আত্মজীবনী লিখলে বন্ধুরা শত্রু হয়ে যাবে

৮ মে প্রয়াত হয়েছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। তখন প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ট্রিলজি উপন্যাস উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ লেখার আদ্যোপান্তসহ নিজের লেখালেখি প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আবুল বাসার

সমরেশ মজুমদার (১০ মার্চ ১৯৪২—৮ মে ২০২৩)
ছবি: খালেদ সরকার

প্রশ্ন :

আবুল বাসার: উত্তরাধিকার, কালবেলা কালপুরুষ—আপনার পাঠকপ্রিয় তিন উপন্যাস। প্রথমেই জানতে চাই, উত্তরাধিকার লেখার ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ ঘটনা কি আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছিল?

সমরেশ মজুমদার: আমি তখন দেশ পত্রিকায় ছোটগল্প লিখতাম। এখানে প্রথম গল্প ছাপা হওয়ার পর আনন্দবাজার পত্রিকায় গল্প লিখে পেলাম পনেরো টাকা। 

লিখতে লিখতে দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষ একদিন আমাকে বললেন, ‘এবার তাহলে একটা ধারাবাহিক উপন্যাস শুরু করো।’ শুনে প্রথমে আমি আঁতকে উঠলাম। তাঁকে বললাম, ‘আমি লিখতে পারব না।’ এতে খুব অবাক হলেন তিনি। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পারবে না কেন?’ বললাম, ‘ধারাবাহিক উপন্যাস তো বিশাল আকারের। অত লিখতে গেলে আগে আমাকে পাহাড়সমান জানতে হবে। লেখার জন্যও চাই ঢের সময়। সাত-আট পাতার লেখা আমি লিখতে পারি, কিন্তু অনেক পাতা লিখব কীভাবে? আর অত পাতা লেখার জন্য গল্পও তো থাকা চাই জুতসহ।’

 সাগরদা আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘দিন কয়েক ভাবো যে তুমি পারবে কি না। নিজেকে নিয়ে লেখার কথা ভাবো। তোমার ছেলেবেলা, বন্ধু, পরিবার—এদের নিয়ে লেখার কথা ভাবো। তারপর এসে না হলে আমায় বলে দিয়ো।’ 

দুদিন ধরে ভাবলাম। প্রতিদিন সকালে আমি জলপাইগুড়ির চা–বাগানে যেতাম। সেখানে দেখতাম, প্রচুর শেফালি ফুল ফুটেছে। একটা বাচ্চা মেয়ে সেই শেফালি ফুল কুড়োচ্ছে। এভাবে মাথায় আস্তে আস্তে একটা গল্প আসতে শুরু করে। আমার মনে হয়, হয়তো এসব মিলিয়ে কিছু একটা লিখতে পারব আমি।

প্রশ্ন :

বাসার: এই ট্রিলজি উপন্যাসের মূল উপজীব্য উপমহাদেশের বামধারার রাজনীতি। নানা কারণেই সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে উপন্যাস লিখতে   সাহস করেন না লেখকেরা। আপনি করলেন কেন? এ কারণে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন?

সমরেশ: কালবেলা হলো অনিমেষ নামের একটি ছেলের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বের হয়ে নকশাল হয়ে যাওয়ার গল্প। শুরুতে সে কংগ্রেসে ছিল। কংগ্রেসকে সেকালে সবাই অনুসরণ করতে চাইত। ‘বন্দে মাতরম’ বললে গায়ে কাঁটা দিত। 

১৯৮২ সালের দিকে যখন আমি এসব লিখছি, তখন পশ্চিম বাংলাজুড়ে চলছে বামফ্রন্টের রাজত্ব। কট্টর রাজনীতি যাকে বলে আরকি। সিপিএম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে অনিমেষ। আবার সে নানাভাবে পর্যুদস্ত করছে কংগ্রেসের কর্মীদেরও। 

কালবেলার এমন নানা দিক নিয়ে সবাই আমাকে বলেছিল যে এবার পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। নানা রকম বাহানা দিয়ে আমাকে নাকি জেলে পুরে রাখবে। কিন্তু কেন জানি না ওরা একদম চুপচাপ থাকল।

এর আগে যখন উত্তরাধিকার বের হলো, তখন বামফ্রন্টের একজন বয়স্ক ক্ষমতাবান নেতা আমার বাড়িতে এসে বলেছিলেন, ‘আপনি উপন্যাসে পশ্চিম বাংলায় কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তার গল্প লিখুন। তাহলে আমরা সরকার থেকে দশ হাজার কপি কিনে নেব।’ তখন এ উপন্যাসের দাম ছিল মাত্র ত্রিশ টাকা। আমি মহোৎসাহে আমার প্রকাশক  ব্রজেন্দ্রকুমার মিত্রের কাছে ছুটে গেলাম। উপন্যাসটি সে সময় ছয় মাসে মাত্র আড়াই শ কপি বিক্রি হয়েছে। আর দশ হাজার কপি চোখের পলকে বিক্রি হবে! তখন প্রতি বইয়ে ২০ শতাংশ রয়্যালিটি পেতাম। সে হিসাবে আমাকে প্রতি বইয়ের জন্য প্রকাশক দিতেন ছয় টাকা। দশ হাজার কপি একবারে বিক্রি মানে তো একসঙ্গে অনেক টাকা—এটা আমার মাথার ভেতর ঘুরছিল।

তো প্রকাশককে বলতেই আমার দিকে নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে থেকে তিনি বললেন, ‘বইটাকে তুমি তাহলে মেরে ফেলতে চাইছ?’ আমি বললাম, ‘মানে? সেটা কী রকম?’ এবার আমাকে তিনি খুলে বললেন, ‘সরকার যদি এভাবে বইটা কিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলোয়, তাহলে মানুষ ভাববে এটা কমিউনিস্ট পার্টির প্রচারপত্রমাত্র। তখন মানুষ আর তোমার বই পড়ার জন্য কিনবে না।’ 

পরে যখন বইয়ের বিক্রি এক লাখ ছাড়াল, তখন ওনার কথা আমার খুব মনে পড়েছিল।

আমি আসলে কারও জন্য লিখি না, আমি শুধু আমার নিজের জন্য লিখি।

প্রশ্ন :

বাসার: উত্তরাধিকার–এর অনিমেষের বেড়ে ওঠা বা পরিবেশ–পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে আপনার শৈশব-কৈশোরের অনেক মিল। অনিমেষের মধ্যে আপনার ছায়া কতখানি?

সমরেশ: অনিমেষের মানসিকতার সঙ্গে আমার কিছুটা মিল আছে। তবে জীবনযাপন পদ্ধতি কিন্তু একেবারে আলাদা রকমের। যেমন ধরুন, আমাদের বাড়ির পেছনে একটা নদী আছে, একদমই হাঁটুপানি সেখানে। আর উপন্যাসের অনিমেষের বাড়ির পেছনেও নদী ছিল। তাতে লাল-নীল মাছ দেখা যেত। 

আবার আমার দাদু খুব কড়া ধাঁচের আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। ভোর চারটায় উঠে মর্নিং ওয়াক করতে বের হতেন। আমাকেও সঙ্গে যেতে হতো। তখন আলোও ফুটত না ঠিকমতো। দাদু আগে আগে হাঁটতেন আর আমি তাঁর পিছে। দাদুকে সেই সময় খুব ভয় পেতাম। তাঁর প্রতি ভালোবাসাও ছিল প্রবল। অবশ্য জীবনের প্রথম গালিটা আমি আমার দাদামশাইকেই দিয়েছিলাম। এসব অনুষঙ্গ হয়তো অনিমেষের ভেতরও আছে।

প্রশ্ন :

বাসার: তাহলে কালবেলার অনিমেষ আর মাধবীলতার মধ্যে আপনার জীবনের ছায়া আছে?

সমরেশ: না। পুরোপুরি তা বলা যাবে না। আমার এক বন্ধু ছিল শৈবাল মিত্র। লেখালেখি করত। জেলে গিয়েছিল কয়েকবার। নামকরা নকশাল নেতা ছিল। অনিমেষ চরিত্রটি ওর সঙ্গে কিছুটা মেলে। কিন্তু অনিমেষের একটা পা খোঁড়া ছিল। শৈবালের তেমনটা নয়।

আর মাধবীলতা পুরোটাই আমার কল্পনা। বাস্তবে এমন একটা মেয়ে থাকলে ভালো হতো।  

দেশ–এ যখন এ উপন্যাস পুরোদমে লিখছি, তখন আমার মাথায় খেলা করল যে মাধবীলতা মা হয়েছিল বিয়ে ছাড়া। ওদের তখন মা–বাবার সঙ্গে মধ্যবিত্ত পাড়ায় থাকার মতো অবস্থা ছিল না। ওরা আশ্রয় নেয় বস্তিতে। সেখানেই অনিমেষ যখন জেল থেকে ফিরে এসে দেখল, মাধবীলতার একটা তিন বছরের বাচ্চা আছে, কাঁপা কাঁপা গলায় তাকে সে বলল বিয়ের কথা। তখন মাধবীলতা তাকে বলে, ‘এই কথা আরেকবার বললে এর চেয়ে বেশি অপমান আমার আর কিছুতেই হবে না। যে রাতে আমরা একসাথে ছিলাম, সেই রাতেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে মনে মনে।’ এ পর্যন্ত তো ঠিকমতো লিখলাম। 

কিন্তু এরপর ঠিক এগোতে পারছিলাম না। আমার বন্ধুরা তো বটেই, পরিচিত সিনিয়র লেখকেরাও বললেন, ‘সমরেশ, তুমি তো নিজের কবর নিজে খুঁড়লে।’ বললাম, কেন? তাঁরা বললেন, ‘তুমি জানো না, বাঙালি কতটা কনজারভেটিভ জাত। আর মেয়েরা তো আরও বেশি কনজারভেটিভ।’ তখন সবাই পই পই করে বলল, এই বই একেবারে বিক্রি হবে না। বাঙালি এসব একটুও মেনে নেবে না। 

এর পরের ঘটনা সবার জানা, দুই বাংলা মিলিয়ে নকল কপি ছাড়াই উপন্যাসটির দুই-তিন লাখ কপি বিক্রি হলো। কালবেলার মাধবীলতার জন্য মাঝেমধ্যে আমি বাংলাদশ থেকেও চিঠি পাই।

প্রশ্ন :

বাসার: এই ট্রিলজির অংশ হিসেবে দীর্ঘ বিরতির পর লিখলেন মৌষলকাল। এত বিরতি নিলেন কেন?

সমরেশ: মাঝেমধ্যেই আমার কাছে চিঠি আসত, অর্কের কী হলো? অর্ক তো জেলে গেল। অনিমেষ আর মাধবীলতার সম্পর্কের শেষ কি হবে?  

প্রায় ২৮ বছর পর আমি আবার লিখতে শুরু করলাম। এরই মধ্যে সামাজিক–রাজনৈতিকভাবে অনেক কিছুই বদলে গেছে। যেসব মানুষকে বিপ্লবী রাজনীতির মানুষ হিসেবে চিনতাম, তাঁরা দারিদ্র্য আর স্বার্থের কারণে রাজনীতি ভুলে গেছেন। আগুনের বদলে তাঁদের চোখভর্তি হতাশার দৃষ্টি। অন্যদিকে যাঁরা একটু স্বাবলম্বী হয়েছেন, তাঁরা পেছন ফিরে রাজনীতির কথা ভাবেননি। আমি পুরো ঘটনাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম অনিমেষের সেই জলপাইগুড়ির বাড়িতে। আমার মনে হয়, সব জীবন এক রকম হয় না। সব নদী ছুটে গিয়ে সব সময় সমুদ্রে মেশে না, মাঝপথে শুকিয়ে যায় স্রোত হারিয়ে কিংবা পথ হারিয়ে মিলে যায় অন্য কোনো অববাহিকায়।

প্রশ্ন :

বাসার: এই ট্রিলজিতে অনিমেষ-মাধবীলতা বা তাদের ছেলে অর্ক, সাতকাহন–এ দীপাবলী কিংবা গর্ভধারিণীতে একদল তরুণ–তরুণী—এই চরিত্রগুলোর মধ্যে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। সমাজ পরিবর্তনের তাগিদে তাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখি। আপনার নিজের মনেও কি সব সময় এমন কোনো তাগিদ কাজ করে?

সমরেশ: যখন আমার চার বছর বয়স, তখন বিধবা পিসিমা ও দাদুর সঙ্গে আমাকে রেখে জলপাইগুড়ি থেকে মা–বাবা বাইরে কোথায় যেন গেলেন। আমার পিসিমা বিধবা হয়েছিলেন বারো বছর বয়সে। সে সময় আমার কেবলই মনে হতো, পিসিমা আবার বিয়ে করলেই পারতেন। আমি ওঁর বড় হলে পিসিমাকে আমিই হয়তো বিয়ে দিতাম। এই ব্যাপারগুলো শৈশব থেকেই আমার ভেতরে কাজ করত।

সাতকাহন–এ দীপাবলীকে আমি বিধবা দেখিয়েছি। তাকে মাছ খাওয়ানোর চেষ্টা করায় সে বমি করতে থাকে। আসলে দীপাবলীর মধ্যে আমি আমার সেই পিসিমাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

জলপাইগুড়িতে আমাদের বাড়ির পাশে ১৪ বছর বয়সী একটা মেয়ে ছিল। হঠাৎ তার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের ১০ দিনের মাথায় বিধবা হয়ে ফিরে এল মেয়েটি। তখনকার সময়ে কোনো মেয়ের বর মারা গেলে সে হাপুসহুপুস করে কাঁদত। মা–বাবা ছোট মেয়ের কথা চিন্তা করে তাকে ফিরিয়ে আনত। ওদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও মেয়েটিকে ছাড়াতে পারলেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলত। এমনই ছিল সামাজিক অবস্থা। 

