উন্মাদ সম্পাদক কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের জন্মদিন আজ। আহসান হাবীব আমার বন্ধু। আমরা ছোটবেলায় কুমিল্লা ফরিদা বিদ্যায়তনে পড়েছি।
গত ৪০ বছর শাহীন (আহসান হাবীবের ডাকনাম) বিখ্যাত কার্টুন পত্রিকা উন্মাদ–এর সম্পাদক। নিয়মিত বের করে যাচ্ছেন এখনো। এটি খুব সোজা ব্যাপার না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে, প্রায় গোটা জীবনটা লিখেছেন, এঁকেছেন কার্টুন। এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে আর নেই।
হুমায়ূন আহমেদ ও জাফর ইকবালের ছোট ভাই আহসান হাবীব। শাহীনের জোকস নিয়ে অনেক বই আছে। উন্মাদ পত্রিকার অনেকেই শাহীনকে মজা করে জোকসের গডফাদার বলে থাকে। শাহীনের কাছে সবকিছুতেই জোকস আছে।
রাস্তায় শাহীনের সঙ্গে দেখা হলো, কেউ মারা গেছেন। মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে দুজনে দু–চার কথা বললাম। তারপরই শাহীন হয়তো বলল, বস মৃত্যু নিয়ে দুটো জোকস আছে। একটা জোক শুনিয়ে দিল। হুমায়ূন ভাই মারা গেছেন তার কিছুদিন পর।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইকবাল ভাই ফোনে আমাকে জানালেন, খালাম্মা আমাকে খুঁজছেন। আমার আঁকা হুমায়ূন ভাইয়ের একটা ছবি ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায়। সেই ছবি নিয়ে বাসায় যেতে বলেছেন। আমি ছবিটা বাসায় নিয়ে গেলে খালাম্মা ছবিটা হাতে নিয়ে বলল, ‘শাহীন তুই মাসুকের মতো ছবি আঁকতে পারস না? সারা জীবন তেড়াবাঁকা ছবি এঁকে গেলি।’
আমার আঁকা হুমায়ূন ভাইয়ের একটা ছবি ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায়। সেই ছবি নিয়ে বাসায় যেতে বলেছেন। আমি ছবিটা বাসায় নিয়ে গেলে খালাম্মা ছবিটা হাতে নিয়ে বলল, ‘শাহীন তুই মাসুকের মতো ছবি আঁকতে পারস না? সারা জীবন তেড়াবাঁকা ছবি এঁকে গেলি।’
প্রথম আলো থেকে খালাম্মার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম শাহীনদের পল্লবীর বাসায়। সে বছর তাঁর তিন ছেলের সঙ্গে খালাম্মারও (আয়েশা ফয়েজ) জীবন যে রকম নামে একটি আত্মজীবনীমূলক বই বেরিয়েছিল, সে বছর বইমেলায়। মেলায় বইটির ছয়টি এডিশন বেরিয়েছিল। তাঁর কোনো ছেলের সে বছর মেলায় এতগুলো এডিশন হয়নি কোনো বইয়ের।
খালাম্মা কথায় কথায় বলেছিলেন, ‘আমার তিন ছেলে হুমায়ূন, জাফর, শাহীন লিখতে আকঁতে পছন্দ করে। শাহীনই কার্টুনকে পেশা করেছে। ও খুব সাধারণ। ওদের মধ্যে মিলের আরেকটা জিনিস আছে। ওদের লেখা বা আঁকার ভাব এলে চেয়ার–টেবিল লাগে না। মাটিতে বসে, টি–টেবিলে বসে লিখতে পারে। যেকোনো একটা কাগজ কলম হলেই হয়। দেখো, শাহীন টি–টেবিলে বসে উন্মাদ–এর কাজ করছে, ওর কোনো টেবিল নাই।’
দুই হাজার তিন–চারের দিকের কথা। কোরবানির ঈদের দুদিন আগে, আমার অফিসে এসেছিল শাহীন। খুব খুশি খুশি। ‘শাহীন, কিছু হয়েছে?’ ‘বস, পাঁচ হাজার টাকা ইনকাম।’ ঘটনা হলো, কোরবানির গরু কিনতে হুমায়ূন ভাই শাহীনদের বিশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। শাহীনদের পল্লবীর বাসাটা রাস্তার পাশে। সামনে দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাটে। শাহীনদের বাসার সামনে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে লোকজন দরদাম করছিল। কিছু লোক দাম করতে করতে চলে যাচ্ছে। কিছু টাকার জন্য দরে মিলছে না। শাহীন অনেকক্ষণ গেটে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছিল। শাহীন কোনো দামাদামি না করেই পনেরো হাজার টাকায় গরুটা নিয়ে আসে। ফাঁকে পাঁচ হাজার টাকাও থেকে যায়। এতেই খুশি আমাদের বন্ধু শাহীন।