কেবল চেয়েছি পেতে পাতার মহিমা

অলংকরণ: আরাফাত করিম

কত দিন ডালপালা ছুঁতে ছুটে গেছি!
উন্মত্ত অধীর হয়ে উদ্বাহু নেচেছি
প্রগাঢ় নিকটে গেলে বুকে বাড়ে শ্বাস
চারিদিকে ঘূর্ণি বয় ক্ষুব্ধ অবিশ্বাস।

হালোট হারিয়ে একা দৌড়ে চলি দ্রুত
যেনবা আমার বাড়ি খুব উপদ্রুত
নিঝুম বনের পাশে উপকূলে শুয়ে
ডুব সেরে মাথা থেকে জল পড়ে চুয়ে
অন্ধকারে হয় নাই কিছুই ঠাহর
আঁকড়ে ধরতে চাই তবু নিজ ঘর
কেননা এ ঘরে আছে আমার বসতি
জীবনের বিনিময়ে পূর্ণ করি যাবতীয় ক্ষতি
কেউ কেউ কাছে এসে দেখায় সাহস
কাছে এলে ছুটে যায় প্রাজ্ঞ ভূমিধস।

প্রবাহ থামলে মৃত্যু ব্যাকরণ জানে
এই সত্য মানে
পুবের ধানের গোলা
জলমগ্ন গ্রাম যার চতুর্দিক খোলা
হেসে ওঠে কণ্ঠের সৌরভ
ভেসে যায় উন্মাতাল বিশ্বাসের শব।

দুই হাত উঁচু করে দাঁড়াই সভয়
সহজেই কবজা করি জয়
হাতের মুঠোয় পুরে বিজন প্রান্তর
খানিক নিমগ্ন হই বুকে মেখে জ্বর
ঘুরে আসি নাতিদূর সমুদ্রের পাড়ে
একটি মস্তক ছিল সকলের ঘাড়ে
নিরূপায় ছুটে যাই নিশিডাক শুনে
নিভন্ত জীবনে আর কী কী হবে বুনে
স্বপ্নের শুকনো রুষ্ট বীজ।

গলায় বেঁধেছি আমি রুদ্রাক্ষ তাবিজ
দেখে যদি ভয় পেয়ে সরে যায় দূরে
আমার নিশানা তবু ঝলকানো ক্ষুরে
কেবল চেয়েছি পেতে পাতার মহিমা
জীবনের মায়া নিয়ে করি নাই বিমা
মরণের কিবা ভয়, কতটা সংশয়
দূর থেকে ধেয়ে আসে অরোধ্য বিজয়
আমাকে জাপটে ধরে
নিতে চায় আদিম নগরে
গোপনে পালিয়ে এসে জীবন বাঁচাই
ঘাসের অন্তিমে গেড়ে রাখি আপাতত ঠাঁই।

সুপ্রভাতে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে পারি না
বুকের নিভৃত কোণে জমে থাকে পুরাতন ঘৃণা
আড় চোখে দেখে নিই অঙ্কুরিত হাসি
ভালোবাসি—খুব ভালোবাসি
মুখে যদি না-ই বলি, কার কিবা দায়
নিজেকে অর্পণ করি সময়ের পায়।

কার জন্য কে অপেক্ষা করে,
সকলেই পুষে রাখে অদৃশ্য অন্তরে
পুড়ে যাওয়া ভালোবাসা-ছাই
আর কিছু চাই,
এমন সাহস নেই, নেই কিছু ক্ষোভ
জেনে রেখো আমি নই নাস্তিক নির্লোভ
আমার রয়েছে ভূতভয়
মস্তিষ্কের কোষে জমা অজানা সংশয়
একদিন হবে দ্রবীভূত
নিত্য পাঠ করি আমি সংহিতা সুশ্রুত!

যে পারে পারুক, আমি করি না সন্দেহ
গালে-মুখে মেখে নিই অবিমিশ্র স্নেহ
এই সব অপত্য আশিস নিয়ে মাঠে
নেমে গেছি, বাধা ছিল পড়শি চৌকোঠে
সব কিছু পরাভূত করে আমি সমূহ অগ্রণী
সামনে থাকুক যত মণি-স্বর্ণখনি
দুপায়ে মাড়িয়ে আমি খুঁজি পোতাশ্রয়
যাত্রাপথে আমি কিছু করিনি সঞ্চয়

হৃষ্টচিত্তে উড়িয়েছি স্বপ্নমাখা ঘুড়ি
নাটাই দুহাতে রেখে অন্তহীন উড়ি
পেরিয়ে এসেছি কবে নিরালা আঁতুড়
কানে বাজে সেই মধুসুর
কার অঙ্কে কতটুকু তুষ্ট হয়ে দুলি
প্রান্তের জবান আমি কী করে যে ভুলি!

এখনো বুকের সিনা টান টান করে
হাঁটি আর বলি উচ্চৈঃস্বরে
আমাকে দেখিয়ে দিয়ো নির্মাণের ঘর
একটি পাতার জন্য পুড়ছে অন্তর!
বৃক্ষের স্পর্শের জন্য হাতে মেলে থাকি
চেয়ে দেখি উড়ে যায় অনন্তের পাখি
পড়ে থাকে কতিপয় নরম পালক
আর কিছু পড়ে থাকে ছায়া
একটি পুষ্পের জন্য বুকে পুষি মায়া!

সব কিছু নিভে গেলে ঘ্রাণ জেগে থাকে
অদৃশ্য লোভের সুধা জড়ায় আমাকে।