টেলিপ্যাথি
টেলিপ্যাথি নির্মাণ হয় না তিন টুকরো মাংসপিণ্ডে
সপাটে খুলে দিতে হয় অন্তরাত্মা এবং তিন শ গ্রাম
হৃৎপিণ্ড দিয়ে নির্মাণ করতে হয়
মিলিয়ন বর্গমাইল ভূমণ্ডল
তুমি কাকে বলো ভালোবাসা, কী সে প্রেম?
সমস্তটাই বিভ্রম, যদি অসীমের নাভিকূপ ভেদ করে
না-ই ছোঁয় তোমায় আমার অনন্তশয্যার সৌরভ
দৃষ্টিতে বিঁধে থাকা কায়া জানে
চোখ-দিঘিতে ছলাৎ ছলাৎ ডুবসাঁতার
সে আদরে ডোবে, আবার ভাসে রোজ
পূর্ণিমায় সে-ই তো শঙ্খ বাজায়,
নোনাজলে শ্বাস নেয় প্রাণের ভিতর!
শঙ্খের খোলসে
কখনো কখনো শঙ্খের খোলসে,
আঁকিবুঁকি করতে চায় সাগরের জল
রাতের নীরব যখন করে কুহুতান:
স্বপ্নের ভেতর শঙ্খে ধ্বনি তোলে সমুদ্র
অর্বাচীন চোখ বন্ধ, অক্ষিপট কেমন করে দেখে
জীর্ণ বনের পথ ধরে ধুলামলিন বাতাসে গায়ের গন্ধ
ছড়াতে ছড়াতে বহুদূর হেঁটে
দৃশ্যের সীমানায় মিলিয়ে যাওয়া?
শীতের শনশন হাওয়ায় কেন মিশে যায়
আমার বাদলদিনের বকুলের ঘ্রাণ!
জানো বকুল, ‘একাত্তর হাজার দুইশ’–একুশ’ একটা
ক্যাকটাস হওয়ার পর, আর কখনো
ডিসেম্বরে শহরের পথ ভিজে যায়নি বৃষ্টিতে
তবু জানি, আজও অন্তরালে
ছাতিমের ’পরে নুয়ে থাকে শীতকাল
অনন্ত সুর
নিস্তব্ধতা তুমিই অনন্ত সুর
জলের শরীরে খেলা পিপাসিত মাছ
ঘুমের ওপাশে জেগে থাকা অরণ্যে,
জ্বলে ওঠা জোনাকির সাজ।
বেদনা, তুমি দিয়েছ পরমের সাধ
বৃক্ষের পত্রপল্লবে লুকানো রোদের মতো,
গোপনে থাকে যে সুর, তেমন অনুকম্পন তুমি
নীরবে কাঁদার অনুপাত।
কেঁদে যায় কোন পাখি বুড়ো চাঁদে দাগ কেটে,
মেহগনি-পাতায় বাতাস বওয়া নিশুতি রাতে!
তার পালকে আদর দিতে চায়, আমার মৃদু নিশ্বাস
পদনখে ঝরে পড়ে যেন মাথার টায়রা তার।
প্রবাহিত জীবন, তুমি ধীর লয়ে বও
অনীশ আবেশ ছেয়ে যাবে হলে রাই নগ্নপদ
আমি তটিনী-বুকে ভাসব আরও কিছু পূর্ণিমা
জলের শরীর ভেঙে ছেনেছুনে আনব তুলে,
সমুদ্র গভীর থেকে শৈবল-প্রবাল-নুড়িকণা।
নিষ্পন্ন হলে
নিষ্পন্ন হলে লুকানো দৃশ্যের অন্তরালে
উড়ে যাওয়া হাওয়ার দলে
ধুলামলিন বাতাসে বিন্দু বিন্দু মিশে থাকা
সেদিন হতেই পারে
অপারগ হরিণের দৃষ্টি
নাকও বেমালুম ভুলে যাবে পাতার ঘ্রাণ
চিবুকের কেন্দ্র একটা দীর্ঘ মফস্সল আর
চন্দ্রপুকুর হয়ে যাবে অক্ষিগোলক
তাতে ডুবে যাবে পৃথিবীর সমস্ত শর্বর
বেদনায় পাবে
সন্তাপী নই, যে প্রেম মুহূর্তের জন্য দিইনি
তা তুমি বেদনায় পাবে...