মানুষ একাকী এক মিথ

‘ফুল, নাকি লরি—কে যে আজ জ্বলে উঠবে সহসা রাজপথে, অথবা বড় রাস্তার ধারে দাঁড়ানো আতঙ্কবাদী এই কৃষ্ণচূড়া...’—এই দীর্ঘ কবিতার পরতে পরতে উদ্ভাসিত হয়েছে সময়ের এক বাস্তব ও জাদুবাস্তবতার আলো–হাওয়া।

কলম যা লিখছে তা আসলেই অনুযোগ—
বৃথা বাঁচার আরও এক স্বপ্নদেশ,
বৃথাই মানুষ পথ চলে, গান গায়, ছবি আঁকে,
ভালোবাসে, কিংবা ঘৃণাও করে, এমনকি খুন করে অতি সংগোপনে,
এমনকি একই নিয়মে চুমোও খায়, শুয়ে পড়ে ঘাসের আড়ালে নগ্ন,  
প্রকাশ্য হত্যার ভেতর এতটা দ্বেষ থাকে যে খুনিরা পালাতে চায় না,
প্রকাশ্য প্রেমের ভেতরও এতটাই প্রাণ থাকে,
দ্রোহের ভেতর সত্যি প্রেম, হিংসা ও দ্বেষ মিশে গেলে
যে যেকোনো জায়গায়,
যেকোনো মুহূর্তে বারুদহীন ম্যাচের বাক্স জ্বলে উঠতে থাকবে,
পেট্রলের লরি কৃষ্ণচূড়ার ফুলের হয়ে
প্রাকৃতিকভাবে বিস্ফোরিত হতে থাকবে হাওয়ায়
বা বড় রাস্তায় বা শাসকের পথে,  
ফুল, নাকি লরি—কে যে আজ
জ্বলে উঠবে সহসা রাজপথে,
অথবা বড় রাস্তার ধারে
দাঁড়ানো আতঙ্কবাদী এই কৃষ্ণচূড়া,
তার পাপড়ির ভেতরে লুকানো
আবরুখোলা ধাতুর পরাগধানী
সে খুলে দেখাবে আমাদের,
ফলের জৈব গ্রেনেড ফুটে যেতে পারে শাসকের সমাবেশে।

আজ ফুলও সন্দেহের তালিকায়
চলে গিয়েছে শাসকের কাছে—
এমনই এক সময় বইছে সহসা এখানে।

যেনবা হাওয়ায় ঝরে যাচ্ছে ফুল,
যেনবা হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে ঘ্রাণ,
হাওয়াটা আজকে ফিলিং ভেরি কুল,
যেনবা হাওয়ায় লেগেছে দূষণ,
যেনবা হাওয়ায় ফেটে যাচ্ছে তোমার ব্রণ
মাস শেষের ডিম্বাণুর মতন।
হতাশা কাটানোর ভানে চলুন সাজেক পাহাড়ে
গিয়ে শুয়ে থাকি ইকোপার্কে,
চলুন সমুদ্রে যাই,
কিংবা বনের ভেতরে মেতে উঠি নেশা ও তামাকে,
আর মাঘী পূর্ণিমায়
পাহাড়ের আড়ালে যে ঝরনা
তার শীত শীতে জলে শুয়ে আছ তুমি,
যেনবা একাই তুমি রজরত চল্লিশজন কম বয়সী নারী
ঝরনার শীতল জলে শায়িত শরীর,
তার হাঁমুখ ঈষদুষ্ণ মন,
যেনবা হাওয়ায় ফেটে যাচ্ছে তোমার ব্রণ
মাস শেষের ডিম্বাণুর মতন।

আর এরই ভেতর
আমার মায়ের সাথে দেখা হয়ে যায়,
আকাশে উড়ন্ত, আলাদিনের গালিচায়
তিনি উড়ছেন,
মনে হয় স্বপ্নে বা ঘুমে বা জাগরণে,
তার পিঠে গেঁথে দেওয়া হয়েছে শুভ্র ডানাসহ দুটো শাবল।
এমনই এক সময় বইছে সহসা এখানে।

কলম যা লিখছে তা আসলেই অনুযোগ—
বৃথা বাঁচার আরও এক স্বপ্নদেশ।

ব্যাকরণ-স্কুলে সাদা চকে লেখা আমার সমস্ত স্বপ্ন,
ব্যাকবোর্ডের মতো কালো,
আর শুনেছি ব্ল্যাকহোল থেকে আলোরা পারে না উতরে যেতে সদূরে,
এই দুনিয়ায় আলো নয় সর্বগামী, আলো নয় তমোহর,
আমার বুকের ভেতর আটকে যাওয়া আলো আর সময়,
আমার গলায় আটকে যাওয়া কথা আর ভাষা,
আমার হাড়ের ভেতর আটকে যাওয়া রেডিয়াম,
খুলির ভেতর আটকে যাওয়া সভ্যতা,  
রক্তে হেঁটে চলা জৈব ন্যানো-স্পাই কণা,
সব আজ আলোর গতিতে বের হয়ে যেতে চাইছে ত্বকের বাঁধ ভেঙে,
পারছে না।
আর শুনেছি ব্ল্যাকহোল থেকে আলোরা পারে না উতরে যেতে সদূরে,
এই দুনিয়ায় আলো নয় সর্বগামী, আলো নয় তমোহর,
আমি কি তাহলে মহাকাশে ডুব দেওয়া নক্ষত্র?
নাকি হারানো হাবল—
আমি কি তাহলে জনপদে দৃশ্যমান অদৃশ্য শরীর।

আমি পারব না।

অথচ উড়ন্ত গালিচায় চড়ে রূপকথার যে পৃথিবী
তা–ও মিথ্যে বলে মনে হয়,
মনে হয় প্রেমিকার চিঠি আর শরীরী অঘ্রাণ
আমাকে নিয়ে যায় সেই সবুজ পাহাড়ে,
সেখানে ঝরনায় শুয়ে থাকে তাদের আদিগন্ত দীর্ঘ এক নগ্নতা,
তার হাঁমুখ উদগ্র মন,
যেনবা হাওয়ায় ফেটে যাচ্ছে তোমার ব্রণ
মাস শেষের ডিম্বাণুর মতন।
আর স্বচ্ছ জলের গভীরে মৃত মা মাছ,
তার চারপাশে
শিশু মাছগুলোর মায়াবী চোখ খুব স্থির, অনুভূতিহীন
ঢেউয়ে ডোবে কি ভাসে, দোলে;
শিশু মাছগুলোর মায়াবী চোখ খুব স্থির, অনুভূতিহীন।
টালমাটাল হাঁটছি নেশা ও তামাকে,
মাঘী পূর্ণিমার রাত যেন একটা জ্বলন্ত উনুন,
তাতে জোছনার তরল পুড়ছে টগবগ করে,
যেন ইলেকট্রিক কেটলির ভেতর ফুটছে মধ্যরাতের নির্জনতা,
চন্দ্রালোকের ধোঁয়া ওঠা গ্যাস চেম্বারের ভেতর
আমি কমলার বনে দৌড়াচ্ছি,
এই মাঘী পূর্ণিমার রাতে হালকা শীতল হাওয়ায়
প্রজাপতি ধরতে ছুটছি আমি,
জনপদে পৌঁছে দেখি জোনাকের আগুনে
তোমাদের বাড়ি পুড়ছে, আর হাসনুহেনায় ভেজা পূর্ণিমায়
আমি তোমার মধ্যরাতের মাতাল প্রেমিক।
এই রাতের পুড়ে যাওয়া দেখছি।

অথচ উড়ন্ত গালিচায় চড়ে রূপকথার যে পৃথিবী
তা–ও মিথ্যে বলে মনে হয়,
কপালের চন্দন টিপ বৃষ্টিতে মুছে যাবার পরও
আমি ঘ্রাণ পাই তার চন্দন-মাংসের,
ঘ্রাণ পাই তার রক্তের,
ঘাসের বনে শুয়ে আমরা শুনেছি বিবিধ পোকামাকড়ের ডাক,
কেন তারা ডাকে?
কৃষ্ণচূড়ার ফুল যতটা মিহি আওয়াজ করে বাতাস কেটে নামে মাটিতে,
সেই মিহি শব্দ আমি শুনেছি তার কোমল কোমরে, বুকের ভেতর,
তার স্বচ্ছ ত্বকের নিচে রক্তের হলাহল আমি জানি।

প্রকাশ্য প্রেমের ভেতরও এতটাই প্রাণ থাকে,
ফুল, নাকি লরি—কে যে আজ
জ্বলে উঠবে আমাদের শরীরে প্রকাশ্যে।

