তর্জনী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
অলংকরণ: আরাফাত করিম

কুৎসিত; পৃথিবীর সমস্ত কুৎসিত কালো ভর করা আঁধার
মহাকালের সমস্ত রাত্রিগুলো সেই রাত্রিকে যেন করে ভয়;
কম্পিত-থরথরে রাজপথে পিশাচি ওই যন্ত্রদানব ভারী; সারি সারি ট্যাঙ্ক,
একদল মানব রূপধারী
বন্য জন্তুদের জ্বলন্ত এক অসৎ বীভৎস প্রতিশোধের পাশবিক অট্টহাসিতে;
হুংকার ছাড়ে উদ্ধত উল্লাসে;
হানাদার চক্রের চোরাবালির চাদরে মোড়ানো বুলেটের বুনো ঝড়ে,
এ কোন ঘাতে রক্ত ঝাঁজরায়ে লুটায়ে মরে
কাঁচাপাকা চুল আর কালো চশমার মিশেলে সব্যসাচী সাদা পাঞ্জাবির মহানায়কের সদ্য প্রয়াণে
কতজনের নিষ্পাপ প্রাণবন্ত দেহের নিষ্প্রাণ আলিঙ্গনে;
কেঁপে ওঠে বিধাতা—ঝরে রক্ত গোলাপের রক্তিম আভা হতে,
বিমূর্ত-বিমূঢ়-মর্মরে
কেঁদে ওঠে লক্ষ–কোটি জনতা, প্রতীকী তখন একটি দেশের কোটি কোটি বোবা কান্না
স্বাধীনতা, তোমার পরাধীনতায় অনন্তকালের বাঁধনে মৃত্যুভয়; আবার।

কোনো দিন কোনো এক কালের আবর্তনে, বিরাট জনস্রোতের সম্মুখে, কে দাঁড়িয়ে ওখানে?
নীরব ক্লান্ত আবরণে, বিশালতর তার ছায়া,
রাশভারী, জমাট গলা; তবু যেন অভিমান নাইকো গেছে ভোলা
বলিছে, ‘কে তোরা? আমায় এই কী দিলি তোরা?’
অবুঝ বালক, তবু তার ওপর এত ঘৃণা!
এত ক্ষত আর কাটাছেঁড়া-বড্ড বেশি নির্মম!
সবই ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাধা। সঙ্গে কালো মেঘের ধাঁধা।

চাপা আর্তনাদ আর বিন্দু বিন্দু অশ্রু ফোঁটার দিনে
কেউ বলে তুমিই স্বাধীনতা, আবার কেউ বলে, তুমিই মুক্তি;
তুমিই ইতিহাস, তুমিই হাজার বছরের সেরা।
স্বাধীনতা প্রবল হাওয়ার তোড়ে, তোমাতে সমর্পণ করে সমস্ত আকাশজুড়ে,
হে শেখ মুজিবুর রহমান—
আমি তোমারি সৃষ্টি, তোমারি কীর্তি—তোমার ওই সংগ্রামের গর্জনের সুরে।
তোমার ওই তর্জনীর বজ্র ডাকে
উত্তাল জনসমুদ্রের বাঁকে বাঁকে—ওদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে হাঁকে।
হে জাতির পিতা, তোমার ওই তর্জনীর ইশারার কল্পিত গর্জনে,
আছড়ে পড়ে ছিন্নবীণার ছোঁয়া,
মূর্ছা যায় বৈষম্যের জীর্ণ-জরা, ভোলায় নিপীড়নের দুঃখ-খরা; তোমার ওই তর্জনীর ঘায়ে।
তখনই অজস্র বিমর্ষ ধ্বনিতে মুখরিত, ‘ক্ষমা করো তুমি, ক্ষমা করো তুমি’

এ কী! তখনই জাগিল প্রভাত, ভাঙিল প্রভাত–নিদ্রা
এক সাধারণ জন—সামান্য তার ধারণ;
ডুকরে উঠে বলে, এ কী দেখা হলো এই প্রভাতের শেষে!
ক্ষমা করো তবে, মরিতে পারি যেন তোমার এই বাংলার বাঙালিবেশে।