নবনীতা দেবসেন। এক বর্ণময়, বিচিত্র ও ডানপিটে মানুষের নাম। সাহিত্যের অধ্যাপক, কবি, কথাসাহিত্যিক এসব পরিচয়ের বাইরেও তাঁর আরও পরিচয় ছিল। তাঁর বাবা নরেন্দ্র দেব আর মা রাধারানী দেবী দুজনই ছিলেন বিখ্যাত কবি। আর তিনি ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনের স্ত্রী। পরে অবশ্য তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে।
বলার মতো তথ্য হলো, নবনীতা দেবসেন ও তাঁর স্বামী অমর্ত্য সেন—দুজনেরই নাম রেখেছিলেন আরেক বাঙালি নোবেলজয়ী কবি। জানি, সেই কবির নামটি আপনারা এর মধ্যেই বুঝতে পেরেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দেওয়া ‘নবনীতা’ নামটা শৈশবে খুব একটা পছন্দ করতেন না নবনীতা। তাই প্রায়ই তিনি নিজেই নিজের নাম বদলাতেন। আত্মজীবনীমূলক বই ‘নটী নবনীতা’তে তিনি লেখেন,Ñ‘রবীন্দ্রনাথের দেওয়া হলে কী হবে, নবনীতা নামটা আমার একদম পছন্দ ছিল না। ওতে কোনো ছবিও নেই, বাজনাও বাজে না। স্কুলে যাওয়ার পথে একটা সাইনবোর্ড দেখতুম হাজরার মোড়ে—বীণাপাণি বিপণি। সারা দিনই নামটা কানের মধ্যে গুনগুন করে গানের মতো বাজত। একদিন বুদ্ধি করে আমার সব খাতা–বইয়ের মলাটে পুরোনো নাম কেটে দিয়ে, নতুন নাম লিখলুম কুমারী বীণাপণি বিপণি দেব।’
শেষমেশ দোকানের নামে নিজের নাম রাখলেন ছোট্ট নবনীতা। কারণ, সে বয়সে ‘বিপণি’ শব্দের অর্থ জানতেন না তিনি। এদিকে মেয়ের এহেন কাণ্ডে তাঁর মা–বাবা হেসেই কুটিকুটি। হেসেছিলেন অন্যরাও। তবে শিশু নবনীতা যখন জানলেন, বিপণি অর্থ হাট বা দোকান, তখন তিনি আর হাসতে পারলেন না। লজ্জায় লাল হয়ে গেল তাঁর একরত্তি মুখ। পরিণত বয়সে অবশ্য এ নিয়ে লজ্জা না করে কৌতুক করতেই পছন্দ করতেন তিনি। নিজেকে নিয়ে করতেন চমৎকার সব রসিকতা। ছোটবেলায় বীণাপণি বিপণি দেব ছিলেন বলে এটা যেন আরও সহজ হয়েছিল তাঁর জন্য।
সূত্র: নবনীতা দেবসেনের নটী নবনীতা
গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন