স্মৃতির দুরবিন
সব স্মৃতিকে ঘুম পাড়িয়ে আজ শিকারে যাব
যাওয়ার কথা উঠলেই সিঁড়িতে পায়ের ছাপ
যেন সমুদ্র, যেন জলের পৃষ্ঠা এ শহর,
যেন শরীরজুড়ে বিপন্ন বুদ্বুদ-পারফিউম
মধ্যরাতে হাওয়া আত্মসাৎ করে দীর্ঘশ্বাসের গিলোটিন,
জলপতনের শব্দ আসে শিশিরখোয়া রাতের কবজিতে
উড়ে যাব হাওয়াই জলে, মাছের কানকোয়
ঘামের অ্যাকুয়ারিয়ামে—
যেতে যেতে আকাশ বদল করে এত দূরে চলে যাব
আমাকে কোথাও পাবে না, হে স্মৃতির দুরবিন!
দীর্ঘশ্বাসের মতো কবিতা
তোমার থাকা এবং না থাকার মাঝখানে
দাঁড়িয়ে আছে হাইওয়ে ট্রেন, স্মৃতিঘর—যাবে?
বৃক্ষেরা তুলে রেখেছে জলের সিগন্যাল, রজঃস্বলা পাতা!
আড়চোখে তাকিয়ে আছে রাত্রি, গন্তব্যের বীজপত্র—
জুতোর ভ্রমণকাহিনি পড়তে পড়তে
পায়ের সাথে ঘুমিয়ে পড়েছে নিদ্রাহীন আঙুল।
এখানে রোদের ছায়া, আলো ও আঁধারের পর্যটন
এখানে শ্বাসনালি বেয়ে উঠে আসে নৈঃশব্দ্যের ঢেকুর—
দীর্ঘশ্বাসের মতো সুদীর্ঘ কবিতা।
পুনর্জন্ম
প্রার্থনায় নত হলে তোমাকে পাই,
পাপে ও তাপে,
আর্দ্রতার কিনারে পাই ঘামের পালঙ্ক-অনিদ্রাসূচকে।
বাতাসে উড়ছে ভুল বারান্দার ঝুলগন্ধম সময়
ধ্যান ভাঙলে একদিন ঈশ্বরের সাথে বদলে নেব
ঘুমের সেফটিপিন, জামার বোতাম
পুনর্জন্ম হলে একবার প্রেমিক হব
হাওয়া বদলে গেলে যেমন
জোছনায় চোখ রেখে ঘুমঘোরে জেগে ওঠে কুমারী নদী,
মৃতের শহরে দেবদারুগাছ হয়ে ওঠে
প্রিয়তম পুরুষ।
রাত্রির অন্ধ কপাট
বুকের ভেতর কে যেন দাঁড় টানে জলের মতো একা
জল কি নদীর দহন? রাতের মাইগ্রেন?
মুখাগ্নি জ্বালিয়ে রেখে উড়ে গেছে সামন্ত দিনের মেঘ
ধোঁয়ার অক্ষরে—
কত মুখ ছাই হলো নিজের উত্তাপে-অনিদ্রায়
আঁধারের তলপেটে জমে আছে ব্যথার ক্যানুলা, রক্তজবা
ওখানে ঘুম নেই—খুলে রাখি রাত্রির অন্ধ কপাট,
বাতাসে উড়িয়ে পাল—ধ্বসে গেছে নিদ্রার ঘুমগাছ
নিজেকে গিলে খাওয়া রাতে, রাত আসে না সহজে।
বৃষ্টিরেখা
বৃষ্টি পড়ছে ভেতর–বাহির—
তবু জল জানে না বৃষ্টিরেখা আর কত দূর!
আলমারিতে গুছিয়ে রেখেছি নদী,
তার ঘুম চুরি করে নিদ্রার ভেতর বয়ে চলেছে
প্রিয়তম সংসার-ঝাউপাতার প্রলাপ,
আমার না থাকাজুড়ে পড়ে আছি আমিই
আঙুলে ডুবিয়ে রেখেছি ইশ্বর
স্রোতের জলে ডুবে গেছে দ্রুতগামী ট্রেনের জংশন
আমাকে খুঁজতে এসে না পেয়ে ফিরে গেছি
আমি নিজেই।