হাসনাত আবদুল হাইয়ের সাক্ষাৎকার

কফিশপের তিন ঘণ্টা কেন বাসায় বসে ছয় ঘণ্টা লেখার সমান

হাসনাত আবদুল হাই ৮০ বছর পার হয়েছেন ৮ বছর আগে। কিন্তু অশীতিপর বললে যে ছবি মনে ভেসে ওঠে, সেটির সঙ্গে তাঁর মিল নেই। তাঁর প্রাণপ্রাচুর্য অফুরন্ত। লেখালেখিতে ব্যবহার করছেন নতুন প্রযুক্তি, বিকেলে-সন্ধ্যায় বসছেন কফিশপে, ফেসবুকে রয়েছেন দারুণ সক্রিয়। এই কথাসাহিত্যিকের ঘর-বাহির ও লেখালেখির খোঁজখবর নিয়েছেন আলতাফ শাহনেওয়াজ

আলতাফ শাহনেওয়াজ:

আপনার বয়স এখন ৮৭ বছর। আসছে মে মাসের ১৭ তারিখে ৮৮ হবে। এই বয়সেও লেখালেখি, পড়াশোনা ও ফেসবুকে দারুণ সক্রিয় আপনি। আশির ওপরে বয়স হয়ে গেলে সাধারণত আমাদের বাঙালিরা যেখানে জীবন-সমাজ-সংসার থেকে নিজেদের খানিকটা গুটিয়ে নেন, সেখানে আপনার এই প্রাণশক্তির উৎস কী?

হাসনাত আবদুল হাই: আমার প্রাণশক্তির উৎস হলো, জীবন সম্পর্কে অপরিসীম কৌতূহল। কৌতূহলই আমাকে এ পর্যন্ত টেনে এনেছে। মানুষ সম্পর্কে আমার কৌতূহলের শেষ নেই। কৌতূহল থেকে আসে পর্যবেক্ষণ। গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি না থাকলে লেখক হওয়া যায় না।

একদিনের ঘটনা বলি শোনো। আমার মোবাইলটা হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল। ধানমন্ডিতে গ্লোরিয়া জিনস যেখানে, সেখানে স্যামসাং মোবাইলের একটা দোকান আছে। ভাবলাম, সেখানে যাই। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের শেষ মাথায় আই হসপিটালের ওখান থেকে ফুটপাত ধরে হাঁটছিলাম। তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হঠাৎ দেখি ফুটপাতে একটা লোক কাপড় বিছিয়ে কী যেন বিক্রি করছে। আমি তাকে বললাম, আচ্ছা ভাই, এখানে গ্লোরিয়া জিনসটা কোথায়? সে বলল, এই তো সামনে। হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা যাওয়ার পর আমার মনে হলো, আরে, এ তো সাধারণ হকার নয়! সাধারণ হকারের পক্ষে গ্লোরিয়া জিনসের নাম জানার কথা না। আমি আবার ফিরে গেলাম তার কাছে। দেখলাম, লোকটার চোখেমুখে একধরনের লজ্জা, কুণ্ঠিত হয়ে আছে যেন। কাপড় বিছিয়ে যেসব জিনিস বিক্রি করছে—চিরুনি, টুথপেস্ট, আয়না—তাতে মনে হলো, সে মোটেও প্রফেশনাল হকার না। বুঝলাম, লোকটা মধ্যবিত্ত। খুব আর্থিক সংকটে পড়েছে। ঈদের আগে হাজার দুয়েক টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়েছে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। আমার প্রয়োজন নেই, তবু তার কাছ থেকে এটা-সেটা কিনলাম। এই যে আমি লোকটার শ্রেণি চিনলাম, তার বর্তমান পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পারলাম, এটা সম্ভব হয়েছে আমার কৌতূহল আর পর্যবেক্ষণশক্তির কারণে। কৌতূহল ছাড়া কোনো মানুষ লেখক হতে পারে না, শিল্পী হতে পারে না।

