চৈত্র মাস! সর্বনাশ!

‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’—কেবল রবীন্দ্রনাথ এটি লিখেছিলেন বলেই নয়, চৈত্র মাস নানা কারণেই সর্বনাশা। এ মাসের সূত্রেই বাংলা ভাষায় এসেছে ‘চৈতা পাগল’ শব্দটি। আদতে চৈত্র মাস কিন্তু কম ঘটনপটীয়সী নয়।

চৈত্রের দাবদাহে মরূদ্যান হলো প্রেম। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি প্রেম টানলে আসে বিরহজাত ‘সর্বনাশ’অলংকরণ: আরাফাত করিম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিণত বয়সে এক সর্বনাশের মুখোমুখি পড়েছিলেন। ১৯৩৪ সালের শ্রাবণ মাসে ৭৩ বছর বয়সে তিনি লিখলেন, ‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস/ তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’ কোন সে রূপবতীর চোখে চোখ রেখে ভস্ম হলেন তিনি? কে জানে! আমের বনের দোলা, ঝরে পড়া মুকুল, মঞ্জরিত শাখা আর মৌমাছিদের গুঞ্জরিত পাখা যেন বয়ে এনেছিল বসন্তের নিশ্বাস। কোনো এক চৈত্রের গল্পকে তিনি সাজিয়ে তুলেছেন শ্রাবণ মাসে। আহা, এতটাই সর্বনাশ!

ঘটনা যা-ই ঘটুক, বাঙালির পিছু ছাড়েনি সর্বনাশা চৈত্র। একে তো গরম, তার ওপর নতুন পাতার সঙ্গে ঝরে পড়া পাতার বিরহবিচ্ছেদ। কেমন একটা রুক্ষ রুক্ষ ভাব। এই যেমন আজকের চৈত্রদিন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বাইরে ঝিঁঝিপোকার ডাক। তেতে ওঠা রোদ। লু হাওয়া বলতে যেমন বোঝায়, তেমন এক গরম বাতাস ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতর। জানালার ওপাশে স্তব্ধ হয়ে আছে আম, কামরাঙা, জারুল, দেবদারুগাছের সারি। প্রত্যেকের গায়ে যেন লেগে আছে নোনতা বুনো গন্ধ।

চৈত্রের শৈশবে আমরা ছুটে যেতাম বরফকলের কাছে। চার আনা, আট আনা পয়সা দিয়ে কিনে খেতাম সাদা বরফ, লাল-সবুজ আইসক্রিম অথবা নারকেল-পাউরুটি দেওয়া মালাই। হিম হিম ঠান্ডায় জুড়িয়ে যেত শরীর। চৈত্র মাসে যাঁরা রোজা রাখার অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, তাঁরা জানেন ইফতারিতে লেবুপাতার গন্ধ, চিনি আর বরফ দেওয়া শরবতের স্বাদ কত মধুর হতে পারে! মাথায় ঘোল ঢালা নিয়ে যতই হাসাহাসি করি না কেন, এক শ দেড় শ বছর আগে চৈত্র–বৈশাখের তীব্র গরমে ঘোল আর মাঠাই ছিল পরম বন্ধু।

চৈত্র মাস সর্বনাশা। এর এমনই শরীর–মন–হৃদয় পোড়ানো গরম—কোল্ডড্রিংকস যাকে ‘কুল’ করতে পারে না; চৈত্র তাই কাউকে কাউকে ‘কিল’ করে ফেলে। অর্থাৎ কারও কারও বুকের ওপর জমে ওঠে বিরহের ভার। প্রমাণ আছে রবিঠাকুরের লেখাতেই। কবিতার নাম ‘বিরহ’। পাওয়া যাবে ক্ষণিকা কাব্যে। কবিতার প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপট চৈত্র মাস: খেতের গন্ধ, তপ্ত হাওয়া, ঘুঘুর ডাক, ভ্রমরের গুনগুন, কম্পমান ঝাউয়ের শাখা, শুকনো পথ, দগ্ধ মাঠ, ক্লান্ত গ্রাম, খরতর রোদ—সবকিছু ছাপিয়ে উঠেছে কারও না-থাকার অনুভূতি, করুণ এক অনুপস্থিতি। ঠাকুর লিখেছেন, ‘একলা আমি বাতায়নে/ শূন্য শয়ন ঘর।/ তুমি যখন গেলে তখন/ বেলা দুই-পহর।’

চৈত্র মাস কেবল বিরহ জাগিয়ে দেয় না, বানিয়ে ফেলে বদ্ধ উন্মাদ। তার উদাহরণ আছে বাংলাদেশে প্রচলিত খুব পরিচিত এক বাগ্​ধারায়, ‘চৈতা পাগল’। শোনা যায়, কেউ কেউ নাকি বছরব্যাপী ভালোই থাকেন; কেবল আচমকা পাগল হয়ে যান চৈত্র মাসে। অদ্ভুত কাণ্ড! তবে কি বিরহ এসে ঘাই মারে স্মৃতির দুয়ারে?

অথচ ফাল্গুনে? কচি কচি পাতার নিশ্বাসে জড়িয়ে থাকে প্রেম। ‘বসন্ত এসে গেছে’ বলে কী বাহাদুরিই না করি আমরা। শাখায় শাখায় জেগে ওঠে ফুল। আর পাখিরাও কণ্ঠ ভরে গায় সাত সুরের গান। মাসখানেক যেতে না যেতেই কী যেন ঘটে। রুক্ষতার ধূলি ওড়ে। শুকনো মাঠের বুকের ভেতর শোনা যায় বিচ্ছেদের চৌচির শব্দ। মনে মনে ভাবি, বাঙালির বসন্ত এত দ্রুত ফুরিয়ে যায় কেন? কেন মিলিয়ে যায় ‘বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ’? ফাল্গুন ফুরাতে না ফুরাতেই চৈত্রের দাবদাহ নিমেষে উধাও করে দেয় বসন্তের হাওয়া।

নবদম্পতি মাত্রই হানিমুনের সঙ্গে পরিচিত। বাংলায় ‘মধুচন্দ্রিমা’। ফাগুন হলো সেই মধুচন্দ্রিমা। তার পরেই চৈত্র এসে হানা দেয় মন-বসন্তের কুঞ্জবনে। হানা খেয়ে হানিমুন দৌড়ে পালায়। ‘হানিমুন পিরিয়ড’ ফুরিয়ে গেলে সম্পর্কের খরতাপ মন ও দেহে তো একটু আঁচড় কাটবেই।

কয়েক শ বছর পিছু হেঁটে গেলে দেখতে পাই, বাঙালির ফাগুন-চৈত্র প্রেম, বিরহ ও যৌনতায় মাখামাখি। এক বসন্তে সুন্দরী রাধার প্রতি ব্যাকুল কৃষ্ণ জানাচ্ছে, আম–জাম মুকুলিত হলো, ভারে নুয়ে পড়ল ডাল, নতুন যৌবন রাধা রাখবি কত কাল। তারপর বসন্তের সম্ভারে ভরে উঠল বৃন্দাবন। পত্রপুষ্পে সাজানো কুঞ্জে মিলিত হলো দুজন। অথচ ওই বসন্তেই রাধার অন্তরে জমে উঠল ব্যথার আবির। কৃষ্ণের আদরে আকুল রাধিকা ভাবছে, তরুর শাখায় ফুটে উঠেছে ফুল। চারদিকে বসন্তের বাতাস। আমের ডালে বসে ডাকছে কোকিল। অথচ রাধার বুকে কোকিলের সুর আঘাত করছে বিষমাখা বাণের মতো। কারণ কী?

কৃষ্ণ তত দিনে গুটিয়ে ফেলেছেন বৃন্দাবনের পালা। আর তখনই কিনা চৈত্র মাস! রাধা বলছে,‘আইল চৈত্র মাস।/ কী মোর বসতী আশ।/ নিফল যৌবনভারে।/ বিরহে আন্তর জ্বলে।’ চৈত্র মাস এল। কৃষ্ণ নেই, অতএব যৌবন নিষ্ফল। প্রেমের এই প্রকাশকেই তাত্ত্বিকেরা বলেন ‘রাধা-ভাব’। আর কৃষ্ণ? তিনি তো সেই রমণীমোহন। শাখায় শাখায় বিচরণই তার ধর্ম।

ফাল্গুন ও চৈত্রে কোনো ভেদ টানেননি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর। তাঁর বসন্তও ফুলে ফুলে ঢাকা। বাঙালি ‘বসন্ত’ শব্দটি লিখলেই যেহেতু কোকিল ডেকে ওঠে, সে কারণে ভারতচন্দ্রেও ডেকে উঠেছে হাজার কোকিল। এসবের মাঝখানেই তিনি লিখেছেন, ‘নারীর যৌবন বড় দুরন্ত/শরীরের মাঝে পোষে বসন্ত।’ পুরুষ কী পোষে?Ñএই জিজ্ঞাসার জবাব সম্ভবত কৃষ্ণই দেবেন। আর দেবেন সদাশয় মদন।

মদন হচ্ছেন কামদেব। বাঙালির বসন্তে তিনিই প্রধান অতিথি। সারা বছর আমাদের আঁধার-কালো ছায়ার সঙ্গে মিশে থাকেন। কিন্তু বসন্তে পরে নেন রঙিন পোশাক। পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে লেগে থাকে কামনার গন্ধ। প্রেমিক-প্রেমিকার বোঝাপড়া হচ্ছে না, দুজনেই ভাসিয়ে দিয়েছে অভিমানের নৌকা কিংবা ব্যাটেবলে মিলছে না, দূরত্ব ঘোচাতে সেখানেই হাজির হচ্ছেন মদন। আজকালকার বাংলা ভাষায় মদন বলতে হ্যাবলা ভ্যাবলা ক্যাবলাকান্ত ব্যক্তিকে বোঝালেও বাঙালির লেখাজোকায় মদন অত্যন্ত করিতকর্মা। জুড়ি বাঁধতে তার জুড়ি মেলা ভার। মদনের বাণে বিদ্ধ হলে আপনা-আপনিই প্রেম এসে হাজির হয়। প্রেমের সঙ্গে মিশে থাকে কাম।

চৈত্রের আরেক রসিক ছিলেন কবি নজরুল। তাঁকে বিহ্বল করেছে হোলিখেলা, চৈতালি চাঁদ। প্রিয়তমের খোঁপার জন্য তিনি বরাদ্দ রেখেছেন তারার ফুল। আর কানে পরাতে চেয়েছেন ‘চৈতি চাঁদের দুল’। অথচ সেই আহ্বান হারিয়ে গিয়েছে দূর পটভূমে। অন্য একটি গানে নজরুল জানাচ্ছেন, চৈতালি চাঁদনিরাতে তাঁর সঙ্গে জেগে আছে নতুন মালতীর কলি। কিন্তু কুঞ্জে আসেনি তাঁর মুখ্যতম চাঁদ অথবা প্রিয়তম জন। জোছনায় বনের আঁধার গেলেও মনের আঁধার তার গেল না। নজরুলেও চৈত্র এসেছে বিচ্ছেদের আকুলতা নিয়ে।

আমাদের একটি গড়পড়তা ধারণা এই যে কবিরাই বোধ হয় বসন্ত–মাতাল। আদতে তা নয়। বসন্তের সুরা কবিরা একটু অধিক পরিমাণে পান করেছেন সত্য, তবে অপরাপর লেখকেরাও কমবেশি ঢুলুঢুলু। প্রয়োজনমাফিক বসন্তের বর্ণনা দিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের শেষ পরিচ্ছেদে দেখা মিলল চৈত্রের। প্রেম অথবা বিরহের চৈত্র নয়; জীবন ও মরণের সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে দুজন মানুষ—নবকুমার ও কপালকুণ্ডলা। আর একটু পরেই মারাত্মক কিছু একটা ঘটবে। সন্দেহ ও অভিমানে কাঁপতে কাঁপতে নবকুমার জিজ্ঞেস করছে, ‘বলো তুমি অবিশ্বাসিনী নও। কপালকুণ্ডলার জবাবে সন্দেহ ঘুচে যায়। আর তখনই চৈত্রের বাতাস গঙ্গার বুক থেকে বয়ে নিয়ে আসে প্রবল এক ঢেউ। শেষ আলিঙ্গনের আগেই তীর ভেঙে লুটিয়ে পড়ে কপালকুণ্ডলা। ঝাঁপ দেয় নবকুমার। চৈত্রের অপ্রতিহত বাতাস ও ঢেউ আমাদের নিয়ে যায় জীবনের অন্ধকার নদীতে। সেখানে না আছে কপালকুণ্ডলা, না আছে নবকুমার।’

