পুনর্জন্ম
এভাবেই দেখেছিলাম উষ্ণতম দিনে সমুদ্রতটে
বিশুষ্ক বাতাসের দেহে
ফসিল পাতারা ভাসে,
ম্রিয়মাণ হয়ে নয়, প্রসূতির জরায়ুতে
তীব্র আর্তনাদের মতো;
কিংবা ক্ষয়িষ্ণু জন্মের কথা কি আর শুনতে চাও আমার কাছে?
আমি গল্প বলিয়েদের দলপতি নই!
চেতনাবিরোধী মেঘের সঞ্চালকও নই,
তবু মাথার ভেতরে শুষ্ক জিবের মতো
ঊষরতা পরিত্যাগী স্বাদ বসে থাকে;
বীজহীন আবাদি জমির পরিভ্রমণে
নিঃসঙ্গ, একাকী ক্ষুধার্ত শাবক।
হে শুষ্ক পাতা,
তোমাকেই কি সে খুঁজে নেবে অথবা
মৃত্যুহীনতার উর্বরতা,
সুদীর্ঘ দিবসের সন্ধান করে কীভাবে?
ফেরারি চাঁদের মতো পৃথিবীতে এসে
স্মৃতিহীন পথিকের প্রতিটা পথই নতুন;
নতুবা এ সমগ্র জীবনযাপনে
তোমাকে অভিভূত করে সন্ধ্যা কিংবা
সকাতর সকালের আলো-সকল;
তবে পুনর্জন্মতাই ভাসমান ভাস্কর্য,
সহজাত বেদনার দলবদ্ধতাই
প্রজাপতি হয়ে ভাসে,
বিষণ্ন চোখের আরাম হতে চেয়ে।
খোলাচিঠি
মরে গিয়ে বেঁচেছে অনেক—ইতিহাসে
লেখা আছে তাদের গল্প শত শত,
তবু আমরা কেন একে অপরের প্রেমে
রক্তস্নাত আর আহত!
বিষাদের হাতে ধরে হতাশার পথে
বিষণ্নতার দেশ খুঁজে পেলে কোনোমতে
প্রিয় মৌনতাকে শোনাই খোলা চিঠিতে
এক দুঃখ বিরহী গান বসে রুক্ষ মাটিতে
অযথাই অজস্র কিছু ভাবি, অহেতুক!
মেনে তো নিতেই হবে একদিন চিরনিদ্রা
বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষ কালো কৌতুক
অথচ ভিন্ন জীবন খোঁজে ইতিহাসবিদেরা!
অল্প আগুন-আঁচে
কীই–বা বলার আছে
কতটুকু হয় বলা,
অল্প আগুন-আঁচে
দীর্ঘ সময় গলা;
গলতে গলতে ধীরে
তলিয়ে যাচ্ছে কেউ,
মায়ার্দ্র জাল ছিঁড়ে
থামিয়ে নদীর ঢেউ—
কেনই–বা সে থামায়
কেনই–বা কেউ থামে,
কেউ ডাকে না আমায়
কোনো নামে বা বেনামে;
নাম খুঁজতে গিয়েও
হারিয়ে ফেলার পথে,
এ জীবন অনুমেয়
যা বাঁচাই কোনোমতে!
ভূমিকা: সিনা হাসান
‘হোক কলরব’, ‘প্রকৃত জল’, ‘নাম ছিল না’, ‘রোদ বলেছে হবে’, ‘লাস্টবেঞ্চ’, ‘যাযাবর পাখনা’সহ অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকবি রাজীব আশরাফ। বোহেমিয়ান শিল্পী রাজীব আশরাফ। একজন মানবিক মানুষ রাজীব আশরাফ। তাঁর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। সবার মুখে ফিরে ফিরে এসেছে রাজীবের গান, কবিতা আর স্মৃতিকথা।
কবিতা ও গান লেখার পাশাপাশি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন ক্ষণজন্মা এই কবি। জীবনকে তিনি যাপন করতে চেয়েছিলেন কবিতার মতোই—পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে। লিখেছেন মূলত ছোট কাগজে। তিনি যে কবিতা আর গানের মধ্যে কখনো ভেদরেখা টানেননি, তা তাঁর অপ্রকাশিত কবিতাগুলো পড়লেই বোঝা যাবে। জীবদ্দশায় ধরেছি রহস্যাবৃত মহাকাল নামে রাজীব আশরাফের একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থই প্রকাশিত হয়েছিল।
এর বাইরেও রাজীব লিখেছেন অজস্র কবিতা। যেমন ‘পুনর্জন্ম’ কবিতাটি লিখেছিলেন ২০০৭ সালে আমার দিনপঞ্জিতে। আর অন্য কবিতাগুলো ২০২১ সালের দিকে আমাকে তিনি পাঠিয়েছিলেন ফেসবুক ইনবক্সে। তবে কবিতা লেখার প্রতি তাঁর যত আগ্রহ ছিল, তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে তিনি ততটাই ছিলেন উদাসীন। অনেক কবিতারই কোনো শিরোনাম দেননি তিনি। এখানে পত্রস্থ কবিতাগুলোর মধ্যে কেবল ‘পুনর্জন্ম’-এর শিরোনাম তাঁর দেওয়া। বাকিগুলোর নাম তাঁর মৃত্যুর পর দেওয়া হয়েছে। জানা মতে, এসব কবিতা এখন অবধি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। কবিতাগুলোর মধ্য দিয়ে অসময়ে চলে যাওয়া এক দ্রোহী ও প্রেমিক কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে।