পঁচিশে বৈশাখের শ্রদ্ধা
ফ্যাসিবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ
‘ফ্যাসিবাদ’, ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’—এসব নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা ও তর্ক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশায়ও এগুলো ছিল আলোচনায়।
২৫ বৈশাখ ছিল কবির জন্মদিন। এ উপলক্ষে জানা যাক ফ্যাসিবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ নিয়ে তাঁর ভাবনা
‘ফ্যাসিবাদের কর্মপদ্ধতি ও নীতি সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের বিষয়। যে আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করে, বিবেকবিরোধী কাজ করতে মানুষকে বাধ্য করে এবং হিংস্র রক্তাক্ত পথে চলে বা গোপনে অপরাধ সংঘটিত করে, সে আন্দোলনকে আমি সমর্থন করতে পারি এমন উদ্ভট চিন্তা আসার কোনো কারণ নেই। আমি বারবারই বলেছি, পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলো সযত্নে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব লালন করে সারা পৃথিবীর সামনে ভয়াবহ বিপদের সৃষ্টি করেছে।’
সি এফ এন্ড্রুসকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান, লন্ডন, ৫ আগস্ট ১৯২৬
রবীন্দ্রনাথই ছিলেন প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক, যিনি ফ্যাসিবাদের ভয়ানক আগ্রাসী ও বর্বর রূপ উপলব্ধি করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, আন্তর্জাতিকতার সবচেয়ে বড় বিপদ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ। তাই সারা জীবন দৃঢ়তার সঙ্গে অজস্র গান, কবিতা, রচনা, সাহিত্যকীর্তি ও বক্তৃতায় এই দুই সংকটের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন তিনি।
বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে, এর সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক প্রতীক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি শুধু অসাধারণ কবিতা ও গানই লেখেননি; রাখিবন্ধন, পদযাত্রাসহ সবকিছুতেই সক্রিয় ছিলেন। জাতীয়তাবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবেই তিনি তখন ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ বলেই দূরদৃষ্টিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের পূর্বাভাস টের পেয়েছিলেন। সে কারণে সরে দাঁড়িয়েছিলেন স্বদেশি আন্দোলন থেকে। গোরা, ঘরে বাইরে ও চার অধ্যায় উপন্যাসে উগ্র জাতীয়তাবাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘কালান্তর’সহ বিভিন্ন প্রবন্ধে, চিঠিপত্রে, অভিধানে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও কট্টর স্বাজাত্যবোধের পরিণতি তুলে ধরেছেন গোরা (১৯১০) উপন্যাসে। ঘরে বাইরে (১৯১৬) উপন্যাসে দেখালেন সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ কীভাবে সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে। ঘরে বাইরে–এর অন্যতম প্রধান চরিত্র নিখিলেশের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘দেশকে সাদাভাবে সত্যভাবে দেশ বলেই জেনে, মানুষকে মানুষ বলেই শ্রদ্ধা করে, যারা তার সেবা করতে উৎসাহ পায় না—চিৎকার করে মা বলে, দেবী বলে, মন্ত্র পড়ে যাদের কেবল সম্মোহনের দরকার হয়, তাদের সেই ভালোবাসা দেশের প্রতি তেমন নয় যেমন নেশার প্রতি।’
যেখানেই মানুষের সভ্যতা আক্রান্ত হয়েছে, মানবতা বিপর্যস্ত হয়েছে, সেখানেই বিবেকি শিল্পী রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছে। রোমাঁ রোলাঁ, অঁরি বারবুস, আলবার্ট আইনস্টাইনদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিজের দীপ্ত উপস্থিতি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ১৯২৬ সালে তৃতীয়বারের মতো ইতালি সফরের সময় মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রবীন্দ্রনাথের। মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট শাসন সম্পর্কে তখন তিনি অবহিত ছিলেন না। অচিরেই নিজের ভুল বুঝতে পারেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতা ও বিপদ সম্পর্কে অবহিত করে তাঁকে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে রোমাঁ রোলাঁর ভূমিকা প্রশ্নাতীত। রোলাঁকে পাঠানো চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘ইতালি সফরের ফলে আমার মনে যে মলিনতার স্পর্শ লেগেছিল, সম্প্রতি এক মুক্তিস্নানে তা দূর হয়েছে।’ রবীন্দ্রনাথের এই ইউরোপ সফরে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল ফ্যাসিজম ও যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর সচেতনতা। এ ঘটনার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীজুড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্যতম প্রধান কণ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মুসোলিনির স্বরূপ উদ্ঘাটিত হওয়ার পর তাঁর একটি ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন রবীন্দ্রনাথ।
১৯২৬ সালের পর থেকেই ক্রমান্বয়ে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে উদাত্ত কণ্ঠস্বর শোনা যেতে থাকল রবীন্দ্রনাথের। ১৯২৭ সালে বিখ্যাত ফরাসি মনীষী ও সাম্যবাদী নেতা অঁরি বারবুস ও ফরাসি দার্শনিক রোমাঁ রোলাঁর মধ্যে মত বিনিময়ের পর তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী–গুণীদের কাছে ‘দ্য আপিল টু দ্য ফ্রি স্পিরিটস’ শিরোনামের আবেদনপত্র পাঠান, তাঁদের অনুমোদনের জন্য। এর মূল সুর ছিল ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতার। সেই আবেদনে সমর্থন জানিয়ে লেখা জবাবে দ্বিধাহীনভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান রবীন্দ্রনাথ।
ফ্যাসিস্ট ইতালি ও জার্মানির মদদপুষ্ট জেনারেল ফ্রাঙ্কো ১৯৩৬ সালে স্পেনের গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুরো স্পেনে তার প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে সংগ্রাম শুরু হয়। স্পেনের যুদ্ধে পপুলার ফ্রন্টের হয়ে রণাঙ্গনে শামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীরা। রবীন্দ্রনাথ এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে লেখা সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থে ‘চলতি ছবি’ কবিতায় স্পেনের গৃহযুদ্ধের ছবি ফুটে উঠেছে: ‘যুদ্ধ লাগল স্পেনে;/চলছে দারুণ ভ্রাতৃহত্যা/ শতঘ্নীবাণ হেনে।’
এই সময়েই ‘লিগ এগেইনস্ট ফ্যাসিজম অ্যান্ড ওয়ার’ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এই সংঘের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিরিশের দশকে জাপানের চীন আক্রমণ ও আগ্রাসনের ঘটনা রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর অনুরাগী জাপানি কবি নোগুচির সঙ্গে খোলা চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। জাপানের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা সত্ত্বেও দেশটির হিংস্র ভূমিকার নিন্দা করেছেন রবীন্দ্রনাথ।
১৯৩৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অমিয় চক্রবর্তীর উদ্দেশে এক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘দেখলুম দূরে বসে ব্যথিত চিত্তে, মহাসাম্রাজ্যশক্তির রাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিষ্ক্রিয় ঔদাসীন্যের সঙ্গে দেখতে লাগল জাপানের করাল দংষ্ট্রাপংক্তির দ্বারা চীনকে খাবলে খাবলে খাওয়া...দেখলুম ঐ স্পর্ধিত সাম্রাজ্যশক্তি নির্বিকারচিত্তে এবিসীনিয়াকে ইটালির হাঁ করা মুখের গহ্বরে তলিয়ে যেতে দেখল, মৈত্রীর নামে সাহায্য করল জর্মনীর বুটের তলায় গুঁড়িয়ে ফেলতে চেকোশ্লোভাকিয়াকে; দেখলুম ননইন্টরভেনশনের কুটিল প্রণালীতে স্পেনের রিপাবলিককে দেউলে করে দিতে—দেখলুম ম্যুনিক প্যাক্টে নতশিরে হিটলরের কাছে একটা অর্থহীন সই সংগ্রহ করে অপরিমিত আনন্দ প্রকাশ করতে। ...এই যুদ্ধে ইংলন্ড, ফ্রান্স জয়ী হোক একান্ত মনে এই কামনা করি। কেননা মানব- ইতিহাসে ফ্যাসিজমের নাৎসিজমের কলঙ্ক প্রলেপ আর সহ্য হয় না।’
আবিসিনিয়া, স্পেন ও চীন রণাঙ্গন—প্রায় সর্বত্রই ফ্যাসিস্টদের আক্রমণের মুখে সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবিরোধী মুক্তিফৌজের পরাজয়ের খবর আসছিল। মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক ফিনল্যান্ড আক্রমণের ঘটনাটিকেও ভালো চোখে দেখেননি। এ ঘটনায় তাঁর হতাশা প্রকাশ পায় ‘অপঘাত’ কবিতায়: ‘টেলিগ্রাম এল সেই ক্ষণে/ ফিনল্যান্ড চূর্ণ হলো সোভিয়েত বোমার বর্ষণে।’ রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত রাশিয়াকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চোখে দেখতেন। ১৯৩০ সালে রাশিয়া ভ্রমণ ছিল তাঁর কাছে ‘এ জন্মের তীর্থ দর্শন’। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ‘অন্য কোনো দেশের মতোই নয়, একেবারে মূলে প্রভেদ। আগাগোড়া সকল মানুষকেই এরা সমান করে জাগিয়ে তুলেছে।’
ফ্যাসিবাদ উগ্র জাতীয়তাবাদের অন্ধ উত্তেজনা সৃষ্টি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। জার্মান জাতি পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, পৃথিবীকে শাসন করার অধিকার কেবল তারই—এই আওয়াজ তুলে বিভিন্ন দেশ আক্রমণ করেছিলেন হিটলার। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও কট্টর দেশপ্রেমের হাত ধরেই ইউরোপে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। ফ্যাসিস্ট জার্মানির সঙ্গে সোভিয়েতের মরণপণ সংগ্রামের খবর রোগশয্যায় শায়িত রবীন্দ্রনাথ খুবই আগ্রহের সঙ্গে রাখতেন। বাইশে শ্রাবণ এবং রানী গ্রন্থে নির্মল কুমারী মহলানবিশের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সংবাদপত্রে যেদিন জার্মানদের অগ্রগতিতে একটু ভাটার খবর থাকত, সেদিন কবি মুখের কাছে কাগজ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেন। আর যেদিন জার্মান সৈন্যের সাফল্যের খবর থাকত, সেদিন হেডলাইন পড়া শেষ হলেই কাগজ ছুড়ে মাটিতে ফেলে দিতেন।
ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি লেখেন সুবিখ্যাত ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি। এই কবিতায় প্রায় প্রতিটি স্তবক ফ্যাসিবাদের হাতে নিপীড়িত মানবসভ্যতার হাহাকার সংক্ষুব্ধ।
ফ্যাসিস্টদের বর্বরোচিত আচরণের উপযুক্ত জবাব যে পাল্টা আক্রমণ, তা কবিমানসে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ‘প্রান্তিক’-এর অবিস্মরণীয় দুটি কবিতায় এর সাক্ষ্য রয়েছে—‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস,/ শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস/ বিদায় নেবার আগে তাই/ ডাক দিয়ে যাই/ দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে/ প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।’
যেটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য, তা হলো কবি শুধু আক্রমণকারী ফ্যাসিবাদের নিন্দা করেই ক্ষান্ত হননি, ধিক্কার জানিয়েছেন লিগ অব নেশনস তথা বিশ্বশান্তির বরকন্দাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ শক্তির উদাসীনতা ও কাপুরুষতাকেও। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতৃত্বের নির্লিপ্ত ভূমিকা মনে করিয়ে দেয় এ কবিতা।
ধীরে ধীরে নিকটবর্তী হয়ে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষণ। অস্ট্রিয়া দখলের পর হিটলারের চোখ পড়ে চেকোস্লাভাকিয়ার ওপর। হিটলার মুসোলিনির আঁতাতের সংবাদে শুভশক্তি বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে অতিবাহিত হয় কবির জন্মদিন। এই ক্ষণে ফ্যাসিবাদের চরম পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা জানিয়ে তিনি রচনা করেন ‘জন্মদিন’ কবিতাটি: ‘ক্ষুব্ধ যারা, লুব্ধ যারা/ মাংসগন্ধ মুগ্ধ যাঁরা, একান্ত আত্মার দৃষ্টিহারা/... শুনি তাই আজি/ মানুষ-জন্তুর হুংকার দিকে দিকে উঠে বাজি।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রকোপে সভ্যতা যখন কালিমালিপ্ত, তখনো জয়জয়কার ফ্যাসিবাদী অপশক্তির। সংবাদপত্রে, রেডিওতে প্রতিদিন ধ্বংসলীলার খবর আসছে আর শুভশক্তি হয়ে পড়ছে বিচলিত। রবীন্দ্রনাথ নিজেও বিচলিত অপশক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায়। জীবনের অন্তিম মুর্হূতেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আশার বাণী উচ্চারণ করছেন তিনি। রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘১৯৪১ সালে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ। কবি মৃত্যুশয্যায়। তবু উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার জানতে চাইছেন, প্রশান্ত মহলানবিশের কাছে—কী পরিস্থিতি রণাঙ্গনের? প্রশান্ত মহলানবিশ জানান, এখনো এগিয়ে চলেছে দস্যু বাহিনী। কবি ডুবে যান নীরব বিষণ্নতায়। অবশেষে শেষবারের জন্য সংজ্ঞা এল কবির। চোখে একই স্বপ্ন। কিন্তু প্রশান্ত মহলানবিশের উত্তর এবার ভিন্ন। সোভিয়েত বাহিনী প্রতিরোধ করেছে। রবীন্দ্রনাথ উৎসাহে অধীর হয়ে ওঠেন, বলেন, পারবে, দানবকে ঠেকাতে ওরাই পারবে।’