ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে আমি ভর্তি হই ১৯৮৯ সালে। হুমায়ূন আহমেদ আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। আমাদের ব্যাচের ওরিয়েন্টেশনের পর বোধ হয় আমরা প্রথম ক্লাস পাই হুমায়ূন আহমেদের। তাঁর কথা শোনার জন্য ক্লাসে পেছনের বেঞ্চে অন্য বিভাগের ছাত্ররাও কেউ কেউ ছাত্র সেজে বসে থাকত। হুমায়ূন স্যারও চাইতেন তাঁকে দেখে আমরা ছাত্রছাত্রীরা যারপরনাই অবাক হতে থাকি। সেই ক্যারিশমা উনি বজায় রাখতেন। তাঁকে নিয়ে আমাদের চোখেমুখে বিস্ময়ের কমতি ছিল না।
প্রথম বর্ষে হুমায়ূন স্যার আমাদের ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি পড়াতেন। সবার কাছে হুমায়ূন আহমেদ একটা বিশাল ব্যক্তিত্বেরও অধিক কিছু। এত বড় একজন স্বপ্নের মানুষ আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে রসায়নের মতো কঠিন রসকষহীন একটা সাবজেক্ট পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো উন্মুক্ত করে চলছেন একের পর এক। সে কী বিস্ময়রসযোগের উপস্থাপন! আমরা নিজেদের চোখকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না ক্লাসের প্রথম কয় দিনে।
স্বীকার করতেই হয়, হুমায়ূন স্যারের পড়ানোর বিশেষ টেকনিক ছিল। একটা শুরু থাকত কোনো বিষয় পড়াতে গেলে। সেই শুরুটা হতো—সংশ্লিষ্ট বিষয়টার বিস্ময়ের দিকটা কী সেটা আগে হাজির করার চেষ্টা করে। বিস্ময়ের দিকটা খোলাসা করতে বা আয়ত্তের মধ্যে আনতেন প্রশ্ন করে করে। প্রশ্নের উত্তরগুলো সাজাতেন যুক্তির ভিত্তিতে। পড়ানোর ভেতর ঘুরে ঘুরে প্রশ্ন করতেন, ‘লজিক কী বলে?’ লজিক্যালি বিষয়টি কী হওয়া উচিত, সেটাই উনি হাজির করতেন। এ যেন জগতের সব বিস্ময় আদতে বিজ্ঞানের লজিকের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে!
বিজ্ঞানপাঠ যে অন্য রকমের আনন্দের একটা জগৎ, তা হুমায়ূন স্যারের ক্লাস না করলে বোঝা যেত না। সাধারণত হুমায়ূন স্যারের ক্লাস আমরা কেউ মিস করতে চাইতাম না!
‘লজিক কী বলে?’—এটা হুমায়ূনের একটা মুদ্রাদোষ ছিল! মুদ্রাদোষ ছাড়া মানুষ হয় না! হুমায়ূনও একজন মানুষ। অতএব হুমায়ূনেরও মুদ্রাদোষ জরুরি! তাঁকে নিয়া ক্লাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা মজা মারতাম। পাঠদানের ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষাবধি পুরো পাঠ্য বিষয়টাকে একটা সমীকরণের ভেতর নিয়ে আসার চেষ্টা করতেন। ফলে কোনো কিছু প্রতিষ্ঠা করতে শুরু থেকে শেষের একটা যুক্তিপ্রবাহ কাজ করত। পাঠের বিষয়বস্তুকে মনে হতো একটা ছোটগল্পের মতো। বিজ্ঞানের বিষয়গুলার ভেতরও যে গল্প থাকতে পারে, তা–ই যেন আমাদের বোঝাতে চাইতেন।
বিজ্ঞানপাঠ যে অন্য রকমের আনন্দের একটা জগৎ, তা হুমায়ূন স্যারের ক্লাস না করলে বোঝা যেত না। কারণ, অন্য স্যারদের পড়ানোর ভেতর এ জিনিসটা হাজির ছিল না। এর ফলে সাধারণত হুমায়ূন স্যারের ক্লাস আমরা কেউ মিস করতে চাইতাম না!