বলা ভালো, বঙ্কিমচন্দ্র মোটেও কাঠখোট্টা লেখক নন। বসন্ত নিয়ে রঙ্গ-রসিকতা করেছেন। কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসে সতর্ক ইঙ্গিতে দেখিয়েছেন রোহিণীর মতো নবীন বিধবা কী করে আহত হয় কোকিলের কুহু স্বরে। রোহিণীর জন্য যৌবন যেন ভারী বোঝা। বসন্তের কোকিলকে উদ্দেশ করে ঠাট্টার সুরে বঙ্কিমচন্দ্র বলছেন, বসন্তের কোকিল, প্রাণভরে ডাকো, আপত্তি নেই, কিন্তু সময় বুঝে ডাকবে। একটু পরেই দেখতে পাই, ‘পালভরা জাহাজে’র মতো সরোবর আলোকিত করে হেঁটে যাচ্ছে রোহিণী। কোকিল ডাকছে। উপন্যাসের গল্প ধরে আরেকটু এগিয়ে গেলে দেখতে পাই, কোকিলের ডাক শোনার মুহূর্তে রোহিণীর সঙ্গে নিত্যদিন সাক্ষাৎ ঘটে হবু প্রেমিক গোবিন্দলালের। বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, কোকিলের ডাকের সঙ্গে রোহিণীর মনের কী সম্পর্ক, তা তিনি বোঝাতে পারছেন না। আদতে যে কেউই বুঝতে পারবেন, মন ও শরীরের লড়াইয়ে কোকিল এবং বসন্ত এক প্রভাবক অনুষঙ্গ, যা জাগিয়ে তোলে রোহিণীর সংগুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে।

বাসনা থেকে মুক্তি কোথায়? চৈত্রসংক্রান্তি সেই মুক্তির ইশারা। মনভাঙা, ব্যথা, বিচ্ছেদ, অসুখবিসুখ—যা-ই বলুন না কেন, সবকিছুর জন্য মুশকিল আসান হিসেবে হাজির হয় চৈত্রসংক্রান্তি। যেন বলতে চায়, যা হওয়ার তা হয়েছে, এবার ঝেড়ে–মুছে উঠে পড়ুন। হয়তো তাই, রংচঙে মুখ ও মুখোশ নিয়ে বসে যায় চড়কের মেলা।

সংক্রান্তি উপলক্ষে একসময় গ্রামে–শহরে ঘুরে বেড়াত সঙের দল। নেচে–গেয়ে তারা পরিবেশন করত বারো রকমের হাস্যরসাত্মক খবর। এমনকি প্রকাশিত হতো সংবিষয়ক পুস্তিকা। এই মুহূর্তে আমাদের হাতে আছে ১৯১৬ সালের একটি ছোট্ট বই। নাম চৈত্র মাসের সং নিয়ে হরেকরকম রং। এই বইয়ে রসিকতার বিষয় হিসেবে এসেছে শহরের বাবু, বেশ্যা, বাটপার, ভাইস চ্যান্সেলর, কপালের টিপ, বউ-শাশুড়ির ঝগড়া, কন্ট্রাক্টর, যুদ্ধ, ম্যালেরিয়া, হিজড়ার গান ইত্যাদি। সং করার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে পুস্তিকায় লেখা হয়েছে, ‘সংটা আর কিছু নয় খালি দুনিয়া শিক্ষা দিতে।/ নিয়ে বাৎসরিক হিসাব নিকাস আসি সংক্রান্তিতে।’

আজ আর সেই সং নেই, সংযাত্রাও নেই। সংক্রান্তির কিছু চিহ্ন আছে মাত্র। ক্রান্তিকাল কাটিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশের মন্ত্র হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বৈশাখ। কিন্তু এককালে বাঙালির মর্মে দোলা দিয়ে যেত সংক্রান্তি। বছরের শেষ ধাপ পেরিয়ে সবকিছু ধুয়ে–মুছে নতুন বাস্তবতায় খাপ খাওয়ানোর প্রস্তুতি ছিল সবার।

বোঝা যাচ্ছে, চৈত্রের প্রেম ও বিরহ সত্য, কিন্তু শেষ সত্য নয়। মোটাদাগে বলা চলে, চৈত্রের দাবদাহে মরূদ্যান হলো প্রেম। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি প্রেম টানলে আসে বিরহজাত ‘সর্বনাশ’। ফাগুন যদি হয় মিলন, চৈত্র হলো বিচ্ছেদের ক্রান্তিকাল। মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ—দুই পিঠই সত্য। ফুল নেবে, অথচ কাঁটা নেবে না, তা হবে না, তা হবে না। অতএব, সর্বনাশের দায় রবিঠাকুরের কাঁধে চাপিয়ে লাভ নেই।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস—
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস—
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।
আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল পড়ে ঝ’রে—
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস—
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নাট্যগীতি ১১৫
রচনাকাল: ১৬ শ্রাবণ, ১৩৪১ (বঙ্গাব্দ); ১ অগাস্ট, ১৯৩৪