অশেষ প্রস্তরযুগ ও অন্যান্য

অলংকরণ: আরাফাত করিম

প্রস্তর যুগ শুরু হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন বছর আগে। এর প্রথম স্তরের নাম প্যালিওলিথিক আমল, যখন মানুষ পাথর ঘষে ঘষে টুকটাক কিছু সরঞ্জাম তৈরি করতে শিখেছিল। তখন মানুষ শুধু পশু শিকার করত আর গাছ থেকে ফলফলারি সংগ্রহ করে ক্ষুধা মেটাতে। প্রস্তর যুগের দ্বিতীয় স্তর শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে, যাকে বলে মেসোলিথিক আমল। তখন মানুষ পাথর দিয়ে ছোটখাটো অস্ত্র বানাতে শিখেছিল। শিখেছিল পশুকে পোষ মানানো আর রপ্ত করেছিল কৃষিকাজের কায়দাকানুন। যখন মানুষ বাড়িঘর বানিয়ে, চাকা ঘুরিয়ে লাঙলে কর্ষণ করে, কাপড় বুনে মোটামুটি সভ্য হয়ে গেল অনেকটা; সেটা প্রস্তর যুগের তৃতীয় স্তর, যার নাম নব্য প্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক আমল। খ্রিষ্টজন্মের প্রায় দুই হাজার বছর আগপর্যন্ত যার ব্যাপ্তি, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগপর্যন্ত। 

কথিত এবং লিখিত ইতিহাস অনুযায়ী প্রস্তরযুগের সেইখানেই সমাপ্তি, তারপর শুরু হয় ব্রোঞ্জ যুগ, আর তার অবসানে লৌহ যুগ। ভবিষ্যতে কি ‘এআই যুগ’? 

কিন্তু নিওলিথিক প্রস্তরযুগ কি আসলেই শেষ হয়েছিল? জীবনানন্দ দাশ তাঁর ঘোড়া কবিতায় লিখেছেন ‘প্যারাফিন-লণ্ঠন নিভে গেল গোল আস্তাবলে, সময়ের প্রশান্তির ফুঁয়ে; এইসব ঘোড়াদের নিওলিথ-স্তব্ধতার জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে’। এই সব ঘোড়াদের নাম তিনি দিয়েছেন মহীনের ঘোড়া। লিখেছেন ‘আমরা যাইনি মরে আজো—তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়। মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে, প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন—এখনও ঘাসের লোভে চরে পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর পরে’।

জীবনানন্দ দাশ বর্ণিত এই সব প্রস্তরযুগের ঘোড়াদের নিয়ে একদা ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ নামে গানের দল বাঁধেন সাবেক নকশালাইট গৌতম চট্টোপাধ্যায়। গেয়ে ওঠেন, ‘স্বপ্ন বেচার চোরাকারবার, জায়গা তো নেই তোমার আমার, চোখ ধাঁধানো এই খেলা শুধু বঙ্গী...আ হা হা হা’। আর তা শুনে একই সুরে গম্ভীর কণ্ঠে আমাদের নগরবাউল জেমস গেয়ে ওঠেন, ‘না জানে কোয়ি, ক্যায়ছি হ্যায় ইয়ে জিন্দেগানী, জিন্দেগানী, হামারি আধুরী কাহানি’। 

আমাদের আধুরী কাহানির মধ্যে তখন প্রবেশ করেন কবি শোয়েব শাদাব। আশির দশকের লিটলম্যাগ কাঁপানো কিংবদন্তি কবি শোয়েব শাদাব। যিনি কাজী নজরুলের ত্রিশাল থেকে জগন্নাথ কলেজ মারফত রাজধানী ঢাকায় নাজেল হয়ে শাহবাগে মাতোয়ারা হয়েছিলেন। কবিতার তুমুল যাপনে যিনি দিশেহারা হয়ে প্রস্তর যুগান্তরের সভ্য মানুষের মাপকাঠিতে অযোগ্য বিবেচনায় ফিরে গিয়েছিলেন ত্রিশালে। তারপর যিনি বছরের পর বছর ছিলেন সাহিত্য-সভ্যতা-অন্তরালে। তার অনেক বছর পর যাঁকে আমরা পাই শিকলবন্দী ছবিতে। আর তারও অনেক বছর বাদে শহর থেকে বাস রিজার্ভ করে কবিরা গিয়ে ফিরিয়ে এনে তাঁকে সংবর্ধনা দেন রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে। সেই শোয়েব শাদাবকে যদিও এখনকার লোকজন তেমন চেনেটেনে না, কিংবা তখনো যে খুব বেশি লোকে চিনত, ব্যাপারটা সে রকমও না; কিন্তু শাহবাগের মাটি ঘাস প্রান্তর তাঁকে চেনে। খুব চেনে গাণ্ডীব সম্পাদক তপন বড়ুয়া থেকে প্রথম আলোর সাজ্জাদ শরিফ। গল্পের সেলিম মোরশেদ কিংবা ফেসবুকে না থাকা পারভেজ হোসেন থেকে রাজশাহীর ইচক দুয়েন্দে তাঁকে চেনেন। অনিন্দ্য সম্পাদক হাবিব ওয়াহিদ কিংবা সাগর নীল খানসহ চেনেন তাঁকে আরও অনেকেই। আর নিশ্চয়ই চেনেন আমাদের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও।

তো এই বিলুপ্তপ্রায় কবি শোয়েব শাদাব সেই আশির দশকেই যে কাব্য রচনা করে খ্যাত হয়েছিলেন, সেই পুস্তকের নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘অশেষ প্রস্তরযুগ’। সেই পুস্তকের প্রথম কবিতার নাম ‘স্বগতোক্তি’। যেখানে তিনি লিখছিলেন, ‘নষ্ট দ্রাঘিমায় এসে গেছি হে দেবদূত! অস্থিতে মজ্জায় হিম জমে গেছে অজস্র কর্দম। কী করতে কী করে ফেলি বুঝি না পূর্বাপর। কেঁচো খুঁড়ে অজগর!’ 

আমি বহুদিন ভেবেছি বাক্যটা কেন ‘কেঁচো খুঁড়ে অজগর’? কেন ‘কেঁচো খুঁড়তে অজগর’ না? এখন বুঝি, কখনো কখনো অজগর নিজেই কেঁচো খুঁড়ে নিজের ভয়ংকরতাকে প্রকাশ্য করে তোলে। অতীতেও, বর্তমানেও, ভবিষ্যতেও হয়তো। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রস্তর যুগাবসানের সাড়ে চার হাজার বছর পরেও কবি শোয়েব শাদাব যে কবিতা নাজেল করেন ‘অশেষ প্রস্তরযুগ’ শিরোনামে, তার মাজেজা কী? প্রস্তরযুগ কি তাহলে আদতে শেষ হয়নি? কোনো দিন শেষ হবে না? অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে? 

অনন্তকাল ধরে প্রস্তরযুগ বহন করা বিষয়েও দারুণ ঘটনা আছে পৃথিবীতে। গ্রিক পুরাণ অনুসারে করিন্থের রাজা ছিলেন সিসিফাস নামের একজন। যিনি ছিলেন খুবই ধূর্ত আর চালাক প্রকৃতির। নদীর দেবতাকে ঘাপলি দিয়ে নদীর গতিপথ বদলে দিয়ে দেবরাজ জিউসকে পর্যন্ত বাটে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হলে মৃত্যুদেবতা হেডিসকেও ঘাপলি দিয়ে জীবিত হয়ে আবার ফিরে এসেছিলেন পৃথিবীতে, মৃত্যুকে দিয়েছিলেন থামিয়ে। তবে এত চালাক লোকটাও শেষ পর্যন্ত রেহায় পায়নি, মৃত্যুর পর তার কাঁধে চড়িয়ে দেওয়া হয় বিশাল এক পাথর। এই পাথরকে তুলতে হবে পাহাড়ের চূড়ায়। তিনি প্রতিদিন কসরত করে সেই পাথর পাহাড়ের চূড়ায় তোলেন, তারপর সেটা আবার গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়, তিনি আবার তোলেন, আবার গড়িয়ে পড়ে... এভাবে অনন্তকাল ধরে এই কাণ্ড চলছে তো চলছে। 

সেহেতু আবারও প্রশ্ন...প্রস্তরযুগ কি তাহলে শেষ হয়েছে? 

আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমার পড়া শ্রেষ্ঠতম উপন্যাস কোনটা? তাহলে সম্ভবত আমি বলব আলবেয়ার কামুর ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’–এর কথা। কামুর আরেকটা পুস্তক আছে...নাম ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’। সেখানে তিনি গ্রিক পুরাণ থেকে সিসিফাসের উপরোক্ত ঘটনাটাকে রূপক হিসেবে বর্ণনা করে বিশাল এক দার্শনিক বিবেচনা ফেঁদেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন এ ঘটনা আসলে মানবজীবনের অর্থহীনতা আর অস্তিত্বের সংকটকেই তুলে ধরে। তিনি বলতে চেয়েছেন সিসিফাসের কাজটা নিতান্তই নিরর্থক, অহেতুক কিংবা আজাইরা হলেও সে তার এই কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নেয় আর সে জন্যই সে অনন্তকাল ধরে এই একই বিফল কাজের পুনরাবৃত্তি করতেই থাকে, করতেই থাকে। যার ফলে কামু এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে জীবনের এই সব অর্থহীনতা সত্ত্বেও মানুষ তার নিজের শর্তে জীবনকে উপভোগ করতে পারার পদ্ধতি আয়ত্ত করে নেয়। যখন মানুষ তার পরিস্থিতির অযৌক্তিকতা ঠাওর করতে পারে, তখন সে তার ভাগ্যের কাছে আত্মসমর্পণ না করে কিংবা পরিস্থিতি বদলের চেষ্টা না করে বরং সেই পরিস্থিতির মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নেয় আর পাথর কাঁধে করে নিয়ে তুলতে চেষ্টা করতে থাকে নানাবিধ পাহাড়ের ওপরে। দেবতাদের বোকা বানানো সিসিফাস এবং তার মতো আমরা আদত-বোকা মানুষেরা আসলে এই সব অনর্থক কাজের পুনরাবৃত্তিকেই মুক্তির আনন্দ ভেবে উদ্‌যাপনে মগ্ন হই। যাকে সম্ভবত বাংলার অদার্শনিক লোকেরা বলে, ‘পাগলের সুখ মনে মনে’।

এই সব অহেতুক সুখে আহ্লাদে আমাদের প্রস্তরযুগ তাই শেষ হয় না। পাথরেই জেগে থাকে আমাদের যাবতীয় মুগ্ধতা। কবি আবুল হাসানের ভাষায়, ‘সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে।’ আর কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘বুকের ভিতর কিছু পাথর থাকা ভালো, ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়।’ 

পাথর বিষয়ে ভারতীয় পুরাণের গল্পটাও দারুণ। রামায়ণের গল্প। ঊর্বষীর দেমাগ কমানোর জন্য ব্রহ্মা সৃষ্টি করলেন দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী নারী অহল্যাকে। তীব্র যৌবনবতী অহল্যার বিয়ে হলো বুড়ো ঋষি গৌতমের সঙ্গে। আর তাতে ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে খাক হলো দেবতা ইন্দ্র। শোধ নিতে একদিন তিনি ঋষি গৌতমের অনুপস্থিতিতে আশ্রমে ঢুকে ছলে–বলে–কৌশলে অহল্যাকে ধর্ষণ করলেন। নারীর কপাল এখন যেমন, তখনো তেমন—চিরকালই খারাপ। ধর্ষিতা হলেও যত দোষ নন্দ ঘোষের মতো সব দোষ নারীর। ধর্ষিতা অহল্যার কপালেও জুটল তাই সহস্রবর্ষব্যাপী শাস্তি। ঋষি গৌতম অহল্যাকে অভিশাপ দিল ‘বায়ুভক্ষা, নিরাহারা, ভস্মশায়িনী, তপ্যন্তী, প্রস্তরবৎ ও অদৃশ্যা’ হয়ে থাকতে হবে। সেই থেকে পরবর্তী সহস্র বছর অহল্যা পাথর হয়ে রইলেন। 

এই উপাখ্যান নিয়ে যে দার্শনিক প্রবন্ধ, সেটা কিছুটা সমস্যাসংকুল। মীমাংসা দার্শনিক কুমারিলভট্টের মতে, এই পুরো বিষয়টা আসলে একটা রূপক। এখানে ইন্দ্র হলো সূর্য আর অহল্যা হলো রাত্রি বা অন্ধকারের প্রতীক। আর অহল্যা-ধর্ষণ হলো ‘অন্ধকার জয়ের প্রতীক’। দেব-দর্শনে পুণ্য হয় আর দেব-ধর্ষণে জয় হয় অন্ধকার! 

যাহোক, এই গল্পকে উপজীব্য করে দারুণ একটা শর্টফিল্ম আছে সুজয় ঘোষের...‘অহল্যা’ নামে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর টোটা রায় চৌধুরীর সঙ্গে যেখানে অহল্যা চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাধিকা আপ্তে। ইউটিউবে ফ্রি পাওয়া যায়, দেখলে ঠকার চান্স নেই। 

হাজার বছর প্রতীক্ষায় থেকে রামের পরশে অহল্যা পাথর-রূপ ত্যাগ করে মানুষের রূপে ফিরে আসেন আবার পৃথিবীতে। তবে পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ আসলে উল্টো এমন এক পাথরের পরশ খোঁজে, যে পাথর সোনাফলা। সেই অলৌকিক জাদুর পাথরের নাম মানুষ দিয়েছে ‘পরশ পাথর’। 

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও কবিতা লিখেছেন এই পরশ পাথরের। সোনার তরী কাব্যগ্রন্থে তিনি একটা কবিতা বলেছেন ‘পরশ পাথর’ নামে। যেখানে তিনি বলেছেন এক খ্যাপার কথা, যে হতদরিদ্র জীবনভর খুঁজে ফেরে এক পরশ পাথর। কোনো এক অলক্ষ্যে সে পরশ পাথর তার ভাগ্যে জোটেও, সে পরশে লোহার শিকল হয়ে যায় সোনার। কিন্তু ‘সে যে এসেছিল বাতাস তা বলেনি, হায় সেই রাতে দ্বীপ মোর জ্বলেনি’ অবস্থা, অসংখ্য নুড়ির মধ্যে কোনটা যে সেই পরশ পাথর, নুড়ি তা খেয়াল করতে পারেনি সেই অভাগা খ্যাপা। তারপর আফসোসে বাকি অর্ধেক জীবন সেই ‘পেয়ে হারিয়ে ফেলা পরশ পাথর’ আবার খুঁজে চলে খ্যাপা। আমাদের নিজস্ব এবং জাতিগত জীবনে এমনিভাবে কতবার যে আমরা পরশ পাথরকে পেয়েও না বুঝে অবহেলায় হারিয়ে ফেলি আর তারপর জনমভর আফসোস করি...!

তবে পরশ পাথর পেলে কী বিপত্তি ঘটে, তা দেখানো আছে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে। পরশুরাম ওরফে রাজশেখর বসুর গল্প অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করেন ‘পরশ পাথর’ নামে চলচ্চিত্র, যা ১৯৫৮ সালে কান চলচ্চিত্র উত্সবে পাম ডি’অর ওরফে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর যেখানে আমরা দেখি তুলসী চক্রবর্তীর অসাধারণ অভিনয়। যেখানে নিম্নবিত্ত কেরানি পরেশ চন্দ্র দত্ত রাস্তায় কুড়িয়ে পায় এক পাথর, অবহেলে যা ভাইপো পল্টুকে খেলার জন্য দিয়েও দেয়। কিন্তু পরে জানা যায় এটি আসলে কোনো যেনতেন পাথর নয়, একেবারে পরশ পাথর! এই পাথরের পরশ পেলেই লোহা সোনা হয়ে ওঠে! কেরানি পরেশকে আর পায় কে? প্রচুর লোহা কিনে ছুঁয়ে ছুঁয়ে সোনার পাহাড় গড়ে তাতে চড়ে হয়ে যান ভীষণ কেউকেটা। কিন্তু কদিন পরেই ধরা পড়ে আসল রহস্য...তারপর পলায়নেও রেহাই মেলে না, ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। যাহোক, নানান ঘটনার পর সে পাথর হজম হয়ে গেলে সোনা হয়ে যাওয়া সব লোহা আবার স্বমূর্তিতে ফিরলে পরেশ চন্দ্র দত্তও আবার কেরানির জীবনে ফিরে যান। দর্শক আমাদের তখন প্রশ্ন জাগে—কোন জীবনটা আসলে সুখের? পরশ পাথর পাওয়ার আগের না পরের? আমরা দর্শকেরা নিশ্চিত হই এই সাধারণ জীবনটা যদিও একটু টানাপোড়েনের তবু নিতান্তই সুখের আর আনন্দের বৈকি, সোনায় মোড়ানো জীবনটা ততটা স্বস্তির না। কিন্তু তবু আমরা মনে মনে একটা পরশ পাথর খুঁজতেই থাকি। কেউ কেউ পাকেচক্রে সেই পরশ পাথর পেয়ে কেউকেটাও হয়ে উঠতে চেষ্টা করি, কিন্তু পরশ পাথর শেষ পর্যন্ত হজম করতে পারব কি না, তা আমাদের জানা থাকে না। তাই আমাদের প্রস্তরযুগ কখনো শেষ হয় না, আমরা ক্রমাগত আরও আরও ‘পরশ পাথর’ সমৃদ্ধ এক প্রস্তর যুগের আরাধনা করতে থাকি। আমরা কোনোকালে, কোনো কিছু, এমনকি পাথর থেকেও সামান্য শিক্ষা নিই না। এ জন্যই বোধ হয় প্রবাদে বলেছে—সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। যাহোক, সত্যজিতের এই হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র পরশ পাথরের ইংরেজি টাইটেল হলো ‘দ্য ফিলোসফার্স স্টোন’ বাংলায় যাকে বলে ‘দার্শনিক পাথর’!