তুমি একটা ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লিখে আনো দেখি

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রঙ্গচিত্র: আরাফাত করিম

একবার এক মদ্যপ এসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কাছে মদ খাওয়ার জন্য টাকা চাইলেন। বিদ্যাসাগর তাঁকে বললেন, ‘আমি তো কোনো মাতালকে সাহায্য করি না। তোমাকে টাকা-পয়সা দিতে পারব না।’ তখন মাতাল বললেন, ‘কিন্তু আপনি যে মধুসূদনকে সাহায্য করেন, তিনিও তো মদ খান।’

সে সময় বিদ্যাসাগর বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি মধুসূদনের মতো তোমাকেও টাকা-পয়সা দেব, তা দিয়ে তুমি মদ খেয়ো। তার আগে তুমি একটা মেঘনাদবধ কাব্য লিখে আনো দেখি।’

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন কথার ওস্তাদ। তাঁকে কেউ কথা দিয়ে আটকাবে, এমনটা হওয়া কষ্টকর ছিল। তো একবার এক ধনী ব্যক্তি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বইয়ের সংগ্রহ দেখার জন্য তাঁর বাসায় এলেন। এসে দেখলেন প্রতিটি বই খুব যত্ন করে এবং প্রচুর খরচ করে বাঁধানো। একসময় বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে ওই ব্যক্তি বিদ্যাসাগরকে বললেন, ‘পণ্ডিতমশাই, এত টাকা খরচ করে বইগুলো বাঁধানোর কী দরকার? এ টাকা দিয়ে অনেকের উপকার করতে পারতেন।’ বিদ্যাসাগর নিজের খদ্দরের চাদরটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে খুব গম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন, ‘মশাই, আপনার গায়ের শালটা কিন্তু বেশ সুন্দর। কোথা থেকে কিনেছেন? দাম কত?’ ওই ব্যক্তি সগর্ব বললেনÑ‘শালটা শহর থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছি।’ বলে শালের গুণকীর্তন করতে লাগলেন তিনি।

বিদ্যাসাগর এবার পেলেন সুযোগ, ‘সবই তো বুঝলাম। পাঁচ সিকে কম্বলেও তো শীত কাটে। এই দেখুন না, আমি খুব অল্প টাকার চাদর পরে আছি। কী দরকার ৫০০ টাকা দামের শাল গায়ে দেওয়ার? এই টাকায়ও তো অনেকের উপকার হতে পারত। তাই নয় কি?’

বিদ্যাসাগরের এমন ধারালো জবাবে লোকটি একেবারে চুপ হয়ে গেল।

সূত্র: অংশুমান চক্রবর্তীর বঙ্গ মনীষীদের রঙ্গ রসিকতা


গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন