গুমনামা
যদি গুমের কথাই বলি তো আমাকে বলতে হবে, বিষ্যুদবার দুপুরটা গুম হয়ে গেল! ট্র্যাজেডি, গুম-দুপুরের সন্ধানে আরও দুপুর স্রেফ গায়েব হয়ে গেল। যেভাবে অনেক কবিতাও গুম হয়ে গেছে, গুম-কবিতার সন্ধানে আরও কবিতা এসেছে, কিন্তু যা হারায়, এই বাংলায় তা কি আর ফিরে পাওয়া যায়? যে হারায়, তাকে আর খুঁজে ফেরার গল্প থাকে না। অর্থাৎ স্বপ্ন গুম হয়ে গেছে, এই বাংলায়। সম্ভাবনা আত্মসাৎ করেছে কেউ।
ভালোবাসা গুম হয়ে গেছে। গুম-স্বপ্নের সন্ধানে অনেক স্বপ্নের ডাক আমি উপেক্ষা করতে পারিনি, কিন্তু আমার গুম–স্বপ্নের কাছে আর পৌঁছতে পারিনি! সম্ভাবনার দিকে হাঁটতে হাঁটতে এত দিনে পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি! সত্যি যে, নীল গ্রহ থেকে নেমে আসা অহর্নিশ শিস-শিস ভালোবাসা, সেই ভালোবাসা গুম হয়ে গেলে আর কিছুই থাকে না। খারাপ লাগা থাকে, খারাপ লাগা আসে। সমস্ত খারাপ লাগা ঢেউ হয় নদীতে নদীতে, এই বাংলায়। সমস্ত খারাপ লাগা নেশামাতাল বৃষ্টি হয়ে যায়। বেঁচে থাকবার জন্য আমি বৃষ্টিদানা খুঁটে খুঁটে পান করি।
আর ক্রমাগত গুমের ইতিহাস বাড়ে। আমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় ১৯৭১ সালে। আমাকে গুম করা হয় তারও আগে কখনো যেমন, আমাকে গুম করা হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনেও, এক সন্ধ্যায় আমি হয়তো লিপিবদ্ধ করছিলাম গুম হওয়া মানুষের আর্তিময় সংলাপ, অধিকার ও আকাঙ্ক্ষার এপাশ-ওপাশ ভঙ্গি; ঠিক তক্ষুনি দূর–নিয়ন্ত্রিত কোনো স্যাটেলাইট আমাকে শনাক্ত করে: আমি ধরা খেয়ে যাই। আমাকে গুম করে নেয় একটি দুপুর, আমাকে গুম করে নেয় পুরোটা সন্ধ্যা। গুম করার নেশায় আমার দিকে ছুটে আসে বা আসতেই থাকে আমারই সময়!
ভিন্নমতে, গুম কি খুব খারাপ কিছু? মনে মনে কি আমি তোমাকে গুম করিনি? কাঞ্চন নদীর ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আমাকে তুমি এক মুহূর্তেই গুম করে দাওনি? শুধু তো শাদা পোশাকের হাওয়া মশাইরাই আমাকে গুম করে ফেলবে, এমনটাই একমাত্র নয়!
গুম চলছেই, চলবেই, এই বাংলায়। তবে গুমনামা রচিত হবে না আমাদের কবিতায়!