মোনালিসার জন্য ভালোবাসা

পিকাসো স্টাইলে মোনালিসা
পিকাসো স্টাইলে মোনালিসা

(গতকালের পর)

মোনালিসা–চোরের জবানবন্দি

১৯১১ সালের ১১ আগস্ট প্যারিসের ল্যুভ জাদুঘরের গ্যালারি থেকে গায়েব হয়ে গেল লেওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’। সেদিন কেউ জানলই না।

মোনালিসার একপাশে কোরাজ্জিওর আঁকা ‘মিস্টিক্যাল ম্যারেজ’ আর পাশে টিশ্যানের ‘অ্যালেগরি অব আলফঁসো দা অ্যাভালস’। পরদিন ১২ আগস্ট ১৯১১ একজন ফরাসি শিল্পী লুই বেরু নিজের আঁকার প্রয়োজনে জাদুঘরের স্যালন ক্যারে গ্যালারিতে ঢুকে দেখলেন, মাঝখানের জায়গাটা ফাঁকা, শুধু চারটি পেরেক দেয়ালে গাঁথা। অথচ পাঁচ বছর ধরে মোনালিসা তো এখানেই ছিল।

শিল্পী গার্ডদের সঙ্গে কথা বললেন। ফটোগ্রাফির জন্য কখনো ছবি নামানো হয়। গার্ডদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হলো, ছবিটি ফটোগ্রাফারদের কাছে। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি আবার এলেন, ছবিটি না দেখে তিনি শাখাপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখলেন, মোনালিসা ফটোগ্রাফারদের কাছে নেই। সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ শুরু হয়ে গেল, কিন্তু কোথাও নেই লেওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা।

ল্যুভ পরিচালক তখন ছুটিতে, দ্বিতীয় প্রধান মিসরীয় অ্যান্টিক বিভাগের কিউরেটর ঘটনাটি জানলেন। তিনি পুলিশ ডাকলেন। প্রায় ৬০ জন অনুসন্ধানকারীকে পুরো জাদুঘর তল্লাশির হুকুম দেওয়া হলো। সেদিনের দর্শকদের আস্তে আস্তে বের করে দিয়ে ল্যুভ বন্ধ করে ভেতরে চিরুনি অনুসন্ধান চালিয়ে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হলো, মোনালিসা সত্যিই চুরি হয়ে গেছে।

তদন্তের সুবিধার জন্য জাদুঘর এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো। অনুসন্ধানের প্রথম দিনই একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার: মোনালিসার মূল্যবান ফ্রেমটি অক্ষত অবস্থায় সিঁড়ির কাছে পড়ে আছে, বহিরাবরণ কাচটিও। ওই কাচ নিয়ে বিতর্ক ছিল। একজন কাউন্টেস দুই বছর আগে ফ্রেমটি জাদুঘরকে দান করেছিলেন।

বিমূর্ত মোনালিসা
বিমূর্ত মোনালিসা

চোর তাহলে প্রদর্শনী দেয়াল পর্যন্ত এসেছে, পেরেক থেকে এটা তুলে নিয়েছে, সিঁড়িতে এসে ফ্রেমের ভেতর থেকে ছবিটা বের করে প্রহরীদের দৃষ্টি এড়িয়ে বেরিয়ে গেছে।

(বলা বাহুল্য, সিসিটিভির যুগ তখনো অনেক দূরে। ১৯৪২ সালে প্রথম জার্মানির সিমেন্স অফিসে ভি-২ রকেট উৎক্ষেপণ দেখার জন্য প্রথম ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা টিভি ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৬৮ সালে নিউ ইয়র্কের স্ট্রিট ক্রাইম নজরদারি করতে।)

কিন্তু ব্যাপারটি ঘটল কখন?

মিউজিয়ামের একজন কর্মচারী বলেছেন, সকাল ৭টায় তিনি দেয়ালে মোনালিসাকে দেখেছেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর তিনি যখন আবার এদিক দিয়ে যান, তখন ছবিটা ছিল না, তিনি মনে করেছেন, জাদুঘরের কোনো কর্মকর্তা নিয়ে গেছেন।


এই কক্ষের নিয়মিত প্রহরীর সন্তান হাম রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি ছুটিতে ছিলেন, তাঁর জায়গায় যে প্রহরী কাজ করছিলেন, তিনি সকাল ৮টার দিকে সিগারেট খেতে কয়েক মিনিটের জন্য একটু দূরে ছিলেন।