আমি দুনিয়ার স্বাদ বলতে তোমাকেই বুঝি।

এমন অরাজনৈতিক জীবন নিয়ে আমার কোনো হতাশাই নাই,
চলো তোমার বুকের ভেতর পোকমাকড়ের মিহি ডাক শুনি,
কৃষ্ণচূড়া ঝরতে থাকুক, বৃষ্টিতে তুমি ভিজে যেতে থাকো ঘাসের সবুজ বনে,
তোমার হলুদ শাড়ি ভিজতে থাকুক।

আর এরই ভেতর
আমার মায়ের সাথে দেখা হয়ে যায়,
আকাশে উড়ন্ত, আলাদিনের গালিচায়
তিনি উড়ছেন,
মনে হয় স্বপ্নে বা ঘুমে বা জাগরণে,
তার পিঠে গেঁথে দেওয়া হয়েছে শুভ্র ডানাসহ দুটো শাবল।
এমনই এক সময় বইছে সহসা এখানে
আমাদের সুতীব্র প্রেমের মরসুমে।

পৃথিবীতে সূর্যের ধারণাই কারও নেই
এ এমন এক নষ্ট মানচিত্রে ঠাসা রক্ত-ইতিহাস,
পচা মাংসের বর্তমান,
দাউ দাউ ভবিষ্যৎ,
এমনকি অণুজীবহীন;

আর মানুষ একাকী এক মিথ।

কেবল আছে মাটির অনুভব মাধ্যাকর্ষণজনিত, অনুভূতিহীন—
স্যাঁতসেঁতে হিমশীতল বিক্ষত মাটি,
হাঁটলেই আঙুলের ফাঁক দিয়ে কেঁচোর উত্থান,
এ মাটি ওদের জন্ম জন্ম,
ক্ষত চোখে পুঁজ আর আমিষী হলদে পোকা,
কী দেখব, হাত পুড়ে গিয়েছে বাজে পোড়া বৃক্ষের ডালের মতো,
দু–একটি ফুল তবু যদি ফোটে কোনো বর্ষায় পানিতে শরীরে, আশা নেই, আকাশও তোমার দখলে, মেঘ হবে কিসে!

পৃথিবীতে সূর্যের ধারণাই কারও নেই
এ এমন এক নষ্ট মানচিত্র,
কোনো পাখি নেই,
এমনকি জীবন্ত পাখির পালকের  ঘ্রাণ উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
নেমে আসবে অনেক দূর কোনো আকাশ থেকে অনন্তের আলো ছুঁয়ে।

বাঁচা মানে মৃতুকে পরখ করা নয়,
আত্মহত্যার প্রস্তুতি।

এ এমন এক সবুজ গ্রহের গল্প
শিশুটি কামড়ে ধরেছে মায়ের স্তন,
রক্ত খেলো, খেয়ে নিল, তারপর আজন্ম অভুক্ত,
বাতাসে তেলাপোকা–ডানার মিহি ডায়নামিক আওয়াজ।
শকুনের পায়ে দড়ি বেঁধে ঘুড়ি ওড়ানো খেলছে মনুশিশু,
সেই আজন্ম অভুক্ত শিশু—
এ তো আমার চোখ ধাঁধানো উচ্ছল সমকাল

এ শহর মৃত নদী, নুয়ে পড়া পাড়,
আর তুমি একমাত্র বালিকা, যে কেউ,
যার বুকের ভেতর ফুল পতনের সুর,
সার্কাসতাঁবুতে দেখাচ্ছ,
আমি আর কিছু শুনতে পাই না বুকের গহিনে,
প্রেম তো দুটো মানুষ একসাথে নিঃসঙ্গ হওয়ার নাম।

এত আওয়াজ আমাদের চারপাশ, মেশিন মেশিন দিন,
এত সিমেন্টের পাথরকুচি ঝড়,
উঠে চলেছে দরদালান ভিড়,
মেট্রোরেলের গভীর সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রতিটা লোক
পৌঁচ্ছে যেতে চাইছে দ্রুত স্বর্গের দরজায়,
তাদের কড়া নাড়ার লোভের হিসহিসে
মেশিনগুলো আরও দ্রুত বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে
মানুষকে শাসন করার জন্য।

আমরা আসলে পোশাকহীন এক মেশিনের নগ্ন অদৃশ্য রাজার জন্য বসে আছি।

জোনাকির আগুনে পুড়তে থাকা
তোমাদের আমগাছওয়ালা বাড়িতে
সত্যি কারা যেন আগুন দিয়ে যায় একদিন,
যে ঘরের আকাশের সাথে যোগ, সে ঘরে অভাব বাড়ে,
তুমি রুটি বানানোর কৃত্রিম বুদ্ধিমান একটা মেশিন
বিক্রির জন্য নেচে যাচ্ছে একটা পাপেটের মতো,
ভাইব্রেটর দিয়ে ভুলে যেতে চাইছ প্রেম,
তোমার শরীর কোথায় জানো!
নেমে দেখি সাদা সাদা পেস্তা মেঘ—
আমি তোমাকে চাই বলেই
আমার বিছানায় শুয়ে আছে সেক্স-ডল,
তার প্লাস্টিকের লক্ষ যোনি পার হয়েও
তোমাকে জন্ম দিতে পারছি না আমি,
জন্ম নিতে পারছি না,
তোমাকে ছাড়া পুরুষ হয়ে উঠতে পারছি না, জেনো!
যেন ইলেকট্রিক কেটলির ভেতর ফুটছে মধ্যরাতের নির্জনতা,
চন্দ্রালোকের ধোঁয়া ওঠা গ্যাস চেম্বারের ভেতর
আমি কমলার বনে দৌড়াচ্ছি,
এই মাঘী পূর্ণিমার রাতে হালকা শীতল হাওয়ায়
প্রজাপতি ধরতে ছুটছি আমি,
জনপদে পৌঁচ্ছে দেখি জোনাকের আগুনে
তোমাদের বাড়ি পুড়ছে, আর হাসনুহেনায় ভেজা পূর্ণিমায়
আমি তোমার মধ্যরাতের মাতাল প্রেমিক।

কেউ নেই পাশে, কেউ নেই
আলো ছায়া, আলো ছায়া,
ঘরে ফিরছি একাকী,
বহু রাত বহু রাত আমি জানি,
দুঃখ বুঝি;
আমিও কারও কারও মতো বিকেলে বাগানে হাঁটা মানুষ, বিবেকী,
বরফের মতো ক্রমশ গলতে থাকা,
নিম্নমখুী, গতিবিজ্ঞানময়, নির্জনে অধোগামী;
আমার ছায়ার শরীর বেয়ে ওঠে স্বর্ণলতা,
কোনো কোনো দিন দেহের ছায়ায় ঝুলে পড়ে বাস্তব মৌচাক,
পাঁড়মাতালের মতো এমনকি ঘোরের ভেতর
কোনো দিন খুঁজে পাইনি সঠিক দরজা;
অ্যাকুয়ারিয়ামে দুর্লভ মাছ,
তারাও হাত নাড়ে,  
সেই ইশারায় আমার শরীর হঠাৎ অগণিত মার্বেল হয়ে
ধসে পড়েছে পরিচ্ছন্ন চকচকে টাইলসে,
মেঝেতে কাচের গোল বল গড়িয়ে যাওয়ার শব্দে
একক আমি লক্ষ লক্ষ ভগ্নাংশ হয়ে ছুটে যাচ্ছি দিগ্‌বিদিক
তবু যাওয়া হলো সবদিকে, সর্বমুখে—অন্তত এভাবে।
ধসে যাবার অছিলায় আমি গড়িয়ে যাচ্ছি দিশাহীন

তবে ধরো গান, ধরো আনন্দসংগীত।

এ এমন এক পৃথিবী, এ এমন এক রূপকথা

একটা চুল্লির কথা ভাবি যেখানে চাঁদের আলো পুড়ছে অদৃশ্যে,
একটা চিমনির কথা ভাবি যেখানে সূর্যালোক ধোঁয়া হয়ে উড়ছে,
একটু নিজের কথা ভাবি যা সমকালীন অথচ প্রাগৈতিহাসিক
সূর্যদেবতার মতো সব দেখছে শুনছে,
গর্ভের শিশুরা নড়ে উঠছে দুনিয়া দেখার বাসনায়,
একদিন মাতৃজঠরের রক্ত–মাংস, হাড়ের খাঁচা থেকে বের হয়ে
তারা নিশ্চয়ই পাবে মুক্ত দুনিয়ার হাওয়া।
আর শুনেছি ব্ল্যাকহোল থেকে আলোরা পারে না উতরে যেতে সুদূরে,
এই দুনিয়ায় আলো নয় সর্বগামী, আলো নয় তমোহর,
আমি কি তাহলে মহাকাশে ডুব দেওয়া নক্ষত্র?
নাকি হারানো হাবল—
আমি কি তাহলে জনপদে দৃশ্যমান অদৃশ্য শরীর।

