জর্জ ফ্লয়েডের জন্য
জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণে লেখা এই কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে পৃথিবীর সব নিপীড়িত মানুষের প্রতি ভালোবাসা।
জর্জ ফ্লয়েড, তোমার শিশুকন্যার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি
তোমার মৃত্যু নিয়ে আমেরিকায় এখন যে ঝড়, একদিন থেমে যাবে
প্রতিবাদমুখর মানুষগুলো ফিরে যাবে যার যার ঘরে
কিন্তু তোমার শিশুকন্যার চোখের জল কখনো মুছবে না ।
জর্জ ফ্লয়েড, তোমার পয়লা কসুর গায়ের রং
একুশ শতকের অসম্ভব সম্ভবের দুনিয়ায় সর্বত্র সাদারা
ছড়ি ঘোরাচ্ছে। কালোরা বেঁচে আছে তাদের অনুকম্পায়
তোমার দোসরা কসুর একজন কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও তুমি
শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হুকুম নির্দ্বিধায় মেনে নাওনি
তাঁকে প্রশ্ন করেছো—এই বেয়াদবি কী করে মেনে নেয়
সভ্যতার পাহারাদার আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ?
জর্জ ফ্লয়েড, আমি হলফ করে বলতে পারি ২৫ মের আগে
তোমার কোনো ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়নি; টিভির অনুসন্ধানী
সাংবাদিকের চোখ পড়েনি তোমার ওপর; কালোরা খবর হয় মৃত্যুর পর।
ডেরেক শোভিন নামের হার্মাদ পুলিশ তোমাকে রাতারাতি
বিখ্যাত করে দিল; অথচ তুমি বিখ্যাত হতে চাওনি, বাঁচতে চেয়েছিলে।
তুমি যতই আকুতি জানিয়েছ, ততই লোকটার খুনের স্পৃহা বেড়ে গেল
যেন ক্ষুধার্ত বাজপাখি হাতের নাগালে পেয়ে গেছে মোক্ষম শিকার।
এক দুই তিন করে পার হলো ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাদগ্রস্ত ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড
সবচেয়ে ভয়ংকর ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড
শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাঁটুর নিচে নির্বাপিত হলো একটি জীবন
কালোদের জীবন যেন হাওলা করা আছে সাদাদের কাছে।
জর্জ ফ্লয়েড, সেদিন তোমার মৃত্যুতে কেঁপে উঠেছিল মেনিয়াপোলিসের
জনাকীর্ণ সড়ক, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল আকাশ। আর তোমার রোদনভরা
বাতাসের গতি এত তীব্র ছিল যে লাখ লাখ মানুষ নেমে এল রাজপথে
ট্রাম্পের অসভ্য চিৎকার কিংবা কারফিউ থামাতে পারেনি সে জনস্রোত
শহরে শহরে প্রতিধ্বনিত হলো, ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারস’
আমরা জানি, আন্দোলন যত প্রবল হোক না কেন, সাদাদের
খুনের তৃষ্ণা মিটবে না। ভবিষ্যতে আর কোনো শোভিনের হাতে
আরও কোনো ফ্লয়েড খুন হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে সাদাদের জন্য
স্বর্গ বানাতে চান। কালোদের হত্যা না করে তা কি সম্ভব?
জর্জ ফ্লয়েড, তোমাকে অভিবাদন জানাই; একজন সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে
তুমি আমেরিকার মিথ্যে অহংকার চূর্ণ করে দিয়েছ।
বাতাসে কান পাতলে এখনো শুনতে পাই তোমার শেষ আকুতি—
আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছি না।
তোমার কণ্ঠে সব নিপীড়িত মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে
আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছি না।
তোমার কণ্ঠে সব কালো মানুষের হাহাকার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছি না।
অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]