শামসুর রাহমানের অগ্রন্থিত কবিতা
নির্জন মুহূর্তের কবিতা
আজ ২৩ অক্টোবর বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন
শহরের সূর্যজ্বলা কঠিন দুপুর,
ধু ধু তেপান্তর আর তেরো নদী সাত সমুদ্দুর
রয়েছে তোমার মনে। ট্রাফিকের চাকায় চাকায়,
মানুষের পায়ে পায়ে মুহূর্তের নরম পাখারা ঝরে যায়।।
এখন ধোঁয়াটে মন। প্রতিদিন পৃথিবীর আকাশের
নিচে
কোলাহল বেড়ে যায়: (নরম চোখের হাসি হয়েছে
বিলীন!)
রাত্রির কাজল নদী
চোখের কিনার ঘিরে গান নাহি গায়;
সন্ধ্যার তারার আলো
পৃথিবীর মনে আজ হাতছানি দেয় নাকো আর।
হরিণের চিড়খাওয়া কত না হৃদয়
বনের হাওয়ায় আর ঝোপের ছায়ায়
কণা কণা বেদনা ছড়ায়।।
এখন ধোঁয়াটে মন। প্রতিদিন পৃথিবীর আকাশের
নিচে
কোলাহল বেড়ে যায়।।
হয়তো আরেক ভোরে: কোনো এক পাখিডাকা ভোরে
তুমি আর আমি
প্রাচীন বটের নিচে
বসিব পুকুরঘাটে নীরবে, নির্জনে।
হয়তো হলুদ পাতা,
দু–একটি মরা পাতা ঝরে যাবে আমাদের পায়ের
তলায়;
সকালের নরম হাওয়ায়।
ঘাসের শরীর ছুঁয়ে পাখিদের বুক
আবারো উধাও হবে: আবারো পাখির কত
হৃদয় উন্মুখ।
সকালের নরম হাওয়ায়
ছোট ছোট কত ভাঙা ঢেউয়ের ওপর
পাখির সবুজ ছায়া কেঁপে কেঁপে যাবে!
সেদিন পুকুরঘাটে বিস্ময়ের অকম্প সীমায়
তুমি আর আমি
প্রাচীন বটের নিচে হয়তো তন্ময়!
হয়তো আরেক ভোরে: কোনো এক পাখিডাকা
ভোরে।।
তোমার হাতের ঢিল কত ঢেউ তুলে, ধ্বনি তুলে
ডুবে যাবে জলের ভিতর—
হয়তো সেদিন আর থাকবে না কোলাহল
পৃথিবীর আকাশের নিচে!
তোমার হঠাৎ হাসি, দু–একটি মৃদু কথা বুঝি
সময়ের কবোষ্ণ কপোলে
কয়েক মুহূর্ত শুধু টোল ফেলে যাবে
কোনো এক পাখিডাকা ভোরে।
শামসুর রাহমানের এই কবিতাটি প্রথম ছাপা হয়েছিল মাহে নও পত্রিকায়, ১৯৫১ সালে। কবি তখন ২২ বছরের তরুণ। তাঁর প্রথম জীবনের লেখালেখির চিহ্ন আছে এই কবিতায়। কবিতাটি পাওয়া গেছে অধ্যাপক ভূঁইয়া ইকবালের সৌজন্যে।