আব্বু
ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় এখনো হল থেকে বের হওয়ার আগে আব্বুকে ফোন দিতে হয় একদম বাচ্চাদের মতো, আব্বু, আমি ক্লাসে যাচ্ছি। তারপর আব্বুর শান্তি, আমিও চাই এমনটাই থাকুক আমাদের বাচ্চা বাচ্চা সম্পর্কটা।
একটা সময় যে মানুষটা আমাকে একা কোনো কাজ করতে দিত না, এখন সেই মানুষটাই আমাকে বলে, তুমি পারবা, নিজের কাজ নিজেই করো। ক্লাস নাইনে ফ্রেন্ডরা যখন সবাই পিকনিকে যাচ্ছিল, আমাকে যেতে দেবে না আব্বু, আর আব্বু এখন ভার্সিটির পিকনিকে যাব না বলায় নিজে থেকে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে বলেছিল, যাবা না, কেন যাও। আগে যেকোনো কাজ করতে গেলেই বলত, থাক, তুমি ছোট মানুষ, পারবে না। আর এখন বলে, তুমি ছোট মানুষ, আমি জানি, তা-ও তুমি পারবে। বাসা থেকে প্রথম যখন সিলেটে পড়তে যাব, তখন খুব ভয় পাচ্ছিলাম কীভাবে কী করব, একা যতে পারব কি না। আম্মু বারবার বলছিল, আসবে আমার সঙ্গে কিন্তু আব্বু তাকে কোনোভাবেই আসতে দেবে না, তার একটাই কথা, আমার মামণি একা যাবে, একা কীভাবে যেতে হয়, ওকে শিখতে দাও। আমি জানি, আমার মামণি পারবে, মনে মনে খুব অবাক হলেও কেন জানি একটা সাহস পাচ্ছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল আমি পারব। সিলেটে না পৌঁছানো পর্যন্ত ১০-১২ বার ফোন দিয়েছিল। আগে ভয় লাগলেও এখন ঠিকই একা চলতে পারি। ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় এখনো হল থেকে বের হওয়ার আগে আব্বুকে ফোন দিতে হয় একদম বাচ্চাদের মতো, আব্বু, আমি ক্লাসে যাচ্ছি। তারপর আব্বুর শান্তি, আমিও চাই এমনটাই থাকুক আমাদের বাচ্চা বাচ্চা সম্পর্কটা। ভার্সিটিতে প্রথম পরীক্ষা দিলাম। খুব খারাপ হয়েছে। আব্বুকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলাম, আব্বু, আমার পরীক্ষা খুব খারাপ হয়েছে। আব্বু হাসতে হাসতে বলেছে, ভার্সিটির পরীক্ষা ভালো হয় নাকি, আমি ভার্সিটিতে যখন পড়তাম, কত খারাপ পরীক্ষা দিতাম! তাই বলে মন খারাপ করে কখনো বসে ছিলাম নাকি! আজ খারাপ তো কাল ভালো, এই পরীক্ষা কোনো ব্যাপার হলো নাকি! সামনে কত পরীক্ষা আরও দিতে হবে! এমন মন খারাপ করলে চলবে নাকি! একনিমেষেই কেন জানি মন ভালো হয়ে গেল। হল চেঞ্জ করার সময় অনেক অফিশিয়াল কাজ ছিল, যা করতে করতে আমি খুব বিরক্ত হয়ে আব্বুকে ফোন দিয়ে বলি, আমি আর কিছু করতে পারব না। তুমি এসে করে দিয়ে যাও। আব্বু তখন বলে, তোমার কাজ তুমি করো, আমি কিছু করতে পারব না। খুব খারাপ লাগছে আব্বুর এই কথা শুনে। রাগে, জেদে সব কাজ শেষ হওয়ার পর আব্বুকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম, আমার কাজ আমি করে ফেলছি। আব্বু হাসতে হাসতে বলে, আমি জানতাম তুমি একাই করতে পারবে। তাই তো ওই দিন এমন বলেছি। এই মানুষটাকে দেখে অবাক হই। আমাকে কী সুন্দর একা চলতে শিখিয়ে দিল। এখনো কোনো কাজ করার আগে আব্বু সব সময় সাহস দেয়। এই মানুষটার ভালোবাসা কেমন জানি। এই রকম ভালোবাসাগুলোই হয়তো মুখে বলা ভালোবাসার চেয়ে বেশি আনন্দের হয়। তুমি যেমন মুখ ফুটে বলো না তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো, আমিও তেমন বলতে পারি না, আব্বু, আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
তাসনিম বিনতে আবদুর রহিম (মুনা)
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]