সেদিন ক্লিনিংয়ের জন্য সকালে জাদুঘর বন্ধ ছিল। তারপরও সকালে স্যালন ক্যারে কক্ষে প্রায় ৮০০ জন ঢুকেছেন—তাঁরা জাদুঘরের স্টাফ, গার্ড, শ্রমিক, ক্লিনার, ফটোগ্রাফার। একজন আগন্তুকের কথাও কেউ বলেছেন।

একজন বিখ্যাত ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ এলেন, ফ্রেমের আঙুলের ছাপ নিলেন, কিন্তু সেই ছাপের সঙ্গে ম্যাচ করে এমন কাউকে পেলেন না।

মিউজিয়ামে এলিভেটর সংযোজনের কাজ চলছিল, বাইরে একপাশে মাচা বাঁধা ছিল। সন্দেহ করা হলো, চোর সেদিক দিয়ে ঢুকেছে। তবে তদন্তকারীরা একমত হলেন, চোর জাদুঘরের ভেতরটা সম্পর্কে বেশ জ্ঞানবান। 

কিন্তু কে চুরি করল?
চুরির খবর বনের আগুনের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল।

ভ্যাম্পায়ার মোনালিসা
ভ্যাম্পায়ার মোনালিসা

সবার আগে ফরাসিরা দোষ দিল জার্মানদের। তাদের নৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য জার্মানরা চুরি করিয়েছে। জার্মানরা বলল, কাজটা ওদেরই; আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে দৃষ্টি সরাতে নিজেরাই করেছে। প্যারিসের পুলিশের তিনটি অভিমত: এটি রাজনৈতিক নয়, তবে ল্যুভের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে নাশকতামূলক হতে পারে; অসন্তুষ্ট কোনো ল্যুভ কর্মচারী কিংবা কোনো বাতিকগ্রস্ত কেউ কাজটা করেছেন। অথবা আর্থিক লাভের জন্য সরকারকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায়ের জন্য মোনালিসা চুরি করেছে।

গিওম আপোলিনেয়ার ও পাবলো পিকাসো গ্রেপ্তার

ল্যুভ থেকে চুরির রেকর্ড আছে এমন একজন চিত্রশিল্পী গ্যারি পিরে। প্যারিসের পুলিশ মোনালিসা–চোর হিসেবে তাকে সন্দেহ করল। তাকে আটক করার চেষ্টা করল, কিন্তু তাকে প্যারিসে পেল না। তারা গিয়ে হাজির হলো তার চাকরিদাতা এবং সুররিয়ালিজম আন্দোলনের নেতা কবি গিওম আপোলিনেয়ারের কাছে। তাঁকে সন্দেহের তালিকায় রাখার কারণ, তিনি ল্যুভ জাদুঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি এই বিবৃতির পুনরুক্তিও করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফরাসি কবি গিওমের স্পেনিশ শিল্পী বন্ধু পাবলো পিকাসো গ্যারি পিরের কাছ থেকে আইবেরিয়ান স্টোন কিনেছেন। তাঁর ধারণা ছিল না যে বিক্রেতা পুলিশের তালিকাভুক্ত ল্যুভ জাদুঘরের একজন চোর। পুলিশি তদন্তের পর দুজনই ছাড়া পান।

তারপর দুই বছর কেটে যায়। মোনালিসার কোনো খবর মেলে না।
আলফ্রেদো জেরি অ্যান্টিকস, ছবি বিভিন্ন ধরনের দুর্লভ সামগ্রী কেনাবেচার ব্যবসা করেন। তার অফিস-কাম-দোকান ইতালির ফ্লোরেন্সে। ব্যবসার প্রয়োজনে ব্যবসার প্রয়োজনে তারই দেওয়া একটি বিজ্ঞাপন ১৯১৩-র শরতে ইতালির পত্রিকায় ছাপা হলো তিনি ভালো মূল্য দিয়ে শিল্পসামগ্রী কিনতে চান।

মোনালিসা
মোনালিসা

২৯ নভেম্বর ১৯১৩ তারিখে লিখিত একটি চিঠি আলফ্রেদো জেরি পেলেন, তাতে বলা হয়েছে পত্রলেখকের কাছে ল্যুভ জাদুঘর থেকে চুরি হয়ে যাওয়া লেওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা আছে। ফিরতি ঠিকানা হিসেবে পত্রলেখকের একটি প্যারিস পোস্টবক্স নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। বিক্রেতার নামও ‘লেওনার্দো’, জেরি মনে করেছেন এটা প্রকৃত মোনালিসা হতে পারে না, সম্ভবত মোনালিসার কোনো কপি হবে। তারপরও তিনি ফ্লোরেন্সের উফিজি জাদুঘরের পরিচালক জিওভান্নি পোরজির সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। দুজন আলোচনা করে ঠিক করলেন, বিক্রেতাকে চিঠি দিয়ে বলা হবে, কোনো মূল্য অফার করার আগে ছবিটি দেখতে চান।

