চারটি কবিতা

অস্থিরতা

কী আলো শূন্যের মাঝে ছড়িয়ে

নীড়ের পাখিরা উড়ে চলে নদীর কিনারায়,

মেঘের পাথরে আঁকা শুভ্রতা ছুঁয়ে

স্বপ্নপথে সব ভুলে হাজারো স্মৃতি রেখে যায়।

কী ঠুনকো মায়ার বাঁধন টুটে

চিরন্তন আঁখি মেলে হেঁটে চলে কোন দূর টানে,

বহু সাধনার রং মেখে সে তাকায়

ভাসমান মেঘের মতো অবাধ্য বিজলির পানে।

কী প্রোজ্জ্বল তাপন গায়ে তেড়ে এসে

ফুঁ দেয় ছাই হওয়া উচ্ছিষ্ট পতিত কঙ্কালে,

অনিশ্চয়তার আঁচিলে মোড়ানো ভাগ্য

হামিংয়ের অশান্ত ডানায় খুঁজে ফেরে রঙিন সকালে!

কী শঙ্কিত অজানা নিয়তির প্রয়াণে

সুখেরা পাড়ি জমায় বৃহৎ দক্ষিণ-চীন সাগরে,

চিত্তে লুকানো আশার বাতাস ছুঁয়ে

অপরিণয়ের লালসা বুকে ছিটকে যায় নিষ্ঠুর নাগরে!

হেরিটেজ স্টেশনে

অজানা পথে একা হেরিটেজ রেলওয়ে স্টেশনে,

আলোর আসার অপেক্ষায় সন্ধ্যাবেলা শুরু হলো;

কোনো সংশয় ছিল না মনে!

প্রেমহীন একলা চলার পথ সমুদ্রের মতো সমতল,

এখনো সে প্রশ্ন করে যে মনে সে কোথায় থাকে;

এত দিন পর সে কার পাশে, কে তার পাশে অচল!

শুধু শুধু আঁধারে একা একা রাস্তা হারিয়ে ফেলে,

অচেনা পাহাড়ের সামনে আজ একাই কেবল প্রতিফলিত;

শরতের শুভ্র স্নিগ্ধতায় লেপটে রয়েছে, যা হারিয়েছে হেসেখেলে!

আজও তার স্মৃতিমাখা সুপ্ত মায়াগুলো নিরালায় খুঁজে ফেরে,

বৈশাখী মেঘের তলে একটি মুখ ছিল শুধু তার একান্ত দৃষ্টি;

প্রকৃতির নীরবতায় রংধনুর মিতালিতে মায়াবী কানন ছেড়ে!

তার প্রেম ছিল সূর্য, যা মনে জেগেছিল রাতের চাঁদ হয়ে,

সেই হেরিটেজ স্টেশনে আজও ফিরে আসে নির্বিঘ্নে;

দিন এসে গেছে জীবন পাল্টে গেছে একক্ষণে সময়ও যায় বয়ে!

প্রকৃত প্রকৃতি!

গ্রীষ্মের বলে

সূর্য আরও উগ্র হয়ে উঠেছে আকাশে,

সুখের আলোর সাথে জ্বলে আর আগুনের প্রাকাশে।

প্রবল খরায়

পৃথিবী জ্বলছে জ্বলন্ত রঙে,

জলতাত্ত্বিক বাতাস বাঁশি বাজায় অজানা হাসির সঙ্গে।

কুয়াশাচ্ছন্ন আঁধারে

শীতের রাত্রি যখন দূর থেকে দূরে চলে যায়,

বর্ষার মাঝে এসে মেঘ হানে নেশার জলধারায়।

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে

দারুণ গরমে জলের জ্বালার প্রতি স্পর্শে,

মন ভাবিয়ে আনছে আকস্মিক উল্কা-স্পন্দনে।

কালবোশেখীর

বজ্র হাওয়া বাজায় ঝড়ে রঙিন লীলা বীণাতারে,

পৃথিবী মেলে গভীর অমাবস্যার বিধুর আঁধারে।

ধানসিঁড়ি নদী

স্পন্দন করে সদা ভরা সুখের ভাবুক জীবনানন্দে,

প্রকৃতির চেতনা জাগিয়ে দিলে অতীব তীব্র সানন্দে।

ব্যাকুল ধরণীতে

আদিত্য উত্তাপে পিপাসায় মরে সিতাংশু জল চায়,

বিদঘুটে ব্রহ্মাণ্ডে তারা তবু বসে থাকে প্রকৃতির আশ্রয়।

ক্ষণিক নাগলোকে

স্বীয় মমতায় আবরণ করে কোমল প্রসূন পুঁতে,

কবিতায় নিবেদিত হয় শরতের নগরী অনন্তে।

    পাহাড়

পাহাড় গিরি শোভিত এক দানব আকৃতি,

শ্বেত মেঘের ঝলমলে মায়াবী নীরব প্রকৃতি।

হিমশীতল পরশে বুভুক্ষু চিত্তে সমৃদ্ধির মিশ্রণে,

নির্মলতায় সব হারিয়ে যায় কোন সুদূর বন্ধনে!

উদিত আলোর প্রতিচ্ছবি বিচিত্র পাথরের জল,

সৃষ্টিরহস্যে উদ্ভাসিত অজানা সে অদৃশ্য অতল!

পাহাড়ের অপলক চোখধাঁধানো বাতাস ঝাপটিয়ে,

চিত্রকবিতার হাওয়া ফুলগুলো মিলে যায় রং ছিটিয়ে।

স্পর্শে তার ঠান্ডা কখনোবা পবকের নেয় কঠোর,

জ্বলে ওঠে সুখের দানী আত্মশক্তিহীন এক বিষ্টর।

শূন্য মনে হানা দেয় পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতার সুর,

হঠাৎ বৃষ্টিতে বেজে ওঠে গানের প্রতিচ্ছবি কত দূর!

পাহাড়ের পিঠ বেয়ে সৃষ্টিত মেঘের অসীম জলধরা,

চাঁদের পর্বত হয়ে মন ওড়ে তবু নিয়তির ঘন খরা!

শিখর ছাপিয়ে মনের অসীম উদ্দীপনা দোলা দেয়,

সকলের চেয়ে শান্তি সেই পাহাড়ি প্রশান্তির ছায়ায়!