আমাদের চায়ের কাপ থেকে দু–চারটে সাদা লেখা উবে যাচ্ছে দেখে
দাঁড়িয়ে রয়েছি পথে পথে
তুমি দেখতে পাবে না জেনে বসন্তের আগেই
মর্মরিত হয়ে গেছে ভোর
ধানি জমির পাশে হেঁটে যাওয়া উষাকালে
তবু চিৎকার করছে হালটের নিঃসঙ্গ শালিক
কোলাহলের আগের গল্পে ভেসে যাচ্ছে বিষণ্ন বৃষ্টিরেখা
ভেসে যাচ্ছে প্রতিফলনের স্মৃতি, গোরখাদকের নির্বিকার মাটি,
ভেসে যাচ্ছে শববাহকের কাঁধ!
২.
বিপরীত দিক থেকে এসে জনশূন্য তেমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি
দুহাতে সন্ধিপত্র, দুহাতে চুক্তিনামা—আপসের চোরাবালি
ঢেকে রেখেছে দিগন্ত-ময়ূর
নন্দনের খোলস ভেঙে আমাদের সমুদ্রসীমায় তবু চোরাবালি
ঝাউগাছের পাশে কেন তুমি ঘুমিয়ে থাকবে এত কাল?
আমি গৃহহীন পাখিদের বাউলগানের গোধূলিবেলায়
যে আকাশ উন্মুক্ত রেখেছি
সেখানে তোমার জন্য জানালা রাখিনি!
৩.
অথবা জানালা ছিল, আমরা মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি তার মুখ!
যুদ্ধ জয়ের আগে আমাদের কোনো সাম্রাজ্য ছিল না
অথবা যুদ্ধ জয়ের পরের স্মৃতিকথা
আমার মাটির গায়ে আম–জাম–কাঁঠালের পাতা
প্যাপিরাসে পাথর লিখিনি বলে সুপ্রাচীন নয় এই বদ্বীপের করতল
গৌড় জনপদ আমি খুঁজছি, আমি খুঁজে ফিরছি
অজানা মহামারির শ্রুতি-ইতিহাস
কমলাঙ্ক আমি খুঁজছি, সমতট আমি খুঁজছি
তৃষ্ণা মৌজার পথে পথে খুঁজে ফিরছি আমার গ্রামের ইতিকথা
প্যাপিরাস–লিখিত অহম আমার কবিতা নয়
আমার মাটির গন্ধ আমার কবিতা।
৪.
জানালাটা খুলে দাও, জবুথবু বৃষ্টির আগে নির্দিষ্ট বিন্দুতে
আমি তোমাকেই দেখি
তুমি দেখতে পাবে না, তবু এই ভোর তোমার জন্য লেখা
হেঁটে হেঁটে আমি যেখানে এসেছি, সেখানে নদীর তীরে
অন্ধকার লিখি না আমি,
শ্রুত লিখি, স্মৃতি লিখি, বিস্মরণ লিখি
মাটির প্রদীপ লিখি।
ভালোবেসে খুলে রাখি পৃথিবীর হারানো জানালা।