‘অভিশপ্ত আগস্ট’-এর ১৫০তম মঞ্চায়ন ও আমার দুটো কথা

‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকের দৃশ্য

‘অভিশপ্ত আগস্ট’ শিরোনামে একটি হৃদয়গ্রাহী নাটক বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। নাটকটি মঞ্চায়নের উদ্যোগে ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটি। উপকমিটির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল নাটকটি মঞ্চায়নে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।

নাটকটির প্রযোজনায় ছিল ‘বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদল’। ইতিমধ্যে নাটকটি বাংলাদেশের প্রায় সবখানে মঞ্চায়িত হয়েছে এবং অগণিত নাট্যবোদ্ধার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে নাটকটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে অভিনীত হয়ে বিপুলভাবে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। এ পর্যন্ত নাটকটির ১৪৯টি প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে। ১০ জুন নাটকটির ১৫০তম মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে। এটি আমাদের নাট্যজগতের সবার কাছে বিশেষ আনন্দের।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিশেষ আগ্রহে ও অনুপ্রেরণায় পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুর রহমান জাহিদ নাটকটি রচনা করেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন।

আমি নাট্যভুবনের মানুষ হিসেবে নাটকটি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে দেখেছি এবং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। আমাদের সঙ্গে অনেকেই নাটকটি দেখছেন এবং এই হৃদয়বিদারক জাতীয় ট্র্যাজেডি তাঁদের সবাইকে আলোড়িত করছে এবং অশ্রুসিক্ত করেছে।

‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকের দৃশ্য

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা এ নাটকের মূল উপজীব্য।
এই বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। তখন জাতির পিতার বয়স ছিল মাত্র ৫৫ বছর। এই হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এর আগেও আমেরিকার আব্রাহাম লিঙ্কনসহ আমাদের উপমহাদেশের একাধিক রাষ্ট্রনায়ক আততায়ীর হাতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবারের সদস্যদের ওপর যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসে ইতিপূর্বে কখনো ঘটেনি।
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দুই কীর্তিমান কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে সেদিন নিস্তার পেয়েছিলেন।

সততা ও সত্যের মৃত্যু নেই। বর্তমানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশকে আলোর পথযাত্রী করে তুলেছেন।
প্রযোজনার কথায় ফিরে আসি। সেট, আলোকসম্পাত, শব্দসংগীত এবং সর্বোপরি অভিনয় পারঙ্গমতা নিয়ে সম্পূর্ণ নাটকটি আমাকে আলোড়িত করেছিল।
শিশু শেখ রাসেলকে হত্যা করার সময় তার অসহায় কান্না এই নাটকের সংলাপের মধ্য দিয়ে যেভাবে দৃশ্যায়িত হয়েছে, তা আজও আমাকে আবেগাপ্লুত করে।
আলোকসম্পাতের গুণে আলো-আঁধারির খেলাতে সম্পূর্ণ নাট্যক্রিয়া সত্যের মতো মনে হচ্ছিল দর্শকদের কাছে।

বঙ্গবন্ধুকে গুলিবিদ্ধ করার পরে তিনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়েন। এই নাট্য প্রযোজনায় শেখ মুজিবুর রহমানের তামাকের পাইপ সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। একজন মহানায়কের জীবনাবসানকে এভাবে প্রতীকীরূপে দেখানো হয়েছে, যা আমার কাছে অত্যন্ত শৈল্পিক ও নান্দনিক বলে মনে হয়েছে।

নাটকটি দেখতে দেখতে মনে পড়েছে, কর্নেল জামিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের খবর ফোনের মাধ্যমে জানতে পেরে সম্পূর্ণ ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় প্রতিরোধ করতে এসেছিলেন এবং পথেই ঘাতকদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন মনে করি। তাঁর সততা ও কর্মনিষ্ঠাকে আমি উদাহরণযোগ্য বলে মনে করি। এ নাটকে তাঁর সম্পর্কে কোনো একটি সংলাপ থাকলে ভালো হতো। যাহোক, এটা তেমন বড় কোনো স্খলন আমি মনে করি না।

‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকের দৃশ্য

‘অভিশপ্ত আগস্ট’কে আমি একটি সুচারু ও হৃদয়গ্রাহী নাট্যপ্রযোজনা হিসেবে বিবেচনা করি। এই নাটকের শব্দসংগীত এবং আলোর ব্যবহার এবং সর্বোপরি অভিনয়শৈলী আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে।

নির্দেশক জাহিদুর রহমান জাহিদকে আমি অভিনন্দন জানাই তাঁর এমন সুচারু ও হৃদয়গ্রাহী প্রযোজনা বাংলাদেশের নাট্যদর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমানকে এই নাটক বিষয়ে গবেষণা ও তথ্য সংকলনের জন্য সাধুবাদ জানাই।

বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে এই নাট্যপ্রযোজনার অগণিত প্রদর্শনী প্রত্যাশা করছি। এই নাটকের সব কলাকুশলী প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। যে জন্য আমি তাঁদের সাধুবাদ জানাই।

নাটকের জয় হোক।