সঙ্গে সঙ্গে ছবি দেখার জন্য জেরি চিঠি পেলেন। জেরি জবাব দিলেন, তাঁর পক্ষে প্যারিস যাওয়া সম্ভব নয়, তবে ২২ ডিসেম্বর মিলানে তাঁর সঙ্গে সংগোপনে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

গোঁফওয়ালা এক ইতালিয়ান ১০ ডিসেম্বর ১৯১৩ ফ্লোরেন্সে জেরির সেলস অফিসে এসে হাজির হলেন। জেরি তখন একজন খদ্দেরের সঙ্গে ব্যবসায়িক কাজ করছেন। খদ্দের চলে যাওয়ার পর গোঁফওয়ালা নিজের পরিচয় দিলেন, তিনি লেওনার্দো ভিনসেনজো, তাঁর হোটেল রুমে মোনালিসা রেখে এসেছেন।

তিনি কয়েকটি শর্তে বিক্রিতে সম্মত:

১. ছবিটির জন্য তাঁকে অর্ধমিলিয়ন (পাঁচ লাখ) লিরা দিতে হবে।

২. ছবিটি ওফিজিতে থাকবে, কখনো ফ্রান্সকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না।

তিনি আরও বললেন, ইতালি থেকে নেপোলিয়ন মোনালিসা চুরি করে নিয়েছেন, সে জন্য তিনিও ল্যুভ থেকে এটা চুরি করে নিয়ে এসেছেন-ইতালির জিনিস ইতালিতে ফিরিয়ে আনার তাগিদে। 

জেরি কোনো রকম কালক্ষেপণ না করে তাঁর প্রস্তাবিত মূল্যে রাজি হয়ে গেলেন, তবে উফিজি জাদুঘরে টাঙাতে হলে জাদুঘরের পরিচালককে অবশ্যই তা দেখাতে হবে। লেওনার্দো ভিনসেনজো পরদিন তাঁর হোটেলকক্ষে দুজনকে আসতে বললেন। ফিরেই জেরি পুলিশ এবং উফিজির পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।

পরদিন জেরি ও পরিচালক পোজ্জি হোটেলে গেলেন। লিওনার্দো একটি কাঠের ট্রাংক টেনে বের করলেন। ট্রাংক খোলার পর লেওনার্দো এক জোড়া আন্ডারওয়্যার, পুরোনো জুতা ও শার্ট বের করলেন। তারপর একটি ফলস পাটাতন সরালেন, সেখানেই মোনালিসা।

মোনালিসার প্রকৃত চোর। ভিনসেনজো পেরুজিয়া
মোনালিসার প্রকৃত চোর। ভিনসেনজো পেরুজিয়া

মিউজিয়ামের পরিচালক বললেন, এই ছবিটিকে লেওনার্দো দা ভিঞ্চির অন্যান্য ছবির সঙ্গে তুলনা করে নিশ্চিত হতে হবে। তারপর তাঁরা ছবিটি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। লেওনার্দো ভিনসেনজোর প্রকৃত নাম ভিনসেনজো পেরুজিয়া। তিনি গ্রেপ্তার হলেন। তাঁর ১ বছর ১৫ দিনের কারাদণ্ড হয়। চোর হিসেবে কারাদণ্ড ভোগ করলেও ইতালিয়ানদের কাছে তিনি দেশপ্রেমিক নায়ক হয়ে ওঠেন। ৪৪ বছর বয়সে জন্মদিনেই তাঁর মৃত্যু হয়।

তিন.
ভিনসেনজোর জবানবন্দির অনুবাদ
আমার নাম ভিনসেনজো পেরুজিয়া, জন্ম ৮ অক্টোবর ১৮৮১, দুমেনজা (কোমো)-তে...আমি লিখতে ও পড়তে জানি, আমি এলিমেন্টারি স্কুলে থার্ড গ্রেড পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। আমি বিয়ে করিনি, কিছুদিনের জন্য সৈনিক ছিলাম; কিন্তু বুকের দুর্বলতায়, আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে দুর্বলতার কারণে আমাকে সেনাবাহিনী থেকে বাদ দেওয়া হয়।

