ম্যাও

শত শত গল্পের মধ্য থেকে সেরা গল্প বাছাই করা যে কত কঠিন একটা কাজ, সেটা যে না করেছে, তাকে বলে বোঝানো কঠিন। কঠিন সেই কাজই করে ফেলেছি আমরা। ‘এসো গল্প লিখি ২০২২’ প্রতিযোগিতার সেরা ১০টি গল্প আমরা পেয়ে গেছি। বিচিত্র স্বাদ আর ভাবনার গল্প পড়ে আমরা মুগ্ধ। সবাইকে ধন্যবাদ! এ সংখ্যায় ছাপানো হলো ক ও খ বিভাগে বিশেষ স্থানজয়ী চারটি গল্প। আগামী সংখ্যায় ছাপানো হবে দুই বিভাগের তৃতীয় স্থানজয়ী গল্প দুটি। একইভাবে পরবর্তী সংখ্যায় ছাপা হবে দ্বিতীয় ও প্রথম গল্পগুলো। মনে আছে নিশ্চয়ই, প্রথম পুরস্কার বিজয়ীরা পাবে ৫ হাজার টাকার বই, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ হাজার টাকার বই ও তৃতীয় পুরস্কার ২ হাজার টাকার বই। অতএব চোখ রাখো গোল্লাছুটে!

রাত ১০টা ৪৩। ছোট্ট একটা টেবিলে বসে দরকারি কিছু কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন বঙ্কুবাবু। হুট করে কে যেন তার নাম ধরে ডাকল। বঙ্কুবাবু বাসায় একাই থাকেন আর এ সময় কারও আসার কথা নয়। তিনি ঘরের চারদিকটা ভালো করে খেয়াল করে দেখলেন। নাহ্, কেউ নেই। মনের ভুল ভেবে আবার কাজে মন দিলেন বঙ্কুবাবু। এমন সময় আবার সেই ডাক। এবার তিনি উঠে দাঁড়ালেন। পুরো ঘরে ভালো করে চোখ বোলালেন। নাহ্, কোথাও কেউ নেই!

এমন সময় আবার ওই কণ্ঠ, ‘আরে, এদিক-ওদিক কই খুঁজছ! আমি তো এই তোমার টেবিলের নিচে।’

বঙ্কুবাবু টেবিলের নিচে তাকাতেই দেখতে পেলেন, সম্পূর্ণ পীত রঙের একটা বিড়াল। এমন রঙের বিড়ালও যে হয়, জানা ছিল না। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন বঙ্কুবাবু।

বিড়ালটা তখন বলে উঠল, ‘ওভাবে ড্যাবড্যাব করে কী দেখছ? কখনো বিড়াল দেখোনি?’

বঙ্কুবাবু বললেন, ‘তুমি কথা বলতে পারো! কী আশ্চর্য! তোমার গায়ের রং অমন কেন?’

‘অত প্রশ্ন না করে কিছু খেতে দাও তো।’

‘তা তুমি কী খাও?’

‘অনেক কিছুই তো খাই। তোমার বাড়িতে আজ কী রান্না হয়েছে?’

‘পালংশাক আর বেগুনভর্তা।’

বিড়ালটা মুখ বিকৃত করে বলল, ‘ছি! ওসব ছাইপাশ খায় কে?’

বঙ্কুবাবু বললেন, ‘তাহলে তোমার জন্য একটু দুধ নিয়ে আসি?’

বিড়াল হাই তুলে বলল, ‘আনতে পারো।’

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

বঙ্কুবাবু উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে চুলায় গরম করে একটা কাপে ঢেলে নিয়ে এলেন। কিন্তু ফিরে এসে বিড়ালটাকে আরকোথাও দেখতে পেলেন না! কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও কোনো লাভ হলো না।

পরদিন সকালে যখন বঙ্কুবাবুর ঘুম ভাঙল, তখন কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন, তার বিছানায় আরও কেউ শুয়ে আছে। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলেন, ওটা তো তিনি নিজেই।

এটা কী করে সম্ভব! বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই আরও খেয়াল করলেন, তার পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির শরীরটা আর আগের মতো নেই, অনেক ছোট হয়ে গেছে।

হাত-পাগুলোও হয়ে গেছে লোমে ভরপুর। আশপাশের সবকিছুই অনেক বড় লাগছে।

বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন বঙ্কুবাবু। একি! তিনি আর মানুষ নেই! হয়ে গেছেন একটা পীত রঙের বিড়াল!

এমন সময় বিছানা থেকে তার মতো দেখতে লোকটা উঠে দাঁড়াল।

প্রথমে তিনি তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, ‘দুঃখিত বঙ্কুবাবু, বিড়ালের এই জীবন আর ভালো লাগছিল না! তাই আপনাকে দিয়ে দিলাম। আপনি কিছুদিন এমন থাকুন, তারপর যদি ভালো না লাগে তবে আমার মতো কোনো একটা মানুষের পাশে তাকে না জানিয়ে এক রাত ঘুমালেই আপনি তার রূপ ধারণ করতে পারবেন। তবে ভুলেও এ কাজ আমার সঙ্গে করতে আসবেন না। মনে রাখবেন, আপনি কখনোই আপনার পুরোনো শরীর ফেরত পাবেন না!’

শুনে বঙ্কুবাবু কিছু একটা বলতে চাইলেন, কিন্তু তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো ‘ম্যাও!’