রামবাবুর লাউ

শত শত গল্পের মধ্য থেকে সেরা গল্প বাছাই করা যে কত কঠিন একটা কাজ, সেটা যে না করেছে, তাকে বলে বোঝানো কঠিন। কঠিন সেই কাজই করে ফেলেছি আমরা। ‘এসো গল্প লিখি ২০২২’ প্রতিযোগিতার সেরা ১০টি গল্প আমরা পেয়ে গেছি। বিচিত্র স্বাদ আর ভাবনার গল্প পড়ে আমরা মুগ্ধ। সবাইকে ধন্যবাদ! এ সংখ্যায় ছাপানো হলো ক ও খ বিভাগে বিশেষ স্থানজয়ী চারটি গল্প। আগামী সংখ্যায় ছাপানো হবে দুই বিভাগের তৃতীয় স্থানজয়ী গল্প দুটি। একইভাবে পরবর্তী সংখ্যায় ছাপা হবে দ্বিতীয় ও প্রথম গল্পগুলো। মনে আছে নিশ্চয়ই, প্রথম পুরস্কার বিজয়ীরা পাবে ৫ হাজার টাকার বই, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ হাজার টাকার বই ও তৃতীয় পুরস্কার ২ হাজার টাকার বই। অতএব চোখ রাখো গোল্লাছুটে!

রামবাবুর লাউ চুরি যাওয়ায় তার বাড়িতে কান্নার আসর বসে গেছে।

ঘটনাটা বলার আগে রামবাবুর পরিচয়টা একটু দিই। রামবাবুর বাসায় আছেন তার বউ আর এক বিধবা পিসি। তার একটা ছেলেও আছে, ঢাকায় পড়ে। রামবাবুর লাউটা চুরি গেছে গতকাল। কিন্তু তাতে রামবাবুর কোনো মাথাব্যথা নেই। একটা লাউই তো গেছে। কিন্তু এই কথা বউ আর পিসিকে কিছুতেই বোঝাতে পারছেন না রামবাবু! কারণ, তার পিসি বিধবা, আমিষ খান না। বাড়ির পেছনের উঠানে একটা সবজিবাগান আছে। তার বউ আর পিসি অনেক দিন ধরে যত্ন করে লাউটা বড় করেছেন। লাউ চুরি যাওয়ায় পিসি আজ সকাল থেকে উপোস আর গিন্নি ঘরের দরজা বন্ধ করে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছেন। রামবাবু এখন কী করেন? বউ সকালের নাশতা দেয়নি বলে রামবাবুও উপোস।

রামবাবু মাঝেমধ্যে গোয়েন্দা গল্প পড়েন। ভাবলেন, এবার তাহলে সত্যিকারের গোয়েন্দাগিরিতেই নেমে পড়া যাক! লাউ চোরের সন্ধানে গোয়েন্দাগিরি। খালি পেটেই বেরিয়ে পড়লেন রামবাবু। প্রথমে গ্রামের সব লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলেন কেউ তার লাউটা চুরি হতে দেখেছে কিনা। সবাই একবাক্যে বলল, ‘না’।

রামবাবু একবার ভাবলেন, পুলিশে খবর দেবেন। কিন্তু পরে তার মনে হলো, একটা লাউয়ের জন্য পুলিশ ডাকলে লোকে তাকে বোকা ভাববে। তাই হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন বাজারে। সব দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন, কেউ তার লাউটা বিক্রি হতে দেখেছে কি না। কিন্তু কেউই খোঁজ দিতে পারল না।

হতাশ হয়ে বাজার থেকে বাড়ির পথ ধরতে যাবেন, কিন্তু কী মনে করে বাজারের গুপীদার দোকানে উঁকি দিলেন। রামবাবু বললেন, ‘গুপীদা, আমার লাউয়ের কোনো খোঁজ দিতে পারো? লাউটা গতকাল...’

অলংকরণ: আরাফাত করিম

রামবাবুকে পুরো কথা শেষ করতে দিলেন না গুপীদা। বললেন, ‘বুঝেছি, বুঝেছি! তোমার লাউ যে চুরি গেছে, তা আমি জানি!’

রামবাবু বললেন, ‘তুমি জানো? কে চুরি করল?’

গুপীদা বললেন, ‘কে আর করবে! ওই যে তোমার পাড়ার কাঁচা চোর কালু, সে-ই চুরি করেছে।’

রামবাবু বললেন, ‘তুমি নিজে দেখেছ?’

গুপীদা বললেন, ‘গতকাল রাত ১১টার কথা। দোকান বন্ধ করে তোমার বাড়ির সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম; দেখি, চুপি চুপি তোমার বাড়ির পাঁচিল টপকে বাগানে ঢুকল কালু। আমিও এগিয়ে উঁকি মারলাম। দেখি, খুব যত্ন করে লাউটা কেটে নিয়ে পাঁচিল টপকে পালিয়ে গেল কালু।’

রামবাবু বললেন, ‘তুমি আমাকে ডাকলে না কেন?’

গুপীদা বললেন, ‘তুমি কি ভাবো, আমি ডাকিনি? অনেক ডেকেও সাড়া না পেয়ে চলে এসেছি।’

গত রাতে রামবাবু মরার মতো ঘুমিয়েছেন, তাই আর কিছু বলারও নেই। গুপীদাকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি ছুটলেন কালু চোরার বাড়ির দিকে।

কালুর বাড়িতে পা রেখেই হাঁক ছাড়লেন রামবাবু। কালু তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। রামবাবুকে দেখেই উঠে দাঁড়াল।

রামবাবু বললেন, ‘কী দিয়ে ভাত খাচ্ছিস রে, কালু?’

পাশ থেকে কালুর বউ বলল, ‘চিংড়ি-লাউ রেঁধেছি।’

রামবাবু কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন, ‘চিংড়ি দিয়েই তো ঝামেলা করেছিস, নাহলে কিছু তরকারি পিসির জন্য নিয়ে যাওয়া যেত। তিনি তো আবার আমিষ খান না।’