২-কথা

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

মানিক আর রতন। দুই ভাই। পড়ে একই ক্লাসে। ক্লাস টু।

একদিন সকালে। বাড়ির উঠানের আমগাছের নিচে বসে আছে দুজন। সামনে একটা গণিত বই। বইটা খোলা। পৃষ্ঠায় দুটি মাছের ছবি। নিচে বড় করে লেখা ‘২টি মাছ’।

রতন বলল, ‘মানিক, দেখ, কী সুন্দর ২টা মাছ!’

মানিক বইয়ের দিকে তাকায়, ‘হুঁ, খুব সুন্দর। আচ্ছা রতন, মাছ কোথায় থাকে?’

রতন একটু ভেবে বলল, ‘মাছ তো থাকে পুকুরে।’

‘আরে হ্যাঁ, মাছ তো পুকুরেই থাকে। আচ্ছা রতন, এখানে ২টা মাছ, তা–ই না?’

‘হুঁ।’

‘তাহলে বল তো, ২ কোথায় থাকে?’

মানিকের প্রশ্ন শুনে রতন চিন্তায় পড়ে যায়, ‘২ থাকে...২ থাকে...তাই তো, ২ কোথায় থাকে?’

মানিক বলল, ‘আচ্ছা, ২ কি গাছে থাকে?’

‘হতে পারে। আয় দেখি।’ বইটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় রতন।

মানিকও ওঠে। দুজন গাছের দিকে তাকায়। গাছে দুটি পাকা আম ঝুলছে।

রতন মাথা নাড়ায়, ‘নাহ! গাছে তো ২ নেই।’

মানিক সায় দেয়, ‘হুঁ। আমিও তো দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে মনে হয় ২ আকাশে থাকে।’

রতন বলল, ‘চল তাহলে, খুঁজে দেখি।’

দুজন হেঁটে একটু ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ায়। আকাশে তাকায়। দুটি পাখি উড়ে যাচ্ছে।

রতন হতাশ হয়ে বলল, ‘কই, আকাশেও তো ২ নেই।’

‘আমিও তো দেখতে পাচ্ছি না।’ মানিক একটু ভেবে বলল, ‘তাহলে মনে হয় ২ মাঠে থাকে।’

রতন সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘ঠিক বলেছিস। চল, খুঁজে দেখি...।’

দুজন হাঁটতে শুরু করে। একটু পর বাড়ির পাশের মাঠে এসে পৌঁছায়। এদিক–ওদিক তাকায়। দেখে দূরে দুটি ছাগল ঘাস খাচ্ছে। কিন্তু ২ কই? মানিক আর রতন ক্লান্ত হয়ে মাঠে বসে পড়ে।

‘নাহ, এখানেও দেখছি ২ নেই।’ মানিক মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে।

রতন নিচের ঠোঁট কামড়াতে থাকে, ‘তাহলে ২ কি শুধু বইয়েই থাকে?’

হঠাৎ একটা কণ্ঠ ভেসে আসে, ‘তোমরা কী করছ এখানে?’

মানিক আর রতন ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।

রতন বলল, ‘আমরা ২ খুঁজছি।’

‘তোমরা কারা?’

মানিক বলল, ‘আমরা দুই ভাই।

আমি মানিক।’

রতন বলল, ‘আমি রতন।’

মানিক মুগ্ধ চোখে আগন্তুকের দিকে তাকায়, ‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এত এত ২টা জিনিস দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ২ নিজে আসলে দেখতে কেমন?’

‘তোমরা দুই ভাই ২ খুঁজে খুঁজে হয়রান, তাই না?’ আগন্তুক মুচকি হাসে, ‘একটু খেয়াল করে দেখো, ২ তোমাদের সঙ্গেই আছে।’

মানিক–রতন অবাক। দুজন একসঙ্গে বলল, ‘আমাদের সঙ্গেই আছে? কোথায়?’

আগন্তুক বলল, ‘এই যে, তোমাদের ২টি করে হাত...’

মানিক নিজের দুই হাত চোখের সামনে ওঠায়, ‘আরে, তাই তো...!’

‘আর দেখো, তোমাদের পা–ও ২টি করে...’

রতন নিজের দুই পায়ের দিকে তাকায়, ‘আরে, তাই তো...!’

মানিক এবার রতনের দিকে তাকায়, ‘রতন, তোর চোখও তো দেখছি ২টা...!’

রতন বলল, ‘ওরে মানিক, তোর কান তো ২টা...। তার মানে আমারও কান ২টা...!’

হঠাৎ এতগুলো ২–এর খোঁজ পেয়ে দুই ভাই রীতিমতো বিস্মিত!

মানিক মুগ্ধ চোখে আগন্তুকের দিকে তাকায়, ‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এত এত ২টা জিনিস দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ২ নিজে আসলে দেখতে কেমন?’

আগন্তুক হাসিমুখে বলল, ‘২ দেখতে একেবারে আমার মতো।’

রতন অবাক, ‘আপনার মতো? ২ দেখতে আপনার মতো? আপনি কে?’

‘ভালোভাবে খেয়াল করে দেখো, আমিই তো ২!’

মানিক–রতন একসঙ্গে বলে উঠল, ‘আপনিই ২?’

আগন্তুক ওপর–নিচ মাথা নাড়ায়, ‘হ্যাঁ, আমিই ২! বিশ্বাস না হলে বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নাও।’

রতন দ্রুত বইটা হাতে নেয়। পৃষ্ঠা ওলটাতে থাকে। মানিকের দৃষ্টিও বইয়ে। সংখ্যা পরিচিতির পৃষ্ঠায় এসে দুই ভাইয়ের চোখ আটকে যায়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একবার বইয়ের পৃষ্ঠায়, আরেকবার সামনে থাকা আগন্তুকের দিকে তাকায়। আগন্তুক, যার শারীরিক কাঠামো হুবহু ২–এর মতো, দাঁত বের করে হাসছে।

‘আরে, এ যে দেখছি সত্যিই ২!’ উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল মানিক–রতন।

আগন্তুক বলল, ‘হুঁ। আমি হলাম ২। আমার আগে থাকে ১। পরে থাকে ৩। ১, ২, ৩...!’

‘কিন্তু আপনি এখানে কীভাবে এলেন?’ মানিক চোখ বড় বড় করে জানতে চায়।

‘আসলে, আমরা সব সময় তোমাদের আশপাশেই থাকি। তবে অদৃশ্য হয়ে।’ আগন্তুকের মুখে রহস্যময় হাসি, ‘তোমাদের দুই ভাইয়ের ২ খোঁজার অদম্য চেষ্টা দেখে খুব ভালো লেগেছে। তাই আমি ২–এর রূপ ধরে তোমাদের কাছে এসেছি।’

‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ২।’ রতনের কণ্ঠে আনন্দ ঝরে পড়ে।

‘তোমাদেরও ধন্যবাদ, মানিক–রতন।’ আগন্তুক বলল, ‘তোমরা ভালো থেকো। আর সব সময় এ রকম জানার ইচ্ছাকে পূরণের চেষ্টায় থেকো। আমি গেলাম...।’ বলতে না বলতেই আচমকা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ২–রূপী আগন্তুক।

চোখের সামনে এমন অদ্ভুতুড়ে ঘটনা দেখেও মানিক–রতন ভয় পেল না। বরং অদ্ভুত ভালো লাগায় ভরে উঠল তাদের মন। দুই ভাই একসঙ্গে ছড়া বলতে বলতে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল।

‘আমি মানিক, আমি রতন

আমরা দুই ভাই

২–এর দেখা পেয়ে গেছি

খুশির সীমা নাই!’