তখনি কচ্ছপ তুমি কখনো পুরুষ রহস্যের

অলংকরণ: অশোক কর্মকার

আসমান

হুসেন, কোথায় ডানা লুকানো আমার বলো আজ
এই যে আসমান এত বড়, যায় উড়ে ইগলেরা
পঙ্খীরাজ, পাঁচটা–দশটা তারার পাহারা ছিঁড়েটিড়ে
বৃষ্টি-বজ্র-প্রতিঘাত, সোনায় মোড়ানো দন্তরোগে।
আসমান এত যে বড়, তারো বড় মানুষের বুক
তবুও কোথায় ডানা আমার লুকানো পাতালের।
বক্ষ খুলে ধরা যদি যায় অসীমের সাদা আলো
আমাকেও মনে রেখো ধানখেতে পেশল যুবারূপে
শরীর যাহার স্তব জমিনের আর রমণীর
বসন্তের বিবরণী এই, লিখে রাখি, রক্তে রক্তে
ফুরাবে না কিছু জানি, ত্বক, চক্ষু, ব্রণ, পরাজয়
জিন্দেগির পুষ্প আর যত প্রস্তাবনা বেহেশতের
উড়ে যাবে ঘোড়া আহা হুসেন, সম্মুখে তোর একা

খুন-প্রলয়ের দিনে উঁচু করো মাথা, উঁচু করো;

শ্বেতরোগ

রমণীর খোঁপা থেকে মুক্তি পেয়ে হাসে কচ্ছপেরা
এই এক নীল দিন হুসেন, দায়িত্বহীন, ধৃত
শুধু গান শুনে যেতে হবে চিরকাল বসন্তের
দুখের দিবসে আর কোথায় লুকাবে নিঃস্ব হাতে।
বৃষ্টির হারমোনিয়াম বেজে যাবে দূর মহাশূন্যে
তুমি ঘোড়া তুমি শ্বেতরোগ তুমি চির দুখী জানি
কচ্ছপের পিঠে চড়ে বসো দিগ্‌বিদিক ছুটে যাও
যেনবা এতিম তারা বাবা নেই, মা–ও নেই কোনো।
ঔদার্যের খোঁপা থেকে নীলাভ জমিন জেগে ওঠে
রমণীরা কচ্ছপের মালিকানা ছেড়ে গেল মরে
বিস্তৃত সুখের দিন, হুসেন পতাকামতো ওড়ে...

বাতাসের সুলতানাত

আমার শস্যখেতের কসম, নক্ষত্ররাজি আর
ষাড়ের কসম, যত ক্ষার, অত্যুজ্জ্বল রমণীর
ত্বকে, ততোধিক শ্বেতরোগ এই কসমিক জঙ্গলে
বৃষ্টির দিবস ধুয়ে দিয়ে যাবে ডাকু দলপতি।
যার কানে পুষ্প ফেরেস্তা অধিক জেগে থাকে
তাকে দাও দেহ, বিনত মস্তক, অর্জিত পতাকা;
কোথাও ফোটেনি ক্ষত নীলাভ বসন্তে ধীরে ধীরে
সুলতানাত কার ভাসে বাতাসে, তাহাকে মনে রেখো

বায়েজিদ

কার চোখে তুমি দৃঢ় অথবা সুন্দর বায়েজিদ
কোথায় কচ্ছপ তুমি মাজারে মাজারে ঘোরাঘুরি
কচ্ছপের রূপে কখনো জিনের উজ্জ্বল তারকা
তোমাকে মুরিদ ভেবেছি আবার বায়েজিদ বোস্তামির
তখনি কচ্ছপ তুমি কখনো পুরুষ রহস্যের।

চৈত্রে যার খোঁপা খুলে গেল, কেউ রাখে নাই মনে
এলো ঝোড়ো হাওয়া বোরাকের ডানা বজ্র ও বিদ্যুতে
কাহার বুকের মধ্যে গোপনে কচ্ছপ রূপে বাড়ো
শতবর্ষী ফসফরাসে সংগীত স্মরণে বাড়ছে রাত-ও।

কার চোখে তুমি দৃঢ় অথবা সুন্দর বায়েজীদ
লৌকিক উদ্যানে বুনো পুষ্প যেন গোপন সৈকত
ফেরা নেই। চিরকাল ব্যাপে লেখা নাম দোজখের
তোমাকে গ্রহণ করি বৃষ্টি রাতে লিখে রাখি শের।

ভীষণ অজানা তুমি ভূমির তারকা, বায়েজিদ।
ভেবেছি মুরিদ পুনরায় বায়েজীদ বোস্তামীর

সোহরাব-রুস্তম

কোথায় সোহরাব কোথায় রুস্তম সূর্য ফালি ফালি
গ্লানির আড়ালে যদি লুকায় মুকুট অপাঙ্‌ক্তেয়
খুলে নিয়ো বর্ম; বর্ম খুলে নিয়ো চন্দ্রতোয়া রাতে
তোমার কসম যুগল মরণে জাগিব প্রভাতে।

রক্তের নিকটে পক্ষী নিজের জবান খুলে দিয়ো
যেন সন্তানের বুকে অসীম বসন্ত জেগে ওঠে
দূরে বনভূমি, দীর্ঘ কাফেলার গান, ফাটা তক
যুগল প্রস্থান লেখো এভাবেই কারবালা ময়দানে।

শোকগীতি নয়। তারও অধিক সূর্যাস্ত রেডিও
সোহরাব রুস্তম বিদায়ের আগে বর্ম খোলে নিয়ো।

কাটা মুণ্ডু

অরণ্যে তোমাকে দেখি সবুজ চাঁদ জ্বলে গেছ
পুড়ে গেছে ডানা, হাঁটু গেড়ে নত বোরাকের কাছে
চেয়েছ আরোগ্য ত্বকের চিৎকার বুকে গেঁথে
যেন কতকাল তুমি ঘুমাওনি, হাসোনি মধ্যযামে।

শেয়ালের ডাকে কাঁপে ভূমি, পরিত্যক্ত জিন–পরি
নীরব চুল্লির পাশে গলে যায় তিব্বত পমেড
পীরের মাজার থেকে ভেসে আসা ইনসানের কান্না
আর গতকাল যেন চারটা গলাকাটা সাদা হাঁস

কৃষি সমাবেশ শেষে চাঁদ, টীকাভাষ্য লেখে যাও
পক্ষীরা কারবালা এড়িয়ে গেলেও মৃত্যু হয় তার
নিজ শরীরের গন্ধে। এও উপহাস, জেনে, গ্রীষ্মে
কাটা মুণ্ডু হাতে পাহারায় আছ গভীর অরণ্যে।