বইয়ের বিক্রি বেড়েছে

করোনার দুঃসহ সময়ে বিশ্বব্যাপী বিক্রি বেড়েছে ছাপা বই ও ই-বুকের। গার্ডিয়ান ও বিবিসি ঘেঁটে জানাচ্ছেন মারুফ ইসলাম

লকডাউনে অনলাইন বুকশপের বেচাবিক্রি ছিল তুঙ্গে

করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যকে থমকে দিলেও করোনাকালে ব্যবসায়িক মহামন্দার ভেতরে বেড়েছে বইয়ের বিক্রি। অনলাইনে বই বিক্রির পারদও বিশ্বের সর্বত্র এখন ঊর্ধ্বমুখী।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ব্লুমসবারি জানিয়েছে, ২০০৮ সালের পর গত ছয় মাসে তাদের মুনাফা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। হ্যারি পটারের প্রকাশক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানের আয় লকডাউনের সময়ে ৬০ শতাংশ। শুধু ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত তারা আয় করেছে চার মিলিয়ন পাউন্ড। এই আয় হয়েছে অনলাইনে বই বিক্রি ও ই-বুক থেকে। লকডাউনের সময়ে রেনি এদো লজের লেখা হোয়াই আই অ্যাম নো লংগার টেকিং টু হোয়াইট পিপল অ্যাবাউট রেস ও সারাহ জে মাসের লেখা ক্রিসেন্ট সিটি: হাউস অব আর্থ অ্যান্ড ব্লাড বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

ব্লুমসবারির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নাইজেল নিউটন বলেন, ‘গেল মার্চে যখন লকডাউন শুরু হলো, বাধ্য হয়ে তখন আমরা দোকানপাট বন্ধ করে দিলাম এবং ধরেই নিলাম, এ বছর আর ব্যবসা হবে না। এই বিপুল ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠব, তা নিয়ে ছিলাম ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরই দেখলাম, অনলাইনে আমাদের বইয়ের অর্ডার হু হু করে বাড়ছে। লকডাউনের পুরোটা সময় আমরা আয় করেছিলাম সাড়ে ৭৮ মিলিয়ন পাউন্ড। এটি অন্য যেকোনো স্বাভাবিক সময়ের আয়ের চেয়ে ছিল ১০ শতাংশ বেশি।’

লকডাউনের সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও চালু ছিল অনলাইন শিক্ষা। ফলে এই সময়ে পাঠ্যপুস্তক বিক্রির হারও বেড়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, লকডাউনের সময়ে ব্লুমসবারির ডিজিটাল রিসোর্স বিভাগের বিক্রি বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য বুকসেলার-এর সম্পাদক ফিলিপ জোন্স বলেন, ‘গত ছয় মাসে মানুষের বই কেনার আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এই সময়ে মানুষ সেই বইগুলোই কিনেছে, যেসব বইয়ের লেখক ভীষণ জনপ্রিয়, যাঁদের বই সহজেই অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় কিংবা যাঁদের ব্র্যান্ড ভ্যালু রয়েছে। আরও একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সাধারণত বড়দিন উপলক্ষে নভেম্বরে বইয়ের বিক্রি বাড়ে। কিন্তু এ বছর অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, নভেম্বরের বই অক্টোবরেই বিক্রি হয়ে গেছে। আগের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, নভেম্বরে প্রতি সপ্তাহে বই বাজারের বিক্রি ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত উঠত। কিন্তু এ বছর অক্টোবরেই ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে গেছে।’

মধ্য লন্ডনের বইয়ের দোকান ডান্ট বুকসের মহাব্যবস্থাপক রোজ কোল বলেন, ‘লকডাউনে আমাদের অনলাইন বুকশপের বেচাবিক্রি ছিল তুঙ্গে। এ সময় লন্ডন থেকে দূরবর্তী শহরগুলো থেকেই বেশি অর্ডার আসত।’

এ সময় ছাপা বইয়ের পাশাপাশি ই-বুকও বিক্রি হয়েছে প্রচুর। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের পর গত ছয় মাসে ই-বুক বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বছরের প্রথমার্ধে বিক্রি হয়েছে ১৪৪ মিলিয়ন পাউন্ডের ই-বুক, যা অন্য সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ সময় অডিও বই বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। মাত্র ছয় মাসেই বিক্রি হয়েছে ৫৬ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের অডিও বুক। এটি অন্য সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি।