মিউজের নন্দনবাড়ি

অলংকরণ: আরাফাত করিম

শুকনো ক্লোরোফিল সাথে উড়ে গেল পাতা
এমন দিনে তোমার চোখে জল—স্তিমিত উজ্জ্বল
টোলের গল্প বেজে ওঠে কোণাকাঞ্চিতে
যমদূত জেগে ওঠে জীবনের দীর্ঘ অন্ধকারে

তোমার কঙ্কালে জেগে ওঠে ন্যানোটেক
মরা গঙ্গার চর হয়ে ফিরে যায় পথিক
বিমূর্ত তৃষ্ণার দিকে স্নানঘর, ভেতরে রুপালি ইলিশ, সমুদ্র কিংবা সীমাহীন উড়াল
রাতের সব কটি তালা ভেঙে উড়ে গেছে অসমাপ্ত পাখি

মাথার ভেতরে কিছুটা অব্যক্ত লবণ, ওদিকে
কবিরাজ পাড়ার যাত্রাদলের ভিলেন অনিমেষ পাল
ভেসে ভেসে নিদ্রাহীন শৈবাল খোঁজে দারিদ্র্যের তীরে
আমাদের মাংসপেশিতে বুনো হাঁসের রক্তচঞ্চল গোধূলি, বাণিজ্য কোরাস—

ঘুমের দুয়ারে চানখাই বিল হাসি দিয়ে চলে যায়
কে এক অনামী ভাস্কর তুরুপের তাস হাতে ডুবে মরে ব্যাঙডাকা ভোরে
আমি তার কথা ভাবি আর মনের আঙিনায় রোপণ করি দলছুট সমুদ্রের ঢেউ—

তোমার কৈশোর হে বালক, গাবজলে চুবানো সুতোয় বেঁধে নাও
খসে গেলে মিশে যাবে খুনের গল্পে
হতেও পারে যে একদা খুনির পোশাকে
তুমি নক্ষত্র হবে, জ্বলে উঠবে স্রোতের নেপথ্যে
তোমার বীজতলে হলুদ বাতিরা এসে খুলে খাবে রাতফল, তখন অরণ্যজুড়ে
উনুনের ত্রাসে জয় হবে বন্য জোনাকির—এই গান
নিজস্ব ডাকঘরে রেখে দিই সাধনের বলে;
কিছুটা জলঘোরে, ভাতঘুম শেষে, শেষ হয় অনেক অদেখা শেষ আমারই মাথায়
চোর–চোর খেলায় মন আমার জেগে ওঠে বাঁশপাতার শোকসভায়

ধারণা করা হয় আমার লিনিয়েজ কানেকশন
চৌর্যবৃত্তির হেরেমখানায় নাক ডেকে ঘুমোয়
সেই ঘুমের মধ্যে ঘর ওঠে, বউ–বউ খেলা হয়
কবিতার সাথে আমার রিলেশন সন্তর্পণে, লজ্জায়;
এর চেয়ে বেশি কিছু নয়—এই সত্য সারা দিন
পেখমহীন নাচেরও অধিক কেউটের খোলস,

কিছু স্মৃতিবিষ; দ্বন্দ্বে ও মন্তাজে এইতো দূরের যাত্রী দাঁড়িয়ে আছি
পথের চিত্রে—আমার নিজস্ব ক্ষমা আমারই কবরে ঘুমুতে যাবার আগে
একটু বলে নিই: এই সব পাঠের দ্রবণে
লোনলি জীবনের ঘেরে উজ্জ্বল চিংড়ির মতো যে অপেক্ষা
তার পাশে দাঁড়ায় আমার চিত্রকল্পরা ঢাল হয়ে
ওপারে বকফুল কাঁদে পাখির রক্তে সুর বেঁধে—

একটি খবর এল দুধ-কাউনের শিষের মতো উজ্জ্বলতা নিয়ে
ঘরে ঘরে ব্যাকুল শৈশব, জাগরণ
খবরটা একটি সুতোছেঁড়া ঘুড়ি কিংবা ভাঙা চুড়ির সম্পাদিত চোখ
দাঁড়িয়ে রইল সমুখে
খবরটা একটা খাড়ির নির্জনে পড়ে থাকা বিপন্ন রোদের সকালবেলাকার উচ্ছ্বাস
কিছুটা বন্য, কিছুটা শিরোনামহীন—এ পথেই দাঁড়িয়ে থাকে
অনুকল্পের বীজ, বাঁকে ও শূন্যে—কুনোব্যাঙের প্রার্থনার দিকে প্রাচীন বড়শি—
যদি তুমি আপন বলে ভাবো এই সুনীল সন্ধ্যা
এই ছেঁড়া পাতার আলেখ্য, এই বাউড়ির শোক
তাহলে তুমিই আলপনা, নীড়ভাঙা খড়ের দ্বৈরথ

দীর্ঘ ঘুমের মতো দীর্ঘ সঙ্গমে তোমার চোখের সাবজোনে
মেলোড্রামা নাকি মেলোডিক স্রোতের কনভয়; সে–ই নিয়ে
ভাবতে ভাবতে আমার প্রান্তিক জল থেকে
উড়ে যায় ব্যাসার্ধ, শীতসকালের বাইনারি চোখ

স্তনময় রোদের আখ্যানে এই হাতে গোলাপের হাড়
বলো, এই ন্যারেটিভ কারও কান্নার কাছে পরাজিত কি না
চুল্লিতে প্রাণের সখ্য ক্রমাগত নেগেশন
বোধ আমার বাউল-চরণে আঁধার ও ব্রিকোলাজ—
এসো হে হরিৎ মৎস্য, যৌবনে তা দিয়ে যাও আর ভেতরে
শায়িত কবিকে বলো—তোমার রক্তের চন্দন মেখে
নিবিড় পাঠাগার ছুঁয়ে ভেসে যাব বানপোকার দেশে
কোনো জেনসাধকের আকড়ায়—

ঘুমের দিকে শূন্যতার পাঠশালা, বেজে যায় পাখোয়াজ
ময়দানে বিকল্প জুয়া খেলা শালের পাতায়—
পিতামহের পুরোনো জোব্বায় আজও কিছু ঘুম
জেগে জেগে নীল হাওয়ার গান শোনে আর
একটি দীর্ঘ লতার প্রান্তে বসে পান করে মাটি ও মমতার মিশ্র উড়াল
এই সব নিয়ে আজও আরও কত ঢিল ছুড়ি মেঘের শেমিজে—
ঘুমের অদূরে বসন্ত নামে, এ যেন পাখি ও ফুলের রাজনীতি—
এ এক কুহকবেলার কাহিনি সদম্ভ ফেঁদে যায় সেই অন্ধ কুহকিনী
যার ছুড়ে দেওয়া স্বপ্নের মধ্যে আমাদের গোপন উড়াল অনুভব করে
বৃত্তের মৃদু কম্পন, যেন কোথাও কোনো আদিমতার চাতালে
চাঁদ ওঠে লাজনম্র ভায়োলিন হাতে—
 
আমার দৃষ্টির ওপারে হারানো উপমার দল প্যারাবনের ঝিরঝিরে হাওয়ায়
বেজে ওঠে একটি ড্যাসের মতো সুরে কিংবা বেসুরে
তার দিকে ইনিয়েবিনিয়ে আজ আমি আবারও বাজাব জীবন
যা এক পুরোনো খবর গড়িয়ে গড়িয়ে সারাবেলা উইঢিবির পলাতক মন—

নিকোটিন চক্রের ভূতেরা রাশি মেনে হাঁটাচলা করছে ইদানীং
আমলকীর জলে জেগে ওঠে বৃক্কের প্রেম
রসের জেলেনী মাছসহ মেঘ হয়ে উড়ে যায় বনভূমির দিকে
কে এখন মেঘ চষে তুলে নেবে প্রোটিনের ঘ্রাণ?
গভীরতা মেনে যে স্প্যানিশ গিটারটা রঙধনুর গল্পের ভেতর ঢুকে যায়
তারও তো গল্প থাকে, থাকে বৃন্দাবন?
উচ্ছ্রিত লিঙ্গের অভিমান থেকে দূরে সরে যায় মিষ্টি আলুর সবুজ খেত
জীবনের এই সরীসৃপ খোলসের নৈঃশব্দ্যে বৃষ্টিরা কফিমেকার হাতে এগোচ্ছে আর
মালিথা পাড়ার রঞ্জনা মেকশিফ্ট ঘরের মধ্যে পেতে চায় আরোহী লণ্ঠনের আলো—

কোথাও কোনো শূন্যপুর কাছে এসে বলে, ভরে দাও পাতাঝরা দিন নিমগ্ন স্রোতে—
পুকুরগুলো শপিং মলের নেশায়—এঁদোডোবাও উড়ছে জলে–রসে
কোথায় যাবে বিনম্র বিশ্বাসে? কোনো কিছুই ভরে উঠছে না ঠিকঠাক
মন ভাসে শকুনের পেটুয়া হাওয়ায়, চাষের আয়োজন পণ্ড হয়—

কেবলই চৈত্রদিন জানে শুধু জলের শব্দের ওপারে কারও কুড়িয়ে পাওয়া
পাতার সম্পাদনা, কেবল আভাসিত তোমার নিবাস খুলে যায়
যাব না গোপনে আর দূর মোহনায়
স্মৃতিবিষ উগরে দিয়ে যত দিন আছি এ মহল্লায়
তত দিন হাওয়ার মর্মরই কবিতার জীবনচক্র—মেনে নিই

কোথাও কোনো শূন্যপুর উৎসব করে চৈত্রধুলোতে
একটি কবরের খাপাচি উদ্বোধনী লাল-নীল-হলুদ বেলুনের মতো উড়ে উড়ে শেষে
বয়ে আনে কোনো এক বিকেলের গল্প, যার ভেতর দরজায় দুটি ক্ষুদ্র চোখ
খোঁজে তার পুরোনো দেশ কিংবা মানচিত্রের কার্টিলেজ
কচুরিপানার রহস্যবাঁক আর সদ্য মৃত প্রেমের ঝাঁপি—

মনে আছে শৈশবের পাতার দুলুনি, নুনুফল হারানো কান্নার ধ্বনি আর
দরজিবাড়ির সময় হারানো সুনসান—এসবের মধ্যে ভ্যান গঘের
চোখের পাতা থেকে জেগে ওঠে প্রতিতুলনার নতুন ঘরবাড়ি, কিছু আসবাবও
স্ট্যারি নাইট—রূপ ও রহস্যের উন্মাদ বিপণি ঘূর্ণায়মান আকাশের সীমানায়
সেখানে চাঁদ ও তারাদের রহস্যকথন—প্রশান্ত গ্রাম ও পাহাড়ের নৈঃশব্দ্যে
প্রতিমার মুখ বদলে যায়, রূপকের হাড়ের গভীরে গাঁদাফুল ফোটে—

বিচিত্র চিত্রের দিকে আটপৌরে কান্না, সবজিখেতে
নন্দনের উপনিবেশ, আমার বদলে যায় সম্ভ্রম
নিবেদন ও প্রার্থনার হাত;
কতিপয় জলরং সিঁড়ি দেশ হারানো গুঞ্জনে
সাধনায় নত হয়, পাগলের শিশ্নসম্বল প্রতিভা
ধেয়ে আসে মানতের মালে; যে বর্ষা তার রাবীন্দ্রিক
ব্যামোটা লুকিয়ে রাখে বিষহরির পালায়
সেখানে ঝরে যাওয়া বিনাশের কাহিনি
গণজাগরণে জাগিয়ে তোলে ফটোসিনথেসিস

এই সব সম্পর্কের অতল বেয়ে, যা আমরা জেনেও গেছি কিছুটা
তাল-তবিয়তে শুরু হয় প্যাশনের ঘোর
যবের ছাতুর দিকে তাকিয়ে আজও জীবনের হাইপারবোল
প্রাণময় কিতাব চষে মাছের আঁশে—
আমাদের চোখের অদূরে নৃপতির ছায়া আজও সূর্যোদয়
তার মধ্যে ঘাসবেলাকার শোবিজ, ত্রাণশিবিরের উৎপাত
আর শব্দের অবোধ্য কুণ্ডলি বেয়ে এই তো বিহ্বল নাবিক
কবিতার সাথে কত দিন জুডো আর কারাতির লীলা
ভরে তুলি রণনীতি-রণকৌশলে মিউজের নন্দনবাড়ি—