হাসনাত আবদুল হাই
ছবি: সৈয়দ লতিফ হোসাইন
আলতাফ শাহনেওয়াজ:

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যবেক্ষণশক্তিও বাড়ে নিশ্চয়।

হাসনাত: অবশ্যই বাড়ে। আমার যত বয়স বেড়েছে, তত ম্যাচিউরড হয়েছি। পর্যবেক্ষণশক্তি বেড়েছে। প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। তবে শুধু প্রতিভা নিয়ে জন্মালেই হয় না। সেটির চর্চা করতে হয়। তো সেই চর্চা আমি করেছি। ছোটবেলা থেকে প্রচুর বই পড়েছি। লেখক হতে চাই—এটা আমার মধ্যে কখনোই ছিল না। লেখালেখি আমার একটা শখ ছিল। তারপর ধীরে ধীরে একসময় সেটা অবসেশন হয়ে গেল। বুঝলাম, লেখালেখিই আমার দ্বিতীয় সত্তা। আমি সরকারি চাকরি করতাম, সেটা আমার প্রথম সত্তা। আসলে আরও পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, সমান্তরাল সত্তা। দ্বিতীয় সত্তা বললে ভুল হবে। লেখালেখি ও চাকরি—দুটো সত্তা সমান্তরালেই ছিল।

আগেও লিখতাম, তবে ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হলো, তারপর আবার আমার লেখালেখি পূর্ণোদ্যমে শুরু হলো। আসলে বাংলাদেশ হওয়ার পরে আমার লেখকসত্তা বিকশিত হয়েছে। লেখক হিসেবে আমার যে নবজন্ম হলো, সেটা বাংলাদেশের জন্মের কারণেই। নতুন দেশ হওয়ার পর যে সৃষ্টির জোয়ার শুরু হয়েছিল, তা আমাকেও স্পর্শ করেছিল।

ধানমন্ডির এই কফিশপে বসেও লেখেন হাসনাত আবদুল হাই
ছবি: সৈয়দ লতিফ হোসাইন, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
আলতাফ শাহনেওয়াজ:

আপনার এখনকার প্রতিদিনের জীবনযাপন নিয়ে যদি বলতেন।

হাসনাত: আমি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি ২০০০ সালে। মানে ২৪ বছর হয়ে গেছে। তো অবসর নেওয়ার পর জীবনযাপনের একধরনের রুটিন তৈরি হয়েছিল। তখন আমার স্ত্রী বেঁচে ছিলেন। সে সময় লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিয়ে প্রায়ই পার্টি দিতাম। আমার স্ত্রী নানা ধরনের খাবারের আয়োজন করতেন। আমি তখন প্রচুর পড়তাম আর লিখতাম। মাঝেমধ্যে বিলাসিতা করতে সোনারগাঁও হোটেলে যেতাম কফি খেতে। কফির দাম ছিল ৫০ টাকা। ওখানে একটা টেবিলে বসে কফি খেতাম আর লিখতাম। অনেক গল্প-উপন্যাস-কলাম আমি সোনারগাঁওয়ে বসে লিখেছি। এই রুটিন চলেছে অনেক দিন।

