‘ফিরে যেতে পারলে খুব ভালো হতো’

রুমান আলমকে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। টেলিফোনের তালিকায় তাঁর নাম নেই। তাঁর এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাজ হলো না, সাক্ষাৎকারের কথা শুনে তিনি জবাব দেওয়ার প্রয়োজনটুকুও দেখলেন না। অবশেষে টুইটারের মাধ্যমে রুমানের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। আমি জানিয়েছিলাম সাহিত্য নিয়ে কোনো কথা নয়, বিস্তর সাক্ষাৎকার তিনি দিয়েছেন, যাতে সে বিষয়ে উত্তর রয়েছে। আমি বাংলাদেশি হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা জানতে চাই। জবাবে তিনি নিজেই ফোন নম্বর দিলেন। তবে অনুরোধ করলেন, বাচ্চারা এখন ঘরে। টেলিফোনে কথা না বলে ই–মেইলে কথা হলেই ভালো। তার সেই ই–মেইলে আলাপচারিতার মোদ্দা অংশ নিচে পত্রস্থ হলো।

রুমান আলম
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

হাসান ফেরদৌস:পনি তো জন্মেছেন মধ্যবিত্ত বাংলাদেশি পরিবারে। তাহলে ধরে নিতে পারি, মধ্যবিত্ত বাঙালির সব সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার সঙ্গেই আপনি পরিচিত। যেমন রবীন্দ্রসংগীত, ভাত–মাছ, মুক্তিযুদ্ধ, একুশে। এর মধ্যে কোনটা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে? লেখক হিসেবে বাঙালি সংস্কৃতির কোনো অভিজ্ঞতা আপনাকে আদৌ প্রভাবিত করেছে কি না?

রুমান আলম: না, আমার অভিজ্ঞতা একদমই আলাদা। কী জানি, এটা হয়তো আমার শৈশবকালীন অভিজ্ঞতার প্রভাব হতে পারে। আমার বাবা-মা এ দেশে চলে আসেন ১৯৭২ সালে। তখন আমি খুবই ছোট। আমার বেড়ে ওঠা ছিল পুরোপুরি আমেরিকান আবহে। বাবা-মায়ের সংস্কৃতিকে আমি ও আমার ভাইবোন, বলতে গেলে পুরোটাই প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। নামমাত্র বাংলা শিখেছিলাম। এমনকি (বাঙালি) খাদ্যের ব্যাপারেও আমাদের প্রবল অনীহা ছিল। এখন বড় হয়ে সে কথা বোঝা কঠিন, কিন্তু ব্যাপারটা এ রকমই ছিল।

প্রশ্ন :

হাসান:াংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে তাহলে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা নেই? রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ দাশ—এসব আপনি কিছুই পড়েননি, এমনকি ইংরেজিতেও নয়?

রুমান: আমি পড়েছি কি না ঠিক বলতে পারব না। আমি বলছি না আমার বাবা-মা কোনো রকম চেষ্টা করেননি। কিন্তু এখানে অন্য কয়েকটা ব্যাপার বাদ সাধে। দূরত্ব (ভূগোল) একটা ব্যাপার ছিল, আরও ছিল বাবা-মায়ের সংস্কৃতিকে মেনে নেওয়া বা বিবেচনায় আনার ব্যাপারে আমার অনীহা। আমি সত্যি খুব সামান্যই জানি বাংলা ভাষা বা বাংলা সংস্কৃতি সম্বন্ধে। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন পরিবেশে আমার জন্ম হয়েছিল, কিন্তু তার কিছুই আমার আর মনে নেই।

প্রশ্ন :

হাসান:াংলা বা বাঙালি লেখকদের চেয়ে আপনার রচনা একদমই ভিন্ন। আমাদের সাহিত্য এখনো মোটের ওপর একরৈখিক ও কাহিনিপ্রধান। আপনার লেখার ধরন বৃত্তাকার, বিবরণ কখনো কখনো অপ্রত্যাশিত ও নিরাবেগ। এই প্রবণতা কতটা স্বতঃস্ফূর্ত, কতটা পরিকল্পিত?

রুমান: ফিকশন সব সময়ই ইচ্ছাকৃত একটি অনুশীলন। আমার এই বই তো আর ঠিক ‘রিয়েলিস্ট’ নয়। ফলে ভাষা ব্যবহারে স্বাভাবিকভাবেই আমার বর্ণিত কাহিনির প্রভাব পড়েছে। আর আপনি যে নিরাবেগের কথা অথবা কাহিনির বিবরণে আকস্মিকতার কথা বলছেন, তা সম্ভবত উপন্যাসের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়েছে। তবে তার বিচার আমি করতে পারি না।

প্রশ্ন :

হাসান:াংলাদেশে, নিজের শিকড় খুঁজতে যাওয়ার কোনো ভাবনা কি আপনার রয়েছে?

রুমান: আমি বহুদিন বাংলাদেশে যাইনি। এখন সেখানে যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। আমার সঙ্গে আমার সন্তানেরা রয়েছে। সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি একবারের জন্যও দেশের বাইরে যাইনি। ফিরে যেতে পারলে খুব ভালো হতো, কিন্তু এ মুহূর্তে বাইরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।