তোমার বুকের ফুটো অকস্মাৎ বিসুভিয়াসের
জীবন্ত মুখের মতো মনে হয়েছিল,
ফুটোর গভীর থেকে আকাশের দিকে
উঠে এল উষ্ণ লাভাস্রোত—
মুহূর্তেই ভাঙল ভুল,
তোমার দিকেই ক্রল করে যেতে যেতে দেখি
সুদীর্ঘ খরার পর প্রথম বৃষ্টির মতো
তৃষ্ণার্ত বাংলার মাটি বুক পেতে নেয়
তোমার রক্তের স্রোতে—
তোমার সবুজ শার্ট গাঢ় রক্তে ভেজা;
সেই শার্ট অবিনাশী বাংলার পতাকা
আজও ওড়ে বাংলার সুনীল আকাশে
মনে পড়ে দুদিন আগেই
ধবল জলের বুকে তোমার সঙ্গেই আমি
সারা দিন পাড়ি দিই ধলেশ্বরীর ভাটিতে—
ছোট্ট পাতাম ডিঙি প্রগাঢ় সন্ধ্যার মুখে
নদী থেকে ঢুকল সরু খালে
সারা দিন রোদবৃষ্টি, সারা দিন নির্জলা উপোস
এগাঁও–ওগাঁও ঘুরে শত্রুর চোখ ফাঁকি দিয়ে
অবসন্ন শেষ রাতে
ইয়াকুব মোল্লার ঘাটে ক্লান্ত নাও বাঁধি
ঘুমচোখে মোল্লা উঠে আসে
তিরিশ মিনিট পরে আসে আলুভাজি-মুগডাল
বিরুই চালের তপ্ত ফেনাভাত থেকে
সাদা ভাপ নাকে টেনে নিতে নিতে তুমি বলেছিলে:
এই যুদ্ধে জিতব আমরাই—এই ভাতের শপথ
বাঙালির ক্ষুধাপেটে তুলে দেব তপ্ত ডালভাত—
কতকাল কেটে গেছে, মানুষ ভুলেছে কত কিছু
ধোঁয়া ওঠা তপ্ত ডালভাত
আজও মুখে তুলতে পারি না।