এরপর ২০১২ সালে আমার স্ত্রী মারা গেলেন। তখন আমার মধ্যে একধরনের বিষণ্নতা ভর করল। লেখালেখি ভালো লাগে না। প্রতিদিন চলে যাই কবরস্থানে। এভাবে প্রায় দুবছর ছন্নছাড়া অবস্থায় ছিলাম। এরপর আস্তে আস্তে নিজেকে স্থির করি। গবেষণাভিত্তিক লেখালেখিতে মন দিই। তার পর থেকে আমার রুটিন হয়ে গেল ডাইনিং টেবিলে বসে লেখা। যেহেতু আমার স্ত্রী নেই, বাসায় পার্টির আয়োজন নেই, সেভাবে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। তাই সেখানে বসেই লিখতে শুরু করলাম।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়। আমার জীবনের রুটিনও বদলেছে। অবসর নেওয়ার পর খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম। তারপর লেকের পাড়ে হাঁটতে যেতাম। সেখান থেকে ফিরে চা-কফি-নাশতা সেরে লিখতে বসতাম। আর এখন আমার রুটিন হলো, সকাল ১০টার দিকে ঘুম থেকে ওঠা। তারপর নাশতা করে আবার ঘুমাই। দুপুরের দিকে উঠি। তারপর লাঞ্চ করে লেখালেখি শুরু করি। ওই ডাইনিং টেবিলে বসেই লিখি। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে একটা কফি শপ আছে, কখনো কখনো সেখানে চলে যাই লিখতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত লিখি। আবার বাসায় ফিরে কখনো রাতেও লিখি। রাত ১০টা-১১টার দিকে ডিনার করি। তারপর ঘণ্টা দুয়েক টেলিভিশন দেখি। ১টার দিকে ঘুমাতে যাই। এ জন্য এখন ভোরবেলা উঠতে পারি না। রাতে আমার ঘুম ঠিকমতো হয় না বলে দুপুর পর্যন্ত ঘুমাই। তবে আমার সময় এখন আমার নিয়ন্ত্রণে। যখন বড় ধরনের লেখার চাপ থাকে, তখন রুটিন পাল্টে ফেলি।

আলতাফ শাহনেওয়াজ:

বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ঈদসংখ্যায় একাধিক গল্প-উপন্যাস লিখছেন। এবারও চারটি উপন্যাস, একটি ভ্রমণকাহিনি ও একাধিক গল্প লিখেছেন। এত লেখা কীভাবে লেখেন?

হাসনাত: আমি জানি, অন্তত দুটো পত্রিকা ঈদসংখ্যার জন্য আমার কাছে লেখা চাইবেই। এ জন্য দুটো উপন্যাসের প্রস্তুতি আমার আগে থেকেই থাকে। আগেই দুটো উপন্যাস লিখে ফেলি আমি। আর ডায়েরিতে অসংখ্য নোট, গল্পের প্লট লিখে রাখি। এ জন্য লেখা নিয়ে আমাকে ভাবতে হয় না। শুরু করলেই তরতর করে এগিয়ে যায়। কারণ, উপন্যাসের পুরো স্কেচ আগে থেকেই করা থাকে আমার। ফলে কোনো উপন্যাস লিখতেই এ পর্যন্ত আমার দুই মাসের বেশি সময় লাগেনি।

হাসনাত আবদুল হাই
ছবি প্রথম আলো
আলতাফ শাহনেওয়াজ:

আমাদের দেশে প্রবীণ যাঁরা আছেন, প্রযুক্তি নিয়ে তাঁদের মধ্যে একধরনের অনীহা কাজ করে। তবে আপনার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো, প্রযুক্তিকে আপনি জীবনের অংশ করে তুলেছেন। যেমন এখন আপনি ট্যাবে লেখেন। কবে থেকে ট্যাবে লেখা শুরু করলেন এবং কেন শুরু করলেন?

হাসনাত: আমার একজন টাইপিস্ট ছিল। আমি কাগজে-কলমে লিখতাম, সে এসে কম্পিউটারে কম্পোজ করে দিয়ে যেত। কখনো ডিকটেশন দিতাম, সে লিখত। ঝামেলা বাধল করোনার সময়ে। সে তো আর আসতে পারে না। পরে করোনা শেষ হলেও ছেলেটা আর এল না। অন্য কোথাও ভালো চাকরি–টাকরি হয়েছিল সম্ভবত। আমার ভাইয়ের ছেলে তখন বলল, আপনি একটা ল্যাপটপ নেন। ল্যাপটপ কিনলাম। কিন্তু দেখি, ওটাও তো কম্পিউটারের মতো। ব্যবহার করতে জানি না। বেশ জটিল মনে হলো। তখন আমার ভাতিজা বলল, আপনি ফেসবুকে লেখেন, ঠিক ফেসবুকে লেখার মতোই আপনি ট্যাবে লিখতে পারবেন। ওখানে নোট বলে একটা অপশন আছে। নোটে আপনি লিখতে পারবেন। এভাবে আমার ট্যাবে লেখা শুরু। দুই বছর ধরে ট্যাবে লিখছি। এ জন্য আমার লেখালেখির পরিমাণও বেড়ে গেছে। সুতরাং মনে রাখতে হবে, প্রবীণেরা বিপদে পড়লে সবই শিখতে পারে।