তো আমি আমাদের পাশের বাড়ির সেই মেয়েটার বিয়ে দেখেছিলাম। সবাই কী হাসিখুশি! বরের বাড়িতে যাওয়ার সময় মেয়েটা কান্না শুরু করলে তার মা বলেছিল, ‘কাঁদছিস কেন? সাত দিন পরেই তো আবার ফিরে আসবি।’ ওই যে সাত দিন পর নতুন জামাই-বউ ঘুরতে আসে না, সেটাই বুঝিয়েছিল আরকি। মেয়েটি সাত দিন না বারো দিন পর ফিরল বিধবা হয়ে। দৃশ্যটি এখনো আমার চোখে ভাসে। দীপাবলী চরিত্রে ওই মেয়েটার কিছুটা প্রভাবও ছিল বোধ হয়।

প্রশ্ন :

বাসার: ২০০০ সালের দিকে ‘কইতে কথা বাধে’ শিরোনামের একটি কলাম লিখতে শুরু করলেন আপনি। পরে আবার লিখলেন ‘বাঙালির নষ্টামি’। এতে সমসাময়িক অনেক লেখক-প্রকাশক সম্পর্কে আপনার সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। হঠাৎ এ ধরনের লেখা লিখলেন কেন?

সমরেশ: দেখুন, প্রত্যেক মানুষের কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার থাকে, যা থেকে তাকে বেশ ভালোভাবে চেনা যায়। তসলিমা নাসরিন, যিনি আমাকে অত্যন্ত অপছন্দ করতেন, তাঁকে কিন্তু আমি চিনতামই না। 

বাংলাদেশের ঢাকা ক্লাবে একদিন রাত নয়টায় তিনি এলেন। সবার সামনেই আমাকে তাঁর বাসায় চা খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। তত দিনে তাঁর সম্পর্কে আমি জানতে শুরু করেছি। তাঁর নির্বাচিত কলাম পড়লাম। তাঁর বিষয়ে লিখতে গেলে আমার সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপ নিয়ে লিখতে হয়। তখন তিনি কী অবস্থায় ছিলেন, তাঁর গলার স্বর কেমন ছিল এবং ঢাকা ক্লাব থেকে বেরিয়ে তিনি যখন গাড়িতে উঠছেন, তখন তাঁর সঙ্গে কেউ ছিলেন কি না—সবকিছু তো আমাকে পাঠকদের বলতে হবে। আমার এই লেখাগুলো দেখে তসলিমার ঠিক পছন্দ হলো না। 

বাংলাদেশের বইমেলায় একবার পার্ল পাবলিকেশনস থেকে আমার বই বের হলো। একই প্রকাশনা থেকে তসলিমারও বই বের হয়েছিল। কিন্তু মেলায় এসে দেখি, কোনো এক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁর ওপর খেপে আছে। ওদের ভেতরে একজন এসে আমাকে হাতজোড় করে বলল, ‘আপনি এখান থেকে বের হয়ে যান। সমস্যা হবে।’ আমি বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা গন্ডগোল হতে চলেছে। তসলিমাকে বললাম, ‘ছেলেরা আমাকে বের হয়ে যেতে বলেছে। বোধ হয় কিছু সমস্যা হবে। আপনিও চলুন।’ তিনি উত্তর করলেন, ‘আমার ভয় নেই। আপনার ভয় থাকলে আপনি বের হয়ে যান।’ 

বেরিয়ে আসার পর আমি শুনলাম বোমা ফাটার আওয়াজ। সন্ধের আলো নিভে গেল। একটু পর দেখলাম, পুলিশ তসলিমাকে প্রতিরক্ষা দিয়ে নিয়ে গেল। ওঁর জামাকাপড় প্রায় ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড়। 

আমি সেটা নিয়ে লিখলাম। তসলিমা আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার সাহসটা দেখেছেন আপনি? জাতীয় সব পত্রিকা এ খবর প্রচার করেছে।’ তাঁকে আমি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললাম, ‘প্রচারের জন্য তাহলে আপনি এসব করলেন?’ এগুলো লেখা ঠিক না বেঠিক, সেটা নিয়ে আপনারা আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন। কিন্তু আমি যা দেখেছি, তা–ই লিখেছি।

প্রশ্ন :

বাসার: কখনো পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী লিখতে চান? 

সমরেশ: আমি লিখলে সত্য কথা লিখব। আমার আত্মজীবনী যদি সত্যাবলম্বনে লেখা হয়, তাহলে আমার বন্ধুরা শত্রু হয়ে যাবে। সে কারণেই লেখা হয়ে উঠবে না। 

প্রশ্ন :

বাসার: আশি–নব্বইয়ের প্রজন্ম আপনার লেখা যেমন সাদরে গ্রহণ করেছিল, বর্তমান প্রজন্মের পাঠকেরা কি সেভাবে নিচ্ছে, আপনার কী মনে হয়? 

সমরেশ: আমি আসলে কারও জন্য লিখি না, আমি শুধু আমার নিজের জন্য লিখি।