কামারশালা
বাসার নিচে কামারশালা
আরেকটু দূরে গ্যারেজ
সকাল থেকে রাত অবধি
বাজে হেভিমেটালের বেস।
ধুমধাড়াক্কা হাতুড়ি আর
বাইকের রাগী গরগর
লোহা কাটার মেশিন ঘুরে
লাল ফুলকির কড়মড়।
পেটানো শরীর যেন লোহা
হাতুড়ি পেলে থাকে না হুঁশ
সকাল থেকে বাজাতে থাকে
পিংক ফ্লয়েডের ইকোস।
অভিশপ্ত
ভেতর থেকেই তুমি ভেঙে পড়ো
বিক্ষুব্ধ সাগরে জাহাজের পাটাতন
ভাঙার মতো শব্দ হোক। তারপর
আছড়ে পড়ো তীরে। তোমার সব
লুটে নিক দস্যুদল। টিপ্পনী কাটুক
বলুক লোকে, ‘পাগল’। দরজা যাক
জানলাতেও না ডাকুক পাখি। সব
রাস্তা বন্ধ হোক। করুণায় কেউ যেন
ফিরেও না তাকায় তোমার দিকে
বেঁচে থাকো হয়ে কুষ্ঠরোগী। বন্ধু
না থাকুক। নিঃসঙ্গ মরে যাও। পুঁজ
আর দুর্গন্ধে ভরে উঠুক দেহ। মৃত্যুর
দূতও না আসুক সহজে। ভাবুক সবে
ফেরাউন, ইবলিশের ভাই, পসেইডন।
ভরদুপুরে
এই ভরদুপুরে—
ওপর তলায়
কে যেন সারা দিন
হারমোনিয়াম বাজায়
গলা সাধে
বলে, ‘রাধে রাধে’
নিচতলায় আমি থাকি
ভাঙা চৌকিতে
ভাতদুপুরে
তার গান শুনে
জাগি চকিতে
শুনি, নিচে তার
স্বরে কে যেন ডাকছে
‘ছাই লাগবেনি?’
ধুর ছাই—
এ কোন নিতাই
নাচে পা তোলে কাঁধে!
এমন রাতদুপুরে
গলা সাধে নাকি
রাগ ঝাড়ে মা
বলে, ‘গাধে গাধে’
মিত্র পরিবার
রণজিৎ মিত্রের মেয়েরা তিন বোন
মা আছেন পরিবারে, শুনেছি মাসিও
থাকেন সঙ্গে। মামাদের আদুরে এবং
মেজদার ভয়ে বিলাই হয়ে থাকে খুব।
তবে তাদের একটি সিংহী। বড়টি
বাঘিনী, মেজটি মেছোভালুক। এসব
অবশ্য বাইরে। ঘরের ভেতর ছোটটি
নাদুসনুদুস খরগোশ, মেজটি পড়ুয়া
বড়টি অ্যাকুরিয়ামের কচ্ছপ, মাছও।
মধ্যবিত্ত সংসার, মদের সামান্য নেশা
মিত্রের। বাকিটা গিন্নির আঁচলে বাধা
মা আছেন। বুড়ো মানুষ। পুণ্যে মন
বাবা গত, বিগত বছরে, ছবিতে হাসেন।
মাঝে মাঝে মিত্র (লোকে ডাকে মিত্তির)
কবিতাও লেখেন। সংসারের লেনদেন
সব সেরে বসে টেবিলেতে মন দেন
গিন্নি যেন কিন্নরী, সবকিছুতেই তাড়া
ছুটির দুপুরে একটু লিখতে বসলে মিত্র
হাত-পা ঝেড়ে তিনি মাথায় নেন পাড়া।
ওয়ান স্টেপ ফরোয়ার্ড, ট্যু স্টেপস ব্যাকওয়ার্ড
কিছুদূর যাব
তারপর ফিরে আসব নিজের কাছে
প্রতিদিনের একই পথ ধরে হেঁটে
এক পা এগিয়ে, পিছিয়ে যাব দুই পা।
ভাবব, কোথায় বসবে চন্দ্রবিন্দু
বিসর্গের উচ্চারণ, কত দূর হয়েছে
হৃদয়াঙ্গম নাগলিঙ্গমের সুবাস।
এক পা এগোনো মানে দুই পা পেছানো
এক পায়ের সঙ্গে আরেকটি পা মেলানো।