সমুদ্রের পানিতে কারা বাস করে? ঝটপট হাত তুলে মাছের কথাই বলবে নিশ্চয়ই। উত্তর অবশ্যই সঠিক। তবে আরও কিছু রহস্যময় প্রাণীও নিশ্চয়ই থাকতে পারে, নাকি? সমুদ্রের তলদেশ নিয়ে আমাদের আগ্রহ প্রাচীনকালের। তাই ছোটবেলা থেকেই টিভিতে নীল সমুদ্রে মাছেদের ঘুরে বেড়াতে দেখলে আমাদের চোখের পলক আর পড়ে না!
আর এ কারণে সমুদ্রের নিচের অধিবাসীদের কথা বললে হয়তো চোখের সামনে ভেসে ওঠে একঝাঁক রংবেরঙের মাছের ছবি। কিন্তু কেমন হবে যদি আমি বলি সমুদ্রের নিচে শুধু রংবেরঙের মাছ নয়, সেই সঙ্গে বাস করে রহস্যময় সি মনস্টার?
বেশ, তবে নড়েচড়ে বসো। গল্পটা লুকা পাগুরো নামের এক বালককে নিয়ে। পানির নিচে থাকা গুটিকয় মাছ আর মা-বাবা-দাদিকে নিয়ে ওর পরিবার। পানির নিচে পোষা মাছ চরিয়ে দিন কাটে লুকার। হ্যাঁ, ওকে ঠিক সমুদ্রের রাখালবালক বলতে পারো। আর ওর পোষা মাছগুলোর কী নাম, জানো? গোটফিশ! খাঁটি বাংলায় ‘ছাগমৎস্য’! ছাগলের মতো সমুদ্রে চরে বেড়ায় বলেই হয়তো এমন নাম!
যাহোক, মাছ চরানোর পর বাকি যে সময় থাকে হাতে, সে সময় লুকা পানির ওপরের পৃথিবীর কথা ভাবে। কিন্তু মা-বাবা প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয়, মাটিতে ঘুরে বেড়ানো মানুষ কতটা ভয়ানক। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছ, লুকা সেই রহস্যময় সি মনস্টারদের একটা।
কিন্তু মানুষের সঙ্গে এক দিক থেকে মিল আছে ওর, সেটা হলো কৌতূহল। সেই কৌতূহলের বশে পানি ছেড়ে মাটিতে পা রাখে লুকা। মজার বিষয় হলো পানি ছেড়ে মাটিতে গেলেই সি মনস্টাররা দেখতে হয়ে যায় মানুষের মতো। আবার পানির ছোঁয়া পেলেই ফিরে যায় আগের রূপে।
মাটিতে ওর সঙ্গী হয় আরেক সি মনস্টার এবং ছেলেবেলার বন্ধু আলবার্তো স্কোরফানো। মানুষের পৃথিবী নিয়ে যার জানাশোনা অনেক। পানি ছেড়ে মাটিতে পা রেখেই লুকা প্রথমবারের মতো দেখতে পায় সুনীল আকাশ, সূর্যের তীব্র আলো, গায়ে চড়ায় শার্ট আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার ও খোঁজ পায় এক অত্যাশ্চর্য জিনিসের—মাটিতে দুই চাকায় চলা ভেসপা। সেই থেকে দুই বন্ধু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, ভেসপায় চড়ে চষে বেড়াবে পুরো পৃথিবী। আর তখনই লুকার মা–বাবা জেনে যায়, কী বিপজ্জনক কাজ করছে তাদের ছেলে! ঘুরে বেড়াচ্ছে মাটিতে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, লুকাকে তার চাচার সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হবে সমুদ্রের আরও গভীরে।
তাহলে আলবার্তোর সঙ্গে ভেসপায় চড়ার স্বপ্নের কী হবে? লুকার সামনে একটাই পথ—যেতে হবে মানুষের গ্রামে। যেখানে ভয়ালদর্শন সি মনস্টারদের মারার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে পুরস্কার। তাই পরিচয় রাখতে হবে গোপন। পানির ছোঁয়া থেকে থাকতে হবে দূরে। আর ভেসপা পাওয়ার জন্য জয়ী হতে হবে মানুষের এক প্রতিযোগিতায়। একই সময়ে ওদের পিছু নিয়েছে লুকার মা–বাবা। শেষ পর্যন্ত মানুষ সি মনস্টারদের মেনে নেবে কি না, তা–ও একটা চিন্তার বিষয়।
লুকা আর আলবার্তোর স্বপ্ন সত্যি হয় কি না, তা জানতে দেখতে হবে লুকা সিনেমাটি। হলফ করে বলতে পারি, প্রতি মুহূর্তে মানুষ হিসেবে আমাদের আচরণ বিস্মিত করবে তোমাকে। আর এটাও নিশ্চিত, জিউলিয়া নামের মেয়েটাকে তোমাদের দারুণ লাগবে। সব মিলিয়ে উপলব্ধি করবে, বন্ধুত্ব কীভাবে সব বাধাকে হার মানায়।
গত ১৬ জুন মুক্তি পাওয়া পিক্সার এবং ডিজনির এ অ্যানিমেশন সিনেমা ইতিমধ্যে বহু মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। তাই সিনেমাটি দেখতে বসে হারিয়ে যাও অচেনা সমুদ্রের নিচে, ভেসপায় চড়ে বুকভরে ঘ্রাণ নাও ইতালির লোনা সমুদ্রতটের। যেখানে তোমার সঙ্গী হবে লুকা আর আলবার্তো।