মিনতি
অগ্রহায়ণকে জিজ্ঞাসা করেছি
জমির কুশল।
শেষ সূর্যাস্তের মতো সে–ও হাসে
ঝিঙে ফুল, মান্দি পরিবার।
আবাদ যে করে সেই বোঝে
আচিক দেবের প্রতিশ্রুতি
আদিগন্ত বনে গারো নারীর মিনতি।
ফেরে না
একটি জন্মের পাশে অসংখ্য মৃত্যুও থাকে।
কেউ তা দেখেন, কেউ তা দেখেও দেখেন না।
জলের স্কন্ধ ভাঙলে নদী কি জানতে পারে?
সমাজ ভাঙলে সমাজ কি বুঝতে পারে?
শিশুমুখে রক্ত ঢেলে দেশ যারা ভাঙে
মোমবাতি হাতে তারাও চেয়ার।
আমরা বলেছি, সময় ফিরবে
না-বলে চলে যাওয়া ঋতু কখনোই ফেরে না।
নিম কাঠের দোতারা
মাটিকে জড়িয়ে ধরা সন্তান আমরা।
আমন ধানে, শিশিরে উঁকি দিয়ে ভাবি
এই শীতকালে গানের দলেই থাকব।
আম্মার আঁচলে মুখ মুছে
পৃথিবী দেখব পিছু পিছু
সহজ থাকলে ঝলসে ওঠে না কিছু!
জল মোহনার এই ডুপিখালি
ঘরবাড়ি ছোট হলে প্রাচীর লাগে না।
এই বৃষ্টি প্লাবনের দেশে
আমাকে গুলি করলে
কেঁপে ওঠে প্রকৃতির এজলাস।
এই মাটি বাউল-ফকির-সাধুর আস্তানা
যদি চেপে ধরো দীন-সাধনার গলা
আস্তে আস্তে সরে যাবে কার্তিক ধানের মাটি।
মাটিকে জড়িয়ে ধরা সন্তান আমরা
সারা রাত গান করে নিম কাঠের দোতারা।
স্মৃতি
স্মৃতি, হতশ্রী বাড়ির মতো
পুরোনো হলেও জলপল্লি, শশা ফুল।
সব শূন্য মাঠে কার্তিকের নির্জন সূর্যাস্ত
ফুরিয়ে যাওয়ার আগেও একটা পাখির
অপেক্ষা করছে।
জীবন অপেক্ষা ছাড়া কিছু নয়।
আম্মার সিন্দুক খুলে
এই যে শীতের বাতাস ঢুকছে
এতেই বেঁচে উঠেছি
দিঘির পাড়ে ঘুরছি।
নৌকার গলুই খুলে নেওয়া প্রাচীন শত্রুতা
আমার ভূমিও কেড়ে নিবে
যেমন কেড়ে নিয়েছে হাজং, ডলু, মান্দিগ্রাম।
সব কেড়ে নিয়ো, বসবাসের স্মৃতিটা কেড়ো না।
শালবনে
এই শালবনে
পাতায় মোড়ানো ভোরে
কবি কিছু শব্দাবলি।
ভূমি ধারণায় সে–ও প্রাচীন সন্ন্যাসী
কর্ষক আচিক, তাতারারাবুগা।
মাটি তার বশে থাকে
শিউলি তলায় শীতের তারিখ।
এই দীর্ঘ দুঃসময়ে
বেঁচে থাকা প্রথা যদি
ভেঙে দেয় সজারু উন্মাদ
আয়ু পেলে কবি
সিল্কের কার্তিকে লিখে রাখা
পঙ্ক্তিগুলো জনপদের এজাহার।