বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় কেন বনফুল হলেন?

বনফুল
ছবি: সংগৃহীত

লেখক বনফুলের পুরো নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কেন তিনি বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় থেকে বনফুল নাম ধারণ করলেন, এর পেছনে রয়েছে চমকপ্রদ এক গল্প।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বা বনফুলের বাবা ছিলেন চিকিৎসক। নিজের ছেলেকে তাঁর চেয়ে ভালো চিকিৎসক কিংবা উচ্চ পেশায় দেখতেই হয়তো ছেলেক খুব অল্প বয়সে তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন হোস্টেলে। হোস্টেলের কড়া অনুশাসনের মধ্যেই নানা ধরনের ‘আউট বই’ পড়তেন বলাই। থার্ড ক্লাস মানে অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন তিনি। ওই হোস্টেলেই সুধাংশু শেখর হালদার নামের তাঁর এক সিনিয়র ভাই ছিলেন, বলাইয়ের সঙ্গে তাঁর ছিল খুব ভাব। বলাই তাঁকে ‘বটুদা’ নামে ডাকতেন।

বলাইয়ের এমন সৃজনশীল লেখালেখি দেখে সেই বটুদা তাঁকে পরামর্শ দিলেন পত্রিকায় লেখা পাঠাতে। তখন বলাই আর তাঁর বটুদা মিলে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠাতে শুরু করলেন।

এরই মধ্যে মালঞ্চ পত্রিকায় বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের নামে ছাপা হয়ে গেল একটি কবিতা। স্কুলজুড়ে বলাইয়ের নাম হয়ে গেল কবি বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। সহপাঠী ও বন্ধুরা অভিনন্দন জানাতে লাগল তাঁকে। সবাই যখন খুব খুশি, তখনই এল বজ্রপাত, বলাইয়ের ডাক পড়ল প্রধান শিক্ষকের কামরায়। তিনি নিজেও কাব্যচর্চা করেন। তাঁর এক শিক্ষার্থী তাঁর মতোই কবি হয়ে গেছে, বিষয়টি হয়তো তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই হুংকার ছেড়ে বললেন, ‘তোমার বাবা যে পয়সা খরচ করে তোমাকে বোর্ডিংয়ে রেখেছেন, তা কি কবিতা লেখার জন্য?’

বলাই তখন খুব ঝামেলায় পড়লেন। ততক্ষণে লেখার পোকা ঢুকে গেছে তাঁর মাথায়। তাই ভাবলেন, এ বাধা পেরোতেই হবে। কোনোভাবেই থামা যাবে না। তখন আবার সেই বটুদার দ্বারস্থ হলেন তিনি। দুজন মিলে পরামর্শ করতে বসলেন, কী করা যায় তা নিয়ে। শেষমেশ বটুদা তাঁকে পরামর্শ দিলেন, ‘তুমি একটা ছদ্মনাম বের করো।’

বলাই নিজে গাছগাছালি আর অরণ্য পছন্দ করতেন। তাই নিজের নাম দিলেন বনফুল। সেই থেকে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় হয়ে গেলেন বনফুল। তরুণ বয়সে শনিবারের চিঠিতে ব্যঙ্গকবিতা লিখতেন বনফুল। তাঁর এসব কবিতা তখন অনেককেই খেপিয়ে তুলত। ফলে ছদ্মনামটি সে সময় তাঁর খুব কাজে দিয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বনফুল প্রায়ই রসিকতা করতেন। কবিও তাঁর সঙ্গে রসিকতা করতে ভালোবাসতেন। তাঁর ছদ্মনাম বনফুল নিয়েও রসিকতা করেছিলেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথকে একবার খোঁচা দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বনফুল। পরবর্তী সাক্ষাতে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘তোমার নাম বনফুল কে দিয়েছিল? তোমার নাম হওয়া উচিত ছিল “বিছুটি”। যা দুয়েক ঘা দিয়েছ, তার জ্বলুনি এখনো কমেনি।’

গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন

সূত্র: আনিসুজ্জামানের মহামানবের সাগরতীরে, প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ২০২১