আর আমি কাল্পনিককালে সময় মাপতে মোম জ্বেলে বসে আছি,
পানি জমানো কলস ভেঙে বসে আছি তৃষ্ণাহীন,
আমি বসে আছি, বসে আছি তো আছিই দীর্ঘদিন,
রাত গভীরে গেলে যখন আকাশ খুলে ধরে
তার অন্ধকার অদৃশ্য দেরাজ,
তারারা ফুটে উঠছে, সংকেত পাঠায় আমাদের,
চলো খোলা আকাশের নিচে,
চলো,
আমি গুনতে থাকব অর্থহীন এই জীবন ও তার বাঁচতে না চাওয়ার ইচ্ছা।
ব্যাকুল আমাকে আজ তুলে ধরো এই আকাশের পানে,
আলোর নির্মিত একটা মই বেয়ে আমি পার হয়ে যেতে চাই হাওয়ামণ্ডল,
আমার লাগে না ভালো, প্রভু, এই নিঃঙ্গতা,
আমার লাগে না ভালো প্রতিদিন
কেন অস্তিত্বের অর্থ নিয়ে আমাকে জাগতে হবে রোজ।
দেখো স্বপ্নে,
এই মাঘী পূর্ণিমার রাতে হালকা শীতল হাওয়ায়
প্রজাপতি ধরতে ছুটছি আমি,
জনপদে পৌঁচ্ছে দেখি জোনাকের আগুনে
তোমাদের বাড়ি পুড়ছে আর হাসনুহেনায় ভেজা পূর্ণিমায়
আমি তোমার মধ্যরাতের মাতাল প্রেমিক।

এই অস্তিত্বের কোনো মানে নেই জানো,
ফলে তুমিই লুট করতে পারো প্রাণ।

আপেল আজ নিজেই কেটে পড়ে আছে তোমার রান্নাঘরে।

বন্ধু, তুমি উড়তে চলেছ সমুদ্র পাখির সাথে,
কী ঠোঁটে ফিরবে? নীলিমার তৃষ্ণা নিয়ে ব্যাকুল কাতর,
তোমার শাড়ির পাড়ে ময়ূর পালক–রং,
রংধনু নূপুর বাজছে পায়ে,
শুভদিন!
শুভদিন!
কী দারুণ শুভদিন!
আর পুরোনো মন্দির গাম্ভীর্যে নিথর, চুপচাপ
চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে থাকে নবগঙ্গার কূলে,
সমস্ত দিনের গিলে ফেলা তাপ বিকিরণ করে শীতল বাতাসে
তেমনি আমার ক্ষয়,
তেমনি উগলে ফেলি নিজের আত্মাকে তোমার সমীপে।

কী যেন নেই, কী যেন নেই,
না হয় ছায়াকে প্রণাম করব রোজ
চুরচুর ভাঙা আয়নায় মুখ দেখব—কতটা ভেঙে গেছে কাঙাল স্পন্দিত ছায়া—
আমার ছায়ার ছায়া রক্ত–মাংসের এই আমি,
ছায়াটির আরও বেশি স্বচ্ছ চোখ
আরও বেশি অস্বীকার।
পা–ই শুধু হেঁটে চলেছে আমার সাথে ছন্দহীন;
মাথার ওপর ছিল এক চাঁদ, বুড়ি চাঁদ;
চাঁদের বুকের সেলাইবুড়ির সুতোর টানে
উল্টে যাচ্ছে সামুদ্রিক নোনাজল,
জল বুঝি তৃষ্ণা মেটাবে চাঁদের,
মহাসমুদ্রের গভীরে লুকানো শৈবাল শুক্রাণু
ভেসে যাচ্ছে জল হাতড়ে
জলজ মিলনের মধুপূর্ণিমায়,
সৈকতের বালুতে লুকানো কচ্ছপ শিশুটি দিল প্রথম সাঁতার
এক শুভ পৃথিবীর ভর নিয়ে বুকে।
আকাশে কোথাও তারা ছিল না
গাছে গাছে ফুটেছে সপ্তর্ষি ফুল,
কল্পবৃক্ষের বনে চন্দ্রলোক থেকে নামছে রঙিন প্রজাপতি,
জোনাকি চলেছে মহাকাশে নক্ষত্রের সাজে,
আজ নক্ষত্রী স্বাতীর বিয়ে,

সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড আজ আমার পৃথিবী,
যত দূর চোখ যায় সজীব পার্থিব, সাধারণ—
আমার মায়ের মতন।
অন্যআলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]