আমাদের ক্লাসে একজন খ্রিষ্টান ছাত্র ছিল। তার নাম জন ডেরেন ক্যুইয়া। ওর চেহারা অনেকটা সাদা চামড়ার সাহেবদের মতো। চুল কোঁকড়ানো, মুখটা গোল চ্যাপ্টা। ঢোলাঢালা পোশাক পরত। লম্বায় হুমায়ূন আহমেদের সমান। সব সময় হাসিখুশি থাকত। ও বেশ মেধাবী। ক্লাসে খুব সিরিয়াস ছাত্র। হুমায়ূন স্যার দেখতাম ওকে বেশি বেশি প্রশ্ন করতেন। ওর দিকে তাকিয়ে ক্লাসে ছাত্রদের উদ্দেশে লেকচার দিতেন। ওর প্রতি আমারও মনে হতো স্যারের একটু বেশি স্নেহঘটিত পক্ষপাত ছিল। তাই ওকে ক্লাসের অনেকেরই বেশ খানিকটা হিংসা হতো।
তখন অনেকেরই মনে হতো যে মুসলিম/হিন্দু ছাত্রদের চেয়ে খ্রিষ্টান ছাত্রদের প্রতি স্যারের আগ্রহ বেশি! এর কারণ, আমেরিকায় পিএইচডি ডিগ্রি নিতে গিয়ে স্যার বুঝি কোনো বিশেষ ঘটনায় খ্রিষ্টানদের প্রতি কোনো মোহের জালে আটকা পড়েছিলেন! সেই জেরে তাঁর কিছু গল্পে আমেরিকাবাসের গল্পে খ্রিষ্টানদের সংসর্গের কথা এসেছে। হয়তো খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে তাঁর কোনো না কোনো অবসেশন ছিল। আবার ভাবছি, না, যেকোনো উইয়ার্ড জিনিসপত্র তাঁর নজর কাড়ত বেশি। বন্ধু জন ডেরেনের অন্য রকমের চেহারাটাই হয়তো স্যারকে অন্য কোনো জগতের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দিত। তাই ওর প্রতি একটু অন্য রকমের পক্ষপাত! যা–ই হোক, শেষ পর্যন্ত আমার কাছে স্যারকে একজন সেক্যুলার ধরনের সংশয়বাদী মানুষ মনে হতো। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম জীবনযাপনের যৌথতার কথা তাঁর অনেক গল্পে এসেছে। হিন্দু বা মুসলিম ছাত্র অপেক্ষা খ্রিষ্টান ছাত্রদের প্রতি তাঁর প্রীতি বেশি ছিল—বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ দিকে এই অভিযোগ থেকে হুমায়ূন স্যারকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলাম আমরা।
ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির ল্যাবের একদিনের একটা ঘটনা মনে পড়ে। উনি ল্যাব ক্লাসে একজন বিজ্ঞানীর মতো এক কোনায় এক মনে বসে ছিলেন। ল্যাবে কোনো একটা এক্সপেরিমেন্টের খাতিরে আমাদের একটা বড় জার থেকে একটা পাইপের মাধ্যমে মুখে টান দিয়ে পানি টেস্টটিউবে নিতে হচ্ছিল। বহুদিন ধরে এটাতেই সবাই অভ্যস্ত ছিল। দূর থেকে স্যার জিনিসটা খেয়াল করলেন। ভাবলেন, সবাই একই পাইপে মুখ দিয়ে টেনে নিতে গিয়ে যদি একজনের মুখের থেকে আরেকজনের মুখে পাছে কোনো কন্টামিনেশন হয়!
তাই স্যার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। পরের দিন দেখি বিষয়টার একটা সমাধান বের করছেন। জারের নিচ দিয়ে একটা পাইপের গোড়া ও ট্যাপের নিচের দিক থেকে একটা সিস্টেম তৈরি করলেন। ফলে এখন আর কাউকে মুখ দিয়ে পানি টেনে নিতে হচ্ছে না! এসব উদ্ভাবনী বিষয়ে হুমায়ূন স্যারের বেশ আগ্রহ ছিল।
রসায়ন বিভাগে উনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় দিতেন না। লেখালেখি, নাটক–সিনেমার শুটিং থাকলে চলে যেতেন। অন্য স্যারদের মতো ল্যাব আর ডিপার্টমেন্টকে নিজেদের ঘরবাড়ি মনে করে ছাত্রছাত্রীদের অঢেল সময় দিতেন না। এর জন্যই হয়তো কোনো রিসার্চ স্টুডেন্টও রাখতেন না। এ ক্ষেত্রে স্যারের পেশাগত কোনো আক্ষেপ ছিল কি না, জানতে পারিনি।
