তারকার সংসার
যেভাবে বদলে গেল তিশা-ফারুকীর ঈদ
১৫ মাস বয়সী মেয়ে ইলহামকে ঘিরে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ঈদের রং এবার দ্বিগুণ। ইলহামই তাঁদের ঈদ উপহার। এই দম্পতির ঈদ আনন্দই যেন ইলহামের খুশির জন্য। ইলহামের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হওয়ায় অগত্যা তার তারকা মা–বাবার সঙ্গে কথা বলে তৈরি হয়েছে লেখাটি। লিখেছেন জিনাত শারমিন
একটা ধাঁধা দিয়েই শুরু করি। বলুন তো, এই ঈদে তিশা তাঁর স্বামী ফারুকীকে কী উপহার দিয়েছেন? প্রথম ক্লু, একই উপহার ফারুকীও তিশাকে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ক্লু, কেবল এই ঈদে নয়, গত ঈদুল ফিতর থেকে শুরু করে আগামী সব ঈদে এটি তিশার পক্ষ থেকে ফারুকীকে আর ফারুকীর পক্ষ থেকে তিশাকে উপহার। এবার নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন। তবু তৃতীয় ক্লু, এটা দুজন দুজনকে দেওয়া তাঁদের জীবনের সেরা উপহার।
উপহারটির নাম ইলহাম—ইলহাম নুসরাত ফারুকী। গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা দম্পতির একমাত্র কন্যা। ইলহাম তাঁদের জীবনে আসার পর দুজনের জীবন, জীবনযাপন ও দর্শন বদলে গেছে। ঈদে যোগ হয়েছে আনন্দের নতুন পরত।
ইলহামের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পাওয়া
তিশার জন্ম রাজশাহীতে হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পরিবারে মেয়ের সংখ্যা কম ছিল। তাই সাধারণ পাটিগণিতের হিসাবে আদর-আহ্লাদ একটু বেশিই পড়ত এই অভিনয়শিল্পীর ভাগে। চাচা, খালারা সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ করতেন। নতুন জামা, নতুন জুতা, মেহেদির নকশা আর রং নিয়ে উত্তেজনা থাকত তুঙ্গে। পড়াশোনার বালাই নেই, দায়দায়িত্ব নেই, কেবল সাজুগুজু করে ঘোরাঘুরি আর ঈদের সালামি আদায় করে গুনে গুনে ব্যাগে পুরে রাখা।
বিয়ের পর সেই সব ফুরফুরে দিন বদলে এল কোমরে শাড়ি গুঁজে দায়িত্ব পালনের ঈদ। তিশার মতে, একেক সময়ের ঈদের একেক সৌন্দর্য। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ায় বিয়ের অনেক আগে থেকেই দায়িত্বশীল হিসেবে নামডাক আছে তিশার। এই অভিনেত্রী বললেন, ‘জাকাত দেওয়া, পরিবারের বউ হিসেবে সবার জন্য উপহার কেনা অন্য রকম আনন্দের। তবে সবার আগে আমি আমার বাড়ির সহকারীদের হাতে একটা হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট তুলে দিই। যাতে তাঁরা তাঁদের পছন্দমতো কেনাকাটা করে সুন্দরভাবে ঈদ পালন করতে পারেন।’
সাধারণত, পরিবারের নারী সদস্যরা শপিংয়ে ‘ওস্তাদ’ হন। তবে তিশা-ফারুকী দম্পতির বাড়িতে দেখা যায় উল্টো চিত্র। দেশের বাইরে গেলে বা ঈদ এলে ফারুকী মহা উৎসাহে মনের আনন্দে শপিং করেন। মাঝেমধ্যে তা অতিরিক্ত হয়ে গেলেই লাগাম টেনে ধরেন তিশা। পরিবারের অন্যদের জন্য ঈদে কেনাকাটা করলেও নিজের জন্য সামান্যই কেনাকাটা করেন তিশা।
কারণ কী?
কারণটা শোনা যাক তিশার মুখেই, ‘সরয়ার প্রতি ঈদে আমার জন্য শপিং করে। ওকে বরং বলতে হয়, আর কিছু কিনো না, প্লিজ। সারা বছরই শুটিংয়ের জন্য টুকটাক কেনাকাটা করতেই হয়। আর ঈদের আগে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উপহারও পাই।’
তবে ইলহাম আসার পর শপিংয়ে আগ্রহ বেড়েছে তিশার। ঈদের কেনাকাটা অনেকটাই হয়ে গেছে ইলহামকেন্দ্রিক। ছোটবেলা থেকেই ‘তারকা’ তিশা আগে ছবি তোলার সময় চিন্তা করতেন তাঁকে যেন দেখতে সুন্দর লাগে। বিয়ের পর তাঁকে ও ফারুকীকে একসঙ্গে যাতে সুন্দর লাগে, ফটোশুটে গুরুত্ব পেত সেই বিষয়। আর এখন ইলহামের আগমনের পর ছবিতে যাতে ইলহামকে সুন্দর লাগে, সেই দিকটি গুরুত্বের মিটারে উঠে এসেছে সবার ওপরে।
ইলহামের আগমনে কীভাবে ঈদ বদলে গেল, এককথায় জানতে চাইলে তিশা বললেন, ‘বলে না, পৃথিবী গোল। ইলহামের জন্মের পর আমি যেন আমার চোখের সামনে নিজেকেই একটু একটু করে বড় হতে দেখছি। এখন যেমন ওকে কেন্দ্র করে ঈদ হয়, ছোটবেলায় তেমন আমি ছিলাম পরিবারের চোখের মণি। ইলহাম আসার পর আমার ছোটবেলার ঈদ যেমন হতো, সেটাই ঘুরেফিরে এসেছে আমার জীবনে, ইলহাম হয়ে। আমার এখন দুটো সন্তান। আমার মা আর আমার মেয়ে। ঈদে এই দুজনের প্রতিই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ থাকে।’
বড়বেলায় নিজেরাই ‘চিড়িয়া’
‘বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ ইন নাখালপাড়া’ ফারুকীর কাছে ঈদ মানে ছোটবেলার ঈদ। বড়বেলায় আবার ঈদ হয় নাকি? ছোটবেলায় ঈদের আগে থেকেই নাকি একটা ঈদ ঈদ ঘ্রাণ আসত। সেটা এখন আর পান না এই নির্মাতা। কর্পূরের যেমন গন্ধ উড়ে যায়, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফারুকীর সেই ঈদের ঘ্রাণও বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
ছোটবেলায় চাঁদরাতে তাঁরা দল বেঁধে শপিং করতে যেতেন এলিফ্যান্ট রোডে। গভীর রাত পর্যন্ত শপিং করতেন। তারপর ভোররাতে ঘুমিয়ে ঈদের দিন সকালে উঠে নামাজ পড়ে এসে যত দ্রুত সম্ভব নতুন জামাকাপড় পরে যেতেন চিড়িয়াখানায়। সেটাই ছিল ঈদের দিনের মুখ্য ‘কর্মসূচি’।
চিড়িয়াখানায় কেন?
‘চিড়িয়াখানায় যে কেন যেতাম, আমরা নিজেরাও জানি না। চিড়িয়াখানায় ঢোকা যেত না, এমন ভিড়। এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত হাঁটতাম। তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘাসের ওপর লুটিয়ে পড়তাম। ক্লান্ত হয়ে ঘাসের ওপর লুটিয়ে না পড়া পর্যন্ত মনে হতো না ঈদ। ক্লান্ত হয়ে ঘাসের ওপর লুটিয়ে পড়ার আগপর্যন্ত মনে হতো, আরেকটু ঈদ বোধ হয় বাকি আছে, আরেকটু হাঁটতে হবে, আরেকটু হাঁটলেই হবে।’
ছোটবেলার ঈদে চিড়িয়াখানায় যেতেন চিড়িয়া দেখতে। আর ‘বড়বেলায়’ নাকি নিজেরাই ‘চিড়িয়া’ হয়ে বসে থাকেন ঘরে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এসে দেখে যান। তবে ইলহামের জন্মের পর ফারুকী নিজেই মানুষ হিসেবে বদলে গেছেন। তাই ঈদে তো বদল আসবেই। গত রোজার ঈদে ইলহামের বয়স ছিল সাড়ে তিন মাস। তখন শব্দ ছাড়াই যোগাযোগ করত। আর এবার ঈদে ইলহামের বয়স ১৫ মাস। এখন তার ভাষা তৈরি হয়েছে। নিজের পছন্দের রঙের পোশাকের দিকে হাত বাড়ায়। পছন্দ-অপছন্দ তৈরি হয়েছে। তাই গত ঈদের চেয়ে এই ঈদে ফারুকী-তিশা দম্পতি ইলহামের উপস্থিতি আরও বেশি করে টের পাবেন। কথায় কথায় ফারুকী বলেন,‘ইলহাম এখন অনেক কিছুই বুঝতে পারে। আমাকে সে সব সময় কাছে পেতে চায়। তাই তাকে ছেড়ে আমি যখন দেশের বাইরে যেতে চাই, তখন আমাকে দেশের বাইরে যেতে না দেওয়ার জন্য একটা উপায় আবিষ্কার করেছে সে—আমার লাগেজের ভেতর ঢুকে বসে থাকা।’
মেয়ে ইলহামের এমন স্ব–উদ্ভাবিত কর্মকাণ্ডে নিশ্চয় এবার আরও বর্ণিল হয়ে উঠবে নুসরাত ইমরোজ তিশা ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ঈদ।