আলতাফ শাহনেওয়াজ:

কফিশপে বসে আপনি যে লেখেন, এতে কি বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়া যায়?

হাসনাত: সুবিধা অবশ্যই কিছুটা রয়েছে। যেমন বাসায় একটা ঢিলেঢালা ভাব থাকে—একটু উঠে চা খেলাম, টেলিভিশনে খবর দেখলাম, একটু বারান্দায় গেলাম—এভাবে মনোযোগ বাধাগ্রস্ত হয়। নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখা যায় না। কিন্তু কফিশপে অখণ্ড মনোযোগ ধরে রাখা যায়। আর ওখানে সারা দিন তো একটা টেবিল দখল করে বসে থাকা যায় না। আপনি যতই খরচ করুন না কেন, ব্যাপারটা তো দৃষ্টিকটু। সুতরাং লেখা শেষ করে টেবিল ছেড়ে দেওয়ার একটা তাগিদ থাকে নিজের মধ্যে। ফলে ওখানে যে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় কাটাই, সেটা বাসায় বসে ছয় ঘণ্টা লেখার সমান।

হাসনাত আবদুল হাই
ছবি প্রথম আলো
আলতাফ শাহনেওয়াজ:

নিজের লেখালেখি নিয়ে তো বটেই, এর পাশাপাশি যেসব বই পড়েন, সেগুলো নিয়ে নিয়মিত ফেসবুকে লিখছেন আপনি। আপনার এ কাজের পেছনে কোন প্রণোদনা কাজ করে? বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাহিত্য নিয়ে আপনার বোঝাপড়া কী?

হাসনাত: বাংলাদেশের সাহিত্যে দুটো ইভেন্ট বড় ধরনের অবদান রেখেছে। একটি হলো বইমেলা, আরেকটি ঈদসংখ্যা। ঈদসংখ্যার বেশির ভাগ লেখাই পরে বইমেলায় বই আকারে বের হয়। তাই আমি ঈদসংখ্যা পড়ি। লেখক হিসেবে আমার সমসাময়িকদের লেখালেখি সম্পর্কে তো আমাকে জানতে হবে। তারা আমার কমিউনিটি। তারা কী লিখছে, তা না জানলে আমি আমার গতিপ্রকৃতি ঠিক করতে পারব না। আমার লেখালেখি কিছু হচ্ছে কি না, তা–ও বুঝতে পারব না। এ জন্য আমি সমসাময়িক লেখকদের লেখা পড়ি। আর নতুনদের লেখা পড়া আমার দায়িত্ব মনে করি। একই সঙ্গে সেসব লেখা সম্পর্কে অন্যকে জানানোও নৈতিক দায়িত্ব মনে করি। এ জন্যই ফেসবুকে পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখি।

আমাদের নতুন প্রজন্মের কথাসাহিত্যিকেরা, কবিরা প্রচুর লিখছেন। অনুবাদকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে—এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মননশীল সাহিত্য, গবেষণাভিত্তিক লেখা খুব কম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। গল্প-উপন্যাসও প্রচুর লেখা হচ্ছে। কিন্তু খুব কম লেখাতেই আমি নতুন আঙ্গিক দেখতে পাচ্ছি, নতুন বিষয় দেখতে পাচ্ছি। ভাষা নির্মাণও কেউ করছে না। আঙ্গিক ও ভাষা নির্মাণের দিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে কবিতায় আমরা খুব এগিয়ে গিয়েছি।

আলতাফ শাহনেওয়াজ:

আপনার লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাই, এখন কী লিখছেন?

হাসনাত: চীন দেশে আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি। সেটা নিয়ে ‘চীন দেশে, কয়েকবার’ নামে একটা ভ্রমণ-প্রবন্ধ লিখছি। এটা শেষ করতে এ মাস লেগে যাবে। কারণ, এটা নিছক ভ্রমণকাহিনি নয়। এর সঙ্গে চীনের ইতিহাস-ঐতিহ্য জুড়ে দিচ্ছি। এ জন্য অনেক পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এটা লেখা শেষ হলে ‘চার পুরুষ’ নামে একটা বড় ক্যানভাসের উপন্যাস লিখতে বসব। সম্ভবত এটা হবে আমার লেখা সবচেয়ে বড় উপন্যাস। এর প্রেক্ষাপট হলো, বাঙালি মুসলমান কীভাবে কৃষক থেকে নাগরিক হয়ে উঠলেন। আমাদের দেশের ৯৯ শতাংশ মুসলমানের শিকড় খুঁজলে দেখা যাবে, তাঁদের পূর্বপুরুষ কৃষক ছিলেন। বিষয়টা চার প্রজন্ম ধরে পারিবারিক একটা গল্পের মাধ্যমে দেখাতে চাই আমি। সামনের মাস থেকেই লেখাটা শুরু করব। হয়তো ছয় মাস থেকে বছরখানেক সময় লাগবে শেষ করতে। কারণ, উপন্যাস হলেও এর সঙ্গে ইতিহাস জড়িত। তাই গবেষণা করে লিখতে হবে।

হাসনাত আবদুল হাই
ছবি প্রথম আলো
আলতাফ শাহনেওয়াজ:

আপনার বিরুদ্ধে প্রায়ই একটা অভিযোগ শোনা যায়। সেটি হলো, আপনি একটু নাক উঁচু স্বভাবের…।

হাসনাত: তুমি আমাকে ৭ বছর হলো চেনো। ছবি তুলল যে সৈয়দ লতিফ হোসাইন, ওর সঙ্গে পরিচয় বছর দুয়েক হবে। আর এই যে ছেলেটি মারুফ ইসলাম, আজই প্রথম আমার বাসায় এসেছে এবং ঘণ্টাখানেক হবে আমার কথা শুনছে, আমার আচরণ দেখছে। তোমাদের তিনজনের মধ্যে কারও যদি মুহূর্তের জন্যও মনে হয়ে থাকে যে আমার নাক উঁচু, তাহলে আমাকে স্বীকার করতে হবে, সেই ধারণা সত্য।

আলতাফ শাহনেওয়াজ:

আপনি যখন ৮০ বছরে পড়লেন, সেই সময়ে ‘যখন অশীতিপর’ নামে একটা লেখা লিখেছিলেন, যেখানে বর্ণনা করেছিলেন বার্ধক্যের সৌন্দর্য। বার্ধক্যের সৌন্দর্য আসলে কোথায়?

হাসনাত: নিজেকে আমি বুড়ো মনে করি না। বয়স বাড়ছে, কিন্তু বুড়ো হচ্ছি না। আমি তরুণ ছিলাম, যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছি—এমন অনুভূতি আমার কখনোই হয় না। আমার শুধু মনে হয়, আমার বয়স বাড়ছে। বয়স বাড়ছে মানে আমি আরও পরিপক্ব হচ্ছি, আরও ম্যাচিউর হচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত জরাগ্রস্ত না হচ্ছি কিংবা শয্যাশায়ী না হচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত বয়স বাড়া একটা ইতিবাচক ব্যাপার। বার্ধক্যের সৌন্দর্য হলো আরেকটু বেশি প্রজ্ঞা ও আরেকটু বেশি স্থিতধী হওয়ায়।