পড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষক হিসেবে তাঁর সুনাম ধরে রাখতে পেরেছিলেন। পড়ানোতে ফাঁকি না দেওয়ার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে বোধ হয়। রসায়ন বিভাগে স্যারের তেমন দাপট ছিল না। বিভাগে শেষের দিকে তাঁর চালচলন ছিল অতিথিসুলভ। পরে তো উনি শিক্ষকতাই ছেড়ে দিলেন। সাহিত্য, সিনেমা–নাটক জীবনের জটিলতা তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির বাইরে অন্য কোনো কেন্দ্রে নিবিষ্ট করছিল। কাল্পনিক বা অন্যের জীবনের সুখ–দুঃখ নিয়ে হাস্যকৌতুক ফ্যান্টাসির নাটক–গল্প–সিনেমা বানানো যতটা সহজ, নিজের জীবন ও সংসারে বিপর্যয়ের টক্সিক ঘটনা নিজের তুচ্ছ আত্মজীবনীতেও জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় না! তা আমরা ছাত্ররা হুমায়ূন ফ্যামিলির ভেতরের অনেক কিছুই দূর থেকে মিডিয়ার সত্য–মিথ্যা গালগল্প থেকেই জানতে পারতাম।
হুমায়ূন স্যার সিনিয়র শিক্ষকদের ভীষণ সম্মান ও সমীহ করে চলতেন। অবশ্য এর পেছনে কারণও ছিল; আমাদের ডিপার্টমেন্টের সব সিনিয়র স্যারই হুমায়ূন আহমেদেরও শিক্ষক।
হুমায়ূন স্যার সিনিয়র শিক্ষকদের ভীষণ সম্মান ও সমীহ করে চলতেন। আমরা অবাক হতাম এত বড় একজন নামজাদা ঔপন্যাসিক, নাট্যকার সিনিয়র প্রফেসরদের দেখে কেমন যেন ভয়মিশ্রিত ভক্তি–শ্রদ্ধায় লাউডগার মতো নুয়ে পড়তেন। অবশ্য এর পেছনে কারণও ছিল; আমাদের ডিপার্টমেন্টের সব সিনিয়র স্যারই হুমায়ূন আহমেদেরও শিক্ষক। শিক্ষকদের যে ভয় পেতে হয়, আর ভয় পাওয়ার পুরোনা ট্র্যাডিশন ধরে রাখতে হয়, তা হুমায়ূন আহমেদকে না দেখলে বোঝা যেত না। হয়তো ল্যাবে কখনো সিনিয়র কোনো স্যার ভিজিট বা অন্য কোনো প্রয়োজনে ঢুকলে হুমায়ূন স্যার উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করতেন। আর তাঁদের পিছু পিছু ঘুরতেন, তাঁদের রুম পর্যন্ত প্রায়ই এগিয়ে দিয়ে আসতেন। আমাদের সেকেলে ওস্তাদ/গুরুভক্তির ভাব হুমায়ূনের ভেতর ছিল। আর এ জিনিসটা যেন বাঙালির বিশেষ সম্পদ, তা বোঝাতে চাইতেন। দূর থেকে প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা লোকটার কাঁচুমাচু ভাবটা আমরা প্রায়ই উপভোগ করতাম!
হুমায়ূন আহমেদ আধুনিক বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার ও ইন্টারেস্টিং দিকগুলার প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলেন। এর মধ্যে একটা ছিল কোয়ান্টাম মেকানিকস। এ বিষয়ে তাঁর আগ্রহ এতটাই প্রবল ছিল যে উনি বাংলায় কোয়ান্টাম মেকানিকসের একটা বই লিখে বসলেন। ক্লাসে সেটা তাঁকে আনতে দেখতাম। শুনেছি হুমায়ূন স্যার বিভাগের চেয়ারম্যান স্যারের কাছ থেকে কোর্সটা উনিই পড়াবেন বলে নিজের থেকে চেয়ে নিতেন প্রতিবার।
মাস্টার্সে কোয়ান্টাম মেকানিকসের ক্লাসের একদিনের ঘটনা খুব মনে পড়ে। আইনস্টাইনকে বাদ দিয়ে তো কোয়ান্টাম মেকানিকস কল্পনা করা অসম্ভব। আমরা জানি আইনস্টাইন জগৎজুড়ে বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কারণে। এই তত্ত্ব প্রকাশ হওয়ার পর বিজ্ঞানের ক্ল্যাসিক্যাল ভিত্তিটা নড়বড় হয়ে গিয়েছিল। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা (স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি) প্রকাশ পায় ১৯০৫ সালে। এই থিওরিতেই প্রমাণ করা হয় বিখ্যাত সেই সমীকরণ E=mc2। আরেকটা হলো সাধারণ আপেক্ষিকতা (জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি), প্রকাশ পায় ১৯১৫ সালে। এই তত্ত্বে মাধ্যাকর্ষণকে সময় ও স্থানের বক্রতার ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। সেদিন আমাদের ক্লাসে ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট বিষয়ে হুমায়ূন আহমেদ পড়াতে গিয়ে আইনস্টাইনের কথা পাড়লেন, সেই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির কথা, রবীন্দ্রনাথ আর আইনস্টাইনের সাক্ষাতের কথা। স্যার বললেন, সারা দুনিয়ায় তখন কে বেশি বিখ্যাত? রবীন্দ্রনাথ নাকি আইনস্টাইন? হুমায়ূন আহমেদের মতে রবীন্দ্রনাথ। হুমায়ূনের মতে রবীন্দ্রনাথ বেশি বিখ্যাত, তাই আইনস্টাইন তাঁকে দাওয়াত দিয়েছেন নিজের বাড়িতে। তাঁর মতে, লজিক তা–ই বলে। বিখ্যাতকে কোলে টেনে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা কার না থাকে।
হুমায়ূন আহমেদের এই যুক্তি ক্লাসের সবাই গিলল। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘স্যার, আপনার এই যুক্তির কোনো ভিত্তি নাই, এইটা আপনার মনগড়া।’ স্যার থতমত খেলেন। ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চার একজন ছাত্র এভাবে তাঁর বক্তব্যে বাদ সাধল! জীবনে যেন উনি তর্কে প্রথম একটা বাড়ি খেলেন। পুরা ক্লাসে সুনসান স্তব্ধতা নেমে এল। সবাই ভাবল, হুমায়ূন স্যার এবার কায়দা মতো ধরা খাইছেন। কারণ, আমি যে সাহিত্যচর্চা করি, ক্লাসের সবাই জানত। আর এসব নিয়ে আমি নাড়াচাড়া করি, হুমায়ুন আহমেদ জানতেন না। আমিও যেচে কখনো তাঁর সঙ্গে নিজের সাহিত্যিক পরিচয় দিইনি। স্যার আমার উদ্দেশে বললেন, তুমি ক্লাস শেষে আমার রুমে দেখা কোরো। সবার সামনে আমি যেন তর্কটা টেনে লম্বা না করতে পারি। পাশের থেকে কে যেন আস্তে করে বলে বসল, ‘হিমু আর মিসির আলির ঝগড়া বাঁইধা গেছে!’
ক্লাস শেষে হুমায়ূন স্যারের রুমে যাই। আমি দেখি উনি রীতিমতো ঘামছেন। ঘাবড়ে গিয়ে ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির একটা বই নিয়ে অনেকক্ষণ পৃষ্ঠা ওল্টাতে থাকলেন। অনেকটা কড়া সুরের গলায় উনি বলেই বসলেন, ‘তুমি এসব তথ্য জানলে কোত্থেকে?’ কাকতালীয়ভাবে আমার সাইড ব্যাগে তখন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ‘রবীন্দ্রজীবনী’ আর আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের ওপর একটি বই ছিল। বই খুলে আমি দেখাই, আইনস্টাইন নোবেল পেয়েছেন ১৯২১ সালে। উনি মানতে পারলেন না। আমি বললাম, স্যার, বিষয়টা এই যে আইনস্টাইনকে ১৯২১ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্টের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার জন্য। এর কারণ কী? কারণ হলো আপেক্ষিকতার তত্ত্ব তখনো তত্ত্বই তা পরীক্ষা দ্বারা উত্তীর্ণ হয় নাই। তাই এত হইচই ফেলে দেওয়া আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য আইনস্টাইনের কপালে নোবেল জোটে নাই। কিন্তু আইনস্টাইন বিখ্যাত মূলত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্যই, ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্টের জন্য নয়। তাহলে দাঁড়াল—আইনস্টাইনই বিখ্যাত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথের আগেই। সেই ১৯০৫ সালেই, সেই বিশেষ আপেক্ষিকতা (স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি) প্রকাশিত হওয়ার সময়েই। রবীন্দ্রনাথ বিখ্যাত হয়েছেন এর অনেক পরে, ১৯১৩ সালে।
তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে হুমায়ূন হার মানলেন তাঁরই ছাত্রের কাছে। এই হার মানতে উনি প্রস্তুত ছিলেন না! সেদিন স্যারের বিষণ্ণ মুখটার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
এর পর থেকে আমি স্যারের ক্লাসে একটু আড়াল রচনা করেই অবস্থান নিতাম, তাঁর চোখে না পড়ি যেন। এ জন্য অন্ধকার টাইপের পেছনের বেঞ্চের দিকে কোনো একটা জায়গা বেছে নিতাম। এটা করতাম এ জন্য যে সেদিনের ঘটনার কোনো দাগ যেন দাগা হয়ে স্যারের মনের পর্দায় ভেসে না ওঠে!
এখন হাসি পায় সেই স্মৃতি মনে পড়লে। কারণ, হুমায়ূন আহমেদ ও আমাদের দুজনের কাছেই আরও কিছু তথ্য তখনো ঘাটতি ছিল—সচেতন পাঠকমাত্রই বুঝতে পারছেন। হায় রে দিন, পাখির থেকে জোরে উড়াল দিয়ে পালায়। হুমায়ূন স্যারকে ক্যানসারে অন্যলোকে নিয়ে গেছে। আমরা রসায়ন বিভাগের সহপাঠীরা কখনো এক জায়গায় মিলিত হলে কালেভদ্রে হুমায়ূন স্যারের কথা আজও ওঠে।