আদর্শের আদুল বাতাসে মউ মউ

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

বেহুঁশ প্রেম

আমায় নাও উঠায়ে তোমার নায়ে
ক্লোরোফর্ম মাখায়ে দু তালুতে জড়ায়ে
বেহুঁশ করায়ে বন্দিনী রূপেতে
এত এত দিনের জমানো বন্য বাতাস ভরায়ে নাও উড়ায়ে
নাও সভ্যতা থেকে দূরে, হোক আলাস্কায়
নাও আমায় নাও চড়ায়েই
দাও নিলাম ফতুর হয়ে ফতুর করেই
না হয় নাও বৃষ্টিতে ভেজা নগ্ন গায়ের সিনেমার ক্লিপেতে
না হয় ধরে তোলো দু বাহুতে সন্দেহ ঘোচাতে
দেখেছ বেঁচে আছি মর্গে শব হয়ে
বহ্ন্যুৎসব পুড়িয়ে শ্মশানের মড়া হয়ে
আমায় নাও বুররাক
ধুলার ঝড় উড়ায়ে আসো আমার বেদুইন শাহজাদা
এত দিন বাদের টালিখাতা হিসাব চায় বেহিসাবের
এই আমি এত দিন পর হতে চাই শৃঙ্গজয়ী
আমাদের মিলনের প্রকাশনা উৎসবে
তোমার জবানবন্দি নেব প্রকাশ্যে!

তাতার

তোমায় আজ নাই–বা দিতাম ডাক
বেশ ছিলে নিজের জ্বলুনিতে জ্বলে জ্বলে
তোমার সাথে সখ্যের দণ্ড দিচ্ছি বেহিসাব
কী প্রচণ্ড তুমি বেওয়ারিশ ছন্দে
কী খ্যাপা যেন বুলফাইটের প্রতিযোগী

কী গৌরবে বলেছ শেখাবে শিল্প
শেখাবে আরাধনা, শেখাবে আধ্যাত্মিকতা
বলেছ রক্তমাংসের আধ্যাত্মিকতার নাম শিল্প
যেখানে জায়গা দিলেই ঘর দখল করবে
আর প্রকাশের ঝাঁজালোতায় আমিই কি না খাট্টা
আর কি না তোমারই হৃৎপিণ্ড খাই গলিয়ে

তোমার লোভ দেয়াল ডিঙিয়ে
তোমার নুয়ে পড়া সর্বস্ব হারানো
তোমার আগ্রাসী প্রেম দিক্ভ্রান্ত

তুমি আশ্রয় চেয়েছিলে
চেয়েছিলে ভালোবাসা
ন্যূনতম কোনো স্মারক
কী ভীষণ ঠোঁটকাটা
লজ্জার ভুসি গুলে হজম
বলেছ, আমায় মেরে আবার গড়বে নতুন!
পুরোনো আমিই তো তোমার প্রিয়
নয়? তবে?
দিশাহারা আমার পাতা যায় উল্টে
ভুলে যাই কত দূর টানা পৌঁছেছিলাম
ভুলে যাই আমি তোমার শ্যামসোহাগী রাধা না,
হব না

আহ

গোড়াতেই গলদের ঠাসবুনানি
যেন বা দেহধারণই বেআইনি,
যেন বা জবরদস্তিই নাড়িছেঁড়া
অতএব তেমতি শুরুতেই ডান্ডাবেড়ি

শুরুর পার্সেল আজও রয়েছে গোপন কুঠুরিতে
রক্তলাল রাংতায় মোড়ানো লাল লজ্জা
সফেদ সাদা নয়তো নিকষকালো উড়ুনি ঘেরা বেড়
শুদ্ধাশুদ্ধির আবছায়া আলোয়ান
সব মাখানো হলে—আহা
আদর্শের আদুল বাতাসে মউ মউ

তবুও সে স্বেচ্ছাচারী
তবুও ভাসায়
তবুও আশায়
গোপন প্রকোষ্ঠের দুয়ার খুলে দাঁড়ায়
হা-মুখ করে

আহা—পৌঁছাক অন্তত কিছু বা বেশ
আলো, বাতাস, গন্ধ—
না হয় হলোই বা কিছু কম তাতে সুগন্ধ
পিচ্ছিল পথ বেয়ে নামুক সে হড়হড়িয়ে হুড়মুড়
গড়িয়ে, ডিঙিয়ে—না হয় গেলই বেশ ছিঁলে ছেঁচড়ে
তবুও আহা—
সে প্রথম আলোর ছোঁয়া
সে প্রথম ঝরনায় স্নান
সে প্রথম বিশুদ্ধ বাতাস
বুক ভরে টানো
চেটে চেটে মাখো
আহ!

বিবিধ বাতিক

কী জানি শোনা যায়
কী জানি শোনারই কথা
ঘুরে ঘুরে যখন দামামা বাজে
তখনো কি না!
আর কত বুক চেপে ধরা
আর কত না শোনার ভান
বুকের ভেতর চেনা ক্ষোভ
তবুও কেন অচেনায় রাখা তারে!

দ্রিম দ্রিম দ্রিমিক
বাজে বাজে
ভাঁজে ভাঁজে
হিংস্র সুর ভরে খাঁজে
সে কী ধকল
চোখ ভেদ করে ছেদ
ধকধক ধকধক ধকল
যদি হয় নিজ থাবার আগ্রাসন
কে পারে ঠেকাতে!
আঁচড়ে যদি রক্তাক্তই করা
কে চায় ঠেকাতে!

নিজের মুখ থেকে নিজেরে মুছে দিবে
নিজের কাছ থেকে নিজেরে সরায়ে দিবে
এত ভালোবাসার মুখটা
এত চেনা নিজটা
কে পারে!
তবু কেন চায়।

মুখ ও মুখোশ

তোমার মুখ এক জোড়া হলে কত ভালো হতো
বেশ চালাত তারা একতালে, নানাবিধ সুর-তাল-লয় লয়ে
অথচ হলো কিনা তোমার মুখ একজোট
জবর চলে জোট পাকানো কি জোট ঠেকানো
তোমার ঠোঁটের কষ ধরে বেয়ে চলা জটারা শতবর্ষী
অথচ শত গত করে দিয়েও না এল হুঁশ, না জমল রস
জমে ক্ষীর কি পাথর হয়ে যায় নাই তো?
এদিকে শীতে ওদের বাড়তি যত্ন, সে–ও যন্ত্রণা
তোমার মুখ কেন হলো না লেপাপোছা
কেন নয় একদমই আলাদা আলাদা হওয়া আলগা

বা নামমাত্র জোড়া, হলো না হয় আঠা জুড়ে দিয়ে কি জড়ো করে
অবশ্য পাড়া ঠেঙিয়ে জড়ো করেও যার ইতিহাস জড়সড়
যার জানা এখনো সারে নাই সাত সাতটা ফুটা থাকেই বা কই, আর কেন
প্রয়োজন তার কী আর, কখন রাখার কারে আড়াল কি আবডাল
হতে পারত সমান মাপে কাটা চৌকোনা কি আয়তাকার
নিরাপদ লাগা বাড়িয়ে দিত মেশিনের বেশ
অবশ্য যা তোমার মুখ—না আছে আকার, না আছে অঙ্গীকার
নাই বিন্দুমাত্র বেশভূষা পাল্টানোর দুর্বলতাও

সেই কবে ধরে লটকে থাকা মুখ এখন আস্ত লাউ
অনেক দিন বাদের পরও ঠিকই এল আমার সাধের লাউ
আবার আনন্দে বাজবে ডুগডুগি
খোল বরাবর কিছুকাল না হয় থাক হা-খোলা
সাথে উঁচিয়ে রাখো আলজিব
এই পর্বের বাকি দিন নাই–বা হলো
না-কথা ফোটা!