আমি দুবার ল্যুভ জাদুঘরে কাজ করেছি। প্রথমবার ১৯০৯ এবং দ্বিতীয়বার ১৯১০ সালে। প্রতিবারই তিন-চার মাস করে কাজ করেছি। আমি ক্যানভাস পরিষ্কার করে কাচের নিচে ছবি রাখতে সাহায্য করতাম
সেখানে কাজ করার সময় জানতে পারি, ল্যুভ জাদুঘরের অনেক পেইন্টিং ইতালি থেকে চুরি করা। একদিন বিরতির সময় আমি একটি ছোট লাইব্রেরিতে যাই। সেখানে ল্যাবরেটরিতে একটি আলমারির ভেতর থেকে একটি বই টেনে নিয়ে পড়ি (লেখকের নাম মনে নেই), তাতে অনেক ছবির ফটোগ্রাফও ছিল। আমি জানতে পারি, প্রথম নেপোলিয়ন ইতালি থেকে অনেক ছবি চুরি করে নিয়ে এসেছেন।

সেই মুহূর্ত থেকেই আমার মধ্যে একটি বাসনার জন্ম হয়, আমি ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত বোধ করতে থাকি—ইতালিতে প্রোথিত আমার অহংকার, আমার মনে হয় এমন একটি পেইন্টিংও আমি যদি ইতালিকে ফিরিয়ে দিতে পারতাম!
... (ল্যুভ জাদুঘরে) আমার কাজ শেষ হওয়ার পর আমার প্রকল্প সচল রাখি।
আগস্ট মাসের এক সকালে শ্রমিকের সাদা ঢিলা আলখাল্লা পরে, আমি ল্যুভে আসি; পেছনে সিন নদীর দিক থেকে খোলা দরজা দিয়ে আমি শ্রমিকদের সঙ্গে ভেতরে ঢুকে যাই। আমি ভেতরে যেতে থাকি। তারপর দেখি, আমি বর্গাকার একটি হলরুমে (স্যালন ক্যারে), কোনো রকম পূর্ব-পরিকল্পনা ছাড়াই আমার নজর পড়ে লেওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা গিয়োকোন্দার ওপর (ইতালিয়ানদের কাছে ছবিটি এই নামেই পরিচিত। লেওনার্দো তাঁর আঁকা পোর্ট্রেটটির কোনো নাম দেননি। ভাসারির লেখাতেই প্রথম মোনালিসা উল্লেখ করা হয়েছে)।

যে কক্ষে আমি গিয়েকোন্দাকে পেয়েছি, সেখানে র‌্যাফায়েলের লা বোল জার্দিনেয়ার, দ্য হলি ফ্যামিলি অব ফ্রান্সিস ওয়ান, আর্চ অ্যাঞ্জেল মাইকেল; কাস্তিলিয়ন নামের একজন শিল্পীর ছবি আছে, আরও আছে ম্যাডোনা নামের একটি ছবি।
গিয়োকোন্দার ছবিটি দুটি হুকের ওপর বসানো ছিল। ছবিটি ওপরের দিকে তুলতেই দেয়াল থেকে সরে আসে। তারপর আমি সাত মিটার কক্ষসংলগ্ন সিঁড়িঘরে লুকিয়ে স্ক্রুগুলো খুলে ছবিটা বের করে নিই। ফ্রেমটা সেখানে ফেলে রেখে ছবিটা আমার ঢিলা পোশাকের ভেতর ঢুকিয়ে বাইরের আঙিনায় চলে আসি। প্রহরী কক্ষ থেকে বেরোনোর দরজায় অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল, আমাকে লক্ষ করেনি। আমি তখন বাড়ি চলে আসি (ভায়া দেল’ হসপিটাল সেন্ট লুই, নম্বর-৫), কোথাও না লুকিয়ে ছবিটি বাড়িতে রেখে রাস্তায় অন্য একটি বাড়িতে কাজে চলে আসি।

আমি কুরিয়ার ডেল্লা মেরা কাগজে ফ্লোরেন্সের অ্যান্টিক ব্যবসায়ী জেরি সাহেবের ঠিকানা পেয়ে আমি তাঁকে লিখলাম, উফিজি জাদুঘর গিয়োকোন্দো কিনতে পারে, তিনি যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। তিনি বললেন, আমি যদি ছবিটাকে ফ্লোরেন্সে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আমার প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে। লিখে আমি জানালাম, ফ্লোরেন্সে আসতে পারি। যদি কাজটা তাড়াতাড়ি সারতে চাই, সে ক্ষেত্রে ফ্লোরেন্স ছাড়া অন্য কোনো শহর পছন্দ করলেও তার আপত্তি নেই বলে জেরি জানালেন। আমি জানালাম, প্রথমে আমি মিলান যাচ্ছি, সেখানে গিয়েছি; কিন্তু সেখানে থাকাটা আমার পছন্দ হয়নি, আমি জেরিকে টেলিগ্রাম করে জানালাম, ফ্লোরেন্সেই আসছি। ঘণ্টা দুয়েক মিলানে থেকে আমি বুধবার বেলা ১১টায় পৌঁছাই।
ফ্লোরেন্সে ঢুকে ত্রিপোলি হোটেল দেখতে পাই, সেখানে রুম নিই; স্টেশনে ফিরে এসে আমার লাগেজ তুলে আনি। জেরি সাহেবকে পেতে একটু তাড়াহুড়ো করি। আমি তাঁকে পাই এবং বলি যে ছবিটি আমার কাছে আছে। যিনি ছবিটি কিনবেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় চেয়ে পরদিনের জন্য আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করা হয়। ইতালিকে গিয়োকোন্দো ফিরিয়ে দেওয়ার কারণে আমি পুরস্কৃত হওয়ার কথা বলি, কিন্তু টাকার অঙ্কে আমি তা স্থির করিনি। জেরি আমাকে পাঁচ লাখ লিরা (প্রায় পাঁচ হাজার পাউন্ড) চাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কারণ যিনি ছবিটি কিনবেন, বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পাবেন। কাজেই আমার পুরস্কারটি পেতে পারি। তিনিও একটি পার্সেন্টেজ পাবেন। জেরির সঙ্গে আমার সাক্ষাতের পরদিন আবার তাঁর কাছে যাই এবং তাঁকে ও প্রফেসর পোজ্জিকে একত্রে পাই।

তাঁরা ছবিটি দেখতে চান, আমি তাঁদের হোটেল ত্রিপোলিতে নিয়ে আসি, তখনো যেহেতু বাইরে পর্যাপ্ত আলো, ছবিটি নিয়ে উফিজি গ্যালারিতে আসতে বললেন। আমি তা-ই করি, আমরা তিনজন সরাসরি উফিজিতে চলে আসি।

সেখানে অধ্যাপক পোজ্জি ও বিশেষজ্ঞ ফটোগ্রাফার সম্মত হন যে এটা সত্যিকারের মোনালিসা। আমি ছবি সেখানে রেখে আসি এবং সম্মত হই, পোজ্জি রোমে তাঁর বস রিক্কিকে লিখবেন। তিনি এসে আমার পুরস্কার ঠিক করবেন। এসব ঘটেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (১২ ডিসেম্বর), ততক্ষণে রাত হয়ে যায়।

মোনালিসার সন্দেহভাজন দুই চোর। গিওম আপোলিনেয়ার এবং পাবলো পিকাসো
মোনালিসার সন্দেহভাজন দুই চোর। গিওম আপোলিনেয়ার এবং পাবলো পিকাসো

পরদিন আমি দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করি, আমি আবার জেরির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করি। আমি তাঁকে বাড়িতে পাইনি। জেরির পক্ষে তাঁর ছেলে আমাকে জানায়, তার বাবা ফিরেছে; কিন্তু এখন দেখা করা যাবে না। আমাকে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত হোটেলে থাকতে বলেছেন, আমাকে ফোন করা হবে।

৫টা বেজে গেল; কিন্তু কেউ না আসায় আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এ সময় আমি গ্রেপ্তার হই।

আমাকে সত্য বলার জন্য চাপ দেওয়া অর্থহীন, কারণ আমি পুরো সত্যটাই বলেছি, সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলিনি। যে চিন্তা আমাকে বহু বছর ধরে তাড়া করে আসছিল, ছবিটি ইতালিকে ফিরিয়ে দেওয়া, আমি সে জন্যই ছবিটি নিয়ে এসেছি। এর বেশি আমার বলার কিছু নেই।

ভিনসেনজো পেরুজিয়ার এক বছর ১৫ দিন কারাদণ্ড হলে আপিল করার তা কমিয়ে সাত মাস করা হয়।

জেরির বর্ণনা অনুযায়ী কাঠের ট্রাংকের নিচের ডেকে লাল সিল্কের আস্তরণে অত্যন্ত যত্ন করে মোনালিসাকে রাখা হয়েছে।

এই নারীর জন্য হয়তো তাঁরও তীব্র ভালোবাসা জন্মেছিল।

মোনালিসা উদ্ধারের কাহিনি শিল্পজগৎকে অনুপ্রাণিত করে। ইতালিয়ানদের দাবি অনুযায়ী সে দেশের শহরে শহরে মোনালিসা প্রদর্শিত হয়। ৩০ ডিসেম্বর ১৯১৩ মোনালিসা ল্যুভ জাদুঘরে ফিরে আসে।

চার.
কয়েক দফা পত্রালাপের পর ছবিটি দেখে যথার্থতা যাচাই করে উফিজি জাদুঘরের জন্য কিনতে সম্মত হন। নির্ধারিত তারিখে আগেই জেরির ফ্লোরেন্সের অফিসে হাজির হন সেই কথিত লেওনার্দো।

বাকিটা জেরির জবানবন্দি থেকে উদ্ধৃত:
সেই বুধবার বিকেলে এক যুবক, সরু কালো গোঁফ ভদ্রজনিত পোশাক পরনে আমার অফিসে এসে হাজির হলেন এবং বললেন, গিয়োকোন্দা (মোনালিসা এ নামেই তখন ইতালিতে বেশি পরিচিত) তাঁর কাছে আছে। তার সঙ্গে হোটেলে গেলে ছবিটা দেখাতে পারবেন।

তিনি খুব নিশ্চয়তার সঙ্গে আমার প্রশ্ন গুলোর জবাব দিলেন এবং ছবির জন্য ৫ লক্ষ লিরা দাবি করলেন। আমি তাঁকে জানালাম যে আমি তাঁর চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে প্রস্তুত এবং তাঁকে পরের দিন বিকেল ৩.০০টায় আসতে অনুরোধ করলাম।

পরদিন তিনটার মধ্যে উফিজ পরিচালক জিওভান্নি পোজ্জি আমার অফিসে হাজির। ৩টা ১০ মিনিটেও তিনি এলেন না। ব্যবসাটা কি হাতছাড়া হয়ে গেল? আমরা অধৈর্য হয়ে উঠলাম। শেষ পর্যন্ত ৩টা ১৫ মিনিটে লেওনার্দো এলেন। আমি পোজ্জিবে লেওনার্দোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। দুজন খুব উৎসাহের সঙ্গে হাত মেলালেন। লেওনার্দো তাকে বললেন, ফ্লোরেন্সের শিল্প গৌরব পিতার মতো, যিনি রক্ষা করে চলেছেন এমন একজন মানুষের সঙ্গে হাত মেলাতে পেরে তিনি অনেক খুশি হয়েছেন।

আমরা তিনজন একসঙ্গে বের হই। পোজ্জি ও আমি বিচলিত এবং উদ্বিগ্নও ছিলাম। সে তুলনায় লেওনার্দো ছিলেন নির্বিকার, নিরাসক্ত, হোটেল ত্রিপোত্রি ইতালিয়ার চারতলায় তাঁর ছোট কক্ষে এলাম। তিনি কাঠ দিয়ে তৈরি একটি ট্রাংক বের করলেন। ট্রাংকটি জীর্ণ বস্তুতে ঠাসা পুরোনো ভাঙা জুতো, কাটা হ্যাট, এক জোড়া সাঁড়াশি, প্লাস্টার করার জিনিসপত্র, একটি ঢিলেঢালা ওভারকোট, কয়েকটি পেস্ট ব্রাশ, এমনকি ম্যান্ডেলিনও। কক্ষের মাঝখানে মেঝেতে এসব বের করে রাখল।

তারপর ট্রাঙ্কের একটি ফলস তাক খুলে ভেতর থেকে বের করেন লাল সিল্কে মোড়া জিনিসটি। আমরা এটা বিছানা বিছিয়ে দিলাম এবং আমাদের বিস্মিত চোখের সামনে স্বর্গীয় গিয়োকোন্দা আবির্ভূত হলো, একেবারে যেমন ছিল তেমনই, চমৎকারভাবে সুরক্ষিত। আমাদের সঙ্গে ফটোগ্রাফ নিয়ে এসেছি এটার সঙ্গে তুলনা করা জন্য জানালার কাছে নিয়ে আসি। পোজ্জি পরীক্ষা করেন আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে এটাই মূল ছবি। ছবির পেছনে সিল-এ ল্যুভের ক্যাটালগ নম্বর দেওয়া আছে, তাও মিলে গেছে।

পোজ্জি ১৯ ডিসেম্বর ১৯১৩ ফ্লোরেন্সে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা সরকারি কর্মকর্তার সতর্ক এবং আনুষ্ঠানিক কথকতার মতো। আলফ্রেদো জেরির বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মেলেনি।

লেওনার্দো সম্ভবত ন্যুড মোনালিসাও এঁকেছেন
লেওনার্দো সম্ভবত ন্যুড মোনালিসাও এঁকেছেন

১১ ডিসেম্বর তিনটায় আমি বোর্গা ও নিসান্তিতে জেরির অফিসে যাই। পেরুজিয়া (ততক্ষণে তার নাম যে লেওনার্দো নয়, ভেনসেনজো পেরুজিয়া তা জানা হয়ে গেছে) প্রায় এক ঘণ্টা দেরি করে পৌঁছলেন। তখন আমি ভিন্ন একটি কক্ষে ছিলাম, জেরি আমাকে তার উপস্থিতির সতর্কবার্তা দিলেন।

আমরা তিনজনই স্বেচ্ছায় বেরিয়ে গেলাম, সঙ্গে আর কেউই ছিল না। পেরুজিয়া যে হোটেলে থাকতেন সেখানে পৌঁছলাম। পথে মোনালিসা নিয়ে আমাদের তিনজনের মধ্যে কোনো কথাবার্তা হয়নি। আমি জেরির সঙ্গে কথা বলেছি, কিছুটা সামনে থেকে পেরুজিয়া হাঁটছে। আমাকে এটা যোগ করতে হবে যে জেরি তার সঙ্গে আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেননি বা আমার সম্পর্কে কিছু বলেননি। কাজেই পেরুজিয়া আমার সম্পর্কে কিছু জানতেন কি না, আমার জানা নেই। হোটেল ত্রিপোলিতে তাঁর কক্ষে ঢোকার পর তিনি দরজা–জানালা বন্ধ করে দেন যাতে বাইরে থেকে কারও দেখার আশঙ্কা না থাকে। তিনি একটি সাদা বাক্স থেকে লাল ফেল্টের কাপড়ে মোড়ানো ছবিটি বের করেন।

আমি পেইটিংটির দিকে তাকাই। আমি তখন বুঝতে পারি আমি লেওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা সেই মাস্টারপিসের সামনে। কিন্তু আমার অভিব্যক্তি পেরুজিয়া বুঝতে পারে, এমন কিছুই আমি করিনি। বরং বলি ছবিটি আমাকে ভালো করে পরীক্ষা করতে হবে এবং উফিজি জাদুঘরে গেলে এখনই তা করা সম্ভব।

তিনি তখনই যুক্তি মেনে নিলেন। এটা যে প্রকৃত গিরোকোন্দা এমন কিছু আমাদের বোঝাতে চেষ্টা করেননি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন ছবি নিয়ে উফিজিতে আসছেন।

আসলে তখনই আমরা তিনজনই এক সঙ্গে হোটেল থেকে বের হই। একটি ফিকার (ঘোড়াটানা গাড়ি) ডাকি, ছবিটা পেরুজিয়া বহন করছিলেন। পৌঁছার পর কোনা রকম দর–কষাকষি না করে গ্যালারিতে এসে ছবিটা আমাদের হাতে দিয়ে দিলেন।

আমি তাঁকে বললাম, আমাকে একটু সময় দিতে হবে। কারণ রোমে চিঠি লিখে আমকে অনুমোদন নিতে হবে। এখনই তার যাওয়া হচ্ছে না অন্তত পরদিন শক্রবার ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে।

কেমন করে তিনি ছবিটি হস্তগত করলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, ল্যুভ জাদুঘর থেকে চুরি করেছেন। এবং আগে আরও চারবার চুরির উদ্যোগ নিয়েছেন, কিন্তু প্রহরা থাকার কারণে ব্যর্থ হয়েছেন।

তিনি জানালেন, তিনি ল্যুভ জাদুঘরে কাজ করতেন। তাঁর কাজ ছিল ছবি ফ্রেমে আটকে কাচ দিয়ে ঢাকা। কাজেই এ রকম কাজ করার একটি ভালো প্রেক্ষাপট তাঁর ছিল। সেখানে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর একদিন সকালে শ্রমিকের ঢিলে আলখাল্লা পরে তিনি ল্যুভ জাদুঘরে গেলেন, স্যালোন ক্যারেতে যেখানে মোনালিসা টাঙানো ছিল, সেখানে গিয়ে বিনা বাধায় দেয়াল থেকে মোনালিসা বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। ফ্রেমটা বিচ্ছিন্ন করে জাদুঘরের অন্য এক জায়গায় ফেলে ছবিটা তাঁর ঢিলে পোশাকের ভেতর ঢুকিয়ে সার্ভিস ডোর দিয়ে বেরিয়ে আসেন। পেঁচিয়ে রোল করার জন্য ফ্রেমটা বাদ দিতে হয়েছে।
ছবিটা হস্তান্তরের জন্য আমি পেরুজিয়াকে কোনো পুরস্কার দেওয়ার কথা বলিনি, তাঁকে যাতে এ রকম কিছু আমাকে বলতে না হয়, এ ব্যাপারে আমি সতর্ক ছিলাম।

পরে আমি জেরির কাছ থেকে জানতে পারি পেরুজিয়া প্রথম ২০ লাখ লিরা পুরস্কার চেয়েছিলেন। পরে তা ৫ লাখে নেমে আসে, যার ২৫ ভাগ লাভ হিসেবে জেরিকে দেবেন বলে তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।

জিওজান্নি পোজ্জিও জবানবন্দিতে তিনি চালাক সরকারি কর্মকর্তার মতো টাকাপয়সার বিনিময়ে মোনালিসা গ্রহণের গোপন চুক্তি থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন।

পরদিন ডিনসেনজো পেরুজিয়া যখন তাঁর হোটেল কক্ষ থেকে বের হলেন, তিনি গ্রেপ্তার হন। চুরির কথা স্বীকার করেন। তবে তাঁর উদ্দেশ্য ভিন্ন। নেপোলিয়ন ইতালি থেকে যে সম্পদ লুট করেছেন, তার একটি অংশ স্বদেশে ফেরত দেওয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য। বাস্তবে নেপোলিয়নের জন্মের আড়াই শত বছর আগে লেওনার্দো দা ভিঞ্চি নিজেই ছবিটি ফ্রান্স সম্রাট ফ্লান্সিসকে উপহার দিয়েছিলেন। মোনালিসা চুরির উদ্দেশ্য তার সরল স্বীকারোক্তি বিবেচনা করে মোনালিসা–চোরের লঘু শাস্তি হয়। তাকে ১ বছর ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আপিলে তা কমিয়ে সাত মাস করা হয়।

সাময়িক নিবাসেই মোনালিসার কোয়ারেন্টিন
সাময়িক নিবাসেই মোনালিসার কোয়ারেন্টিন

ভিনসেনজে পেরুজিয়া (জন্ম ৮ অক্টোবর ১৮৮১-মৃত্যু ৮ অক্টোবর ১৯২৫) ইতালীয়দের কাছে দেশপ্রেমিক হিসেবেই সমাদৃত হন। পেশাগত জীবনে তিনিও শিল্পী। কারামুক্তির পর প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ইতালির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষ হলে বিয়ে করেন, ক্যালেস্তিনা নামের এক কন্যার জনক। সপরিবার ফ্রান্সে এসে জমকালীন নাম পিয়েত্রো পেরুজিয়া হিসেবে বসতি স্থাপন করেন। পেইন্টার ডেকোরেটর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। ৪৪তম জন্মদিনে তাঁর মৃত্যু হয়।

গণমাধ্যম তাঁর মৃত্যুর খবর পায়নি। তাঁর মৃত্যুর ২২ বছর পর একই নামের অপর এক ব্যক্তির মৃত্যু হলে সংবাদ বেরোয় মোনালিসা–চোরের মৃত্যু।

মোনালিসাকে নিয়ে একালের একটি কবিতা

মোনালিসার হাসি
ম্যারিলিন লট

তার হাসিটা রহস্যময়
মানুষ জানতে চায় কী এর মানে
পাঠ্যবইয়ে তো লেখাই আছে
কোনো কোনো স্বপ্নে দেখাও দিয়েছে
মোনালিসার হাসি নিয়ে
ন্যাট কিং কোল গান বেঁধেছেন
মানুষ কৌতূহলী হয়ে জানতে চেয়েছে
সময় ধরে তাকে পাঠ করেছে
ভালোবাসার কারণে হেসেছে?
সেই ব্যাকুল সামান্য দেঁতো হাসি
যখন সে তার কথা মনে করেছে
একটা ভাবনা সম্ভবত তার মনে ছিল
তার মেধাবী শিল্পী একরাতে
স্বপ্নে তাকে এমনই দেখেছে—এমন মুখাবয়ব
নাকি এটা আসলে পুরুষের মুখমণ্ডল
যিনি এঁকেছেন তারই আয়না প্রতিবিম্ব?
হাসির সত্যিকার গল্পটা
অবশ্যই কেউ কখনো জানবে না
কিন্তু ব্যাপারটা খুব মজার, তুমি কি মনে করো না?
কারণ সত্যিই সে প্রতারণা করে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: