে ইঁদুর যাকে ভাবে সেরা মিতে
শুনলে হেসে গড়ান খাবি, আর তা জুতোর ফিতে!
তাই তো সে শুয়ে থাকে
ওমর কায়সার
শিকারেতে মন নেই, নেই গর্জন
দিন শেষে ঘুমটাই শুধু অর্জন।
ডোরাকাটা গায়ে বসে খেলে মশা–মাছি
হরিণেরা ঘাস খায় খুব কাছাকাছি।
বিড়ালের মতো বাঘ, লাজুক স্বভাব
ক্ষিপ্রতা নেই তার, রাগের অভাব।
হাবাগোবা চেহারার সকরুণ চোখে
কী যেন বলতে চায়, বোঝে না তো লোকে।
এমন অলস বাঘ বনে কি মানায়?
তাই তো সে শুয়ে থাকে চিড়িয়াখানায়।
বোঝা গেল কিছু দাদা?
মাহবুবুল আলম কবীর
ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্র-বিশ্ব সব বাঁধা আছে রুটিনেই
রুটিনের মতো দরকারি মাল এই দুনিয়ায় দুটি নেই।
কথাটায় কোনো ত্রুটি নেই।
ছাত্রজীবন ঘুরপাক খায় রুটিনের ফেরে পড়ে
ফাঁকিবাজ যারা রুটিন মানে না, তারাও রুটিন করে!
রুটিন মেনেই কাজে যায় লোকে, কাজ শেষে ফেরে বাড়ি
রুটিনের সবই সুশৃঙ্ক্ষল, সফলতা তাড়াতাড়ি।
রুটিন মেনেই খেলাধুলা চলে, রুটিন মেনেই চাষ
রুটিনেই চলে হাত ধোয়া আর খানাপিনা, দাঁত ব্রাশ।
রাঁধুনি কতটা তেল-নুন দেবে? কতটা রসুন-আদা?
কোনটার পরে কোনটাকে দেবে? সবই তো রুটিনে বাঁধা।
বোঝা গেল কিছু দাদা?
মাথা কি ঘোরায়? বুক ধড়ফড়? পেট ফুলে বুঝি ঢোল?
জেনে রেখো তবে—তোমার দেহের রুটিনে গন্ডগোল।
ডাক্তার তাই উপদেশ দেন—রুটিন চেকআপ করো
রুটিনের থেকে মুক্তি পাবে না; হয় বাঁচো, নয় মরো।
মাতৃগর্ভে শুরু যে রুটিন, রুটিনে জীবন পার—
রুটিন মেনেই কাফন-কফিন, রুটিনেই সৎকার।
সৌরজগৎও মানছে রুটিন, গ্রহরা নিয়মে ঘোরে
রুটিন মেনেই চলিতেছে ট্রেন, আকাশে বিমান ওড়ে
সড়কে জ্বলছে সিগন্যাল–বাতি সবুজ-হলুদ-লাল
তুমি না-ই মানো, রুটিন কিন্তু মানিতেছে মহাকাল।
কখনো কখনো মনে হতে পারে রুটিন গলার ফাঁসও
ভালো চাও যদি ভাই-বন্ধুরা রুটিনে